গরীবের টাকায় নির্বাচন করছেন মিহির ঘোষ

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২১

সাহস ডেস্ক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী কাস্তে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মিহির ঘোষ। তার নির্বাচনে তারই পাশে দাড়িয়েছেন গ্রামের মেহনতকারী মহিলা পুরুষরা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের ভোটার মলিমা বেগম (৫৫)। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। তাঁর পছন্দের প্রার্থী গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সিপিবির মিহির ঘোষ। মলিমার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তারপরও পছন্দের প্রার্থীকে পাঁচ কেজি মুষ্টির চাল দিয়ে সহায়তা করেন তিনি।

গত রোববার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের রেলগেটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দলীয় কার্যালয়ে তিনি কাস্তে প্রতীকের প্রার্থীর হাতে এ চাল তুলে দেন। এ সময় একই গ্রামের চম্পা বেগম (৫৫) ও মাহফুজা খাতুন (৪৫) ৫–১০ কেজি করে চাল মিহির ঘোষের নির্বাচনী তহবিলে দেন।

শুধু চালই নয়, টাকা দিয়েও সহায়তা করেছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলার কাবিলের বাজার গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী খয়বর হোসেন (৫৬) এবং একই উপজেলার দক্ষিণ গিদারি গ্রামের ময়ভান বেগম (৫০)। তাঁরা ৫০০ টাকা করে সিপিবির নির্বাচনী তহবিলে জমা দেন। এভাবে এক মাসে মিহির ঘোষের নির্বাচনী তহবিলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা হয়েছে।

মলিমা বেগম বলেন, ‘মিহির দাদার টাকা নেই। কিন্তু নির্বাচন করতে অনেক খরচ হবে। তাই মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন থেকে মুষ্টির চাল তোলা শুরু করি। পাঁচ কেজি চাল দাদার হাতে তুলে দিই।’

খয়বর হোসেন ও ময়ভান বেগম নিজের ভাষায় বলেন, ‘দাদা হামারঘরে অনেক উপক্যার করচে। তাই কষ্ট করি মিহির দাদাকে টাকা দিলাম। দাদা এমপি হলে হামারঘরে গরিব মানসের ভালো হবে।’

তহবিল প্রসঙ্গে জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে পার্টির গরিব, মেহনতি, মধ্যবিত্ত, শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে নির্বাচনী তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েক দফায় পার্টি সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভাও করা হয়। প্রতিটি সাধারণ সভায় পার্টি সদস্যরা ছাড়াও অনেকেই এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্ত হন। সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁদের অর্থ দিয়ে আমাদের প্রার্থী মিহির ঘোষের জামানতের টাকা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ওই তহবিলে সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা হয়েছে।’

এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে মিহির ঘোষ বলেন, ‘গরিব মেহনতি জনগণের অর্থে নির্বাচন করছি, জনগণ এবার আমাকে বিজয়ী করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, জোট ও মহাজোটের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ার লক্ষ্যে কাস্তে প্রতীকে ভোট দিলে গাইবান্ধার উন্নয়ন হবে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গাইবান্ধার ভোটাররা অতীতে শুধু মার্কা দেখে ভোট দিয়ে বারবার প্রতারিত হয়েছেন। গাইবান্ধার কোনো উন্নয়ন করেননি। এবার শুধু প্রতীক নয় প্রার্থী বিবেচনা করে ভোট দেবেন বলে আশা করছি।’

মিহির ঘোষ আরও বলেন, ‘গরিব, মেহনতি, মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে থেকে ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করছি, নীতি–আদর্শ বদলাইনি। মানুষের কাছ থেকে দূরেও থাকিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমার দল সিপিবি, আমার জোট বাম গণতান্ত্রিক জোট যে নির্বাচনী প্রতিশ্রিুতি আমাকে দিয়েছে, নির্বাচনে জয়ী হলে আমি সেই প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (আনালেরতারি গ্রাম) বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া (৪৮) বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে মিহির ঘোষ ভালো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে স্থানীয় নানা সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করতে দেখছি। এ ছাড়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট পেয়ে তিনি আলোচনায় এসেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি মেহনতি মানুষের সমর্থন পাবেন।’

মিহির ঘোষসহ গাইবান্ধা–২ (সদর) আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন নৌকা প্রতীক নিয়ে মহাজোটের মাহাবুব আরা বেগম, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবদুর রশীদ সরকার, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আল-আমিন, মিনার প্রতীক নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জিয়া জামান খান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত