২০ দলীয় জোটকে যেসব আসন দিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৩

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচনী সঙ্গী দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক জোট। একটি ২০ দলীয় জোট (সম্প্রসারিত ২৩ দল), অন্যটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত কয়েকদিন ধরেই দুটি জোটের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি করে চলেছে। বিএনপি ২৪০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০ আসন দেবে। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পাচ্ছে ৪০ থেকে ৪২টি আসন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো পাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টি আসন।

২০ দলকে বিএনপি ৪০ থেকে ৪২টি আসন দেবে এটি মোটামুটি নিশ্টিত। জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে অনেকটা সমঝোতা হয়ে গেছে। তবে আজ চূড়ান্ত দরকষাকষির সময় জোটভূক্ত দলগুলো চাইবে আর দু’একটি আসন বাগিয়ে নিতে।

২০ দল বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, বিশ্বস্ত মিত্র। প্রায় এক দশক ধরে জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে চলছে জোটভূক্ত দলগুলো। ২০ দলের বেশিরভাগ দলেরই রাজনৈতিক আদর্শ বিএনপির আদর্শের সঙ্গে মিল আছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তখন জোটের শরিক দলগুলোও বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। তখন ২০ দলের শরিক দলগুলোর অনেক নেতাকে ক্ষমতাসীন দল থেকে নিশ্চিত আসন দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। দু’একজনকে জোট ছেড়ে এলে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।তারা বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দেখিয়েছে। জোটের সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকেছে।

যদিও আন্দোলন সংগ্রামে ২০ দলের শরিক দলগুলোর সফলতা খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিএনপির ছায়াসঙ্গী হওয়ায় এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে জোটের নেতাদের প্রতি বিএনপির এক ধরণের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আর সে কারণেই আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ২০ দলকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। প্রায় ৪০ টির মতো আসন দেয়া হচ্ছে জোটের শরিক দলগুলোকে।

২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে রবিবার দিনভর বৈঠক করে বিএনপি। দুপুরে এলডিপি, এনপিপিসহ জোটের কয়েকটি শরিকের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির নেতারা। গুলশান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে শরিকরা তাদের সম্ভাব্য তালিকা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর বিএনপির নীতনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে রাতে আবারও শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে কোন কোন আসনে ছাড় দেয়া হবে তা জানিয়ে দেয়া হয়।

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৪২টি আসন দেবে বিএনপি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২৪টি আসন পাচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাচ্ছে এলডিপি। দলটি চারটি আসন পাচ্ছে। এছাড়া বিজেপিকে একটি, এনপিপিকে একটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিকে একটি, খেলাফত মজলিসকে একটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে একটি আসন দেয়া হবে।

জোটের মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাকিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। অপেক্ষাকৃত যোগ্য, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেতারাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।

যেসব আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে

জামায়াতকে ২৪ টি

জামায়াতকে যেসব আসনে বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হল- ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম-৪ নূর আলম মুকুল, গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৪ ডা. আবদুর রহীম সরকার, বগুড়া-৪ মাওলানা তায়েব আলী, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-১ আবদুল বাসেত, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আবদুল আলীম; খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার; খুলনা-৬ আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-২ শামীম সাঈদী, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ।

এলডিপিকে চারটি

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আবদুল করিম আব্বাসীকে (নেত্রকোনা-২) আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে।

তবে দলটির পক্ষ থেকে আরও কিছু আসনের জন্য জোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। এর মধ্যে রয়েছে-এম ইয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২) ও অ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোর্শেদ (ময়মনসিংহ-১০) অন্যতম।

জাতীয় পার্টি জাফর ২টি

জাপা (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), দলের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১) আসনে জোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন।

এই দলের পক্ষ থেকে আরও দু’টি আসনের জন্য জোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আহসান হাবীব লিঙ্কন (কুষ্টিয়া-২) অন্যতম।

আর কাজী জাফরের মেয়ে জয়া কাজীর কুমিল্লা-১১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। ওই আসনটি জামায়াতকে দেয়া হচ্ছে।

জমিয়তকে ২ টি

জমিয়তে ওলামায়ের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫) আসনে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন।

একই দলের শাহীনুর পাশা চৌধুরী (সুনামগঞ্জ-৩) আসনে প্রার্থী হবেন।

বিজেপিকে ১ টি

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিকে একটি আসন দেয়া হচ্ছে। দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ (ভোলা-১) আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন এটি মোটামুটি নিশ্টিত।এই আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন পার্থ।

কল্যাণ পার্টিকে ১ টি

কল্যাণ পার্টিকে একটি আসনে ছাড় দেবে বিএনপি।দলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম (চট্টগ্রাম-৫) আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে ওই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।

জাগপা ১ টি

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপাকে এবারের নির্বাচনে মূল্যায়ন করতে চায় বিএনপি।জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধান ২০ দলীয় জোট গড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন।

শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে (পঞ্চগড়-২) আসন দেয়া হচ্ছে এটি মোটামুটি নিশ্চিত।

পিপলস পার্টিকে ১ টি

মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান (নীলফামারী-১) আসনে জোটের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

মাইনরিটি জনতা পার্টি ১টি

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল (যশোর-৪) থেকে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন।

সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, তাকে মৌখিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ মনোনয়নের চিঠি পেলে নিশ্চিত করতে পারব।

খেলাফত মজলিস ১টি

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন।

এনপিপিকে ১টি

এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২) আসন থেকে জোটের মনোনয়ন পাবেন।

আরও যারা আসন চাইছেন

সাম্যবাদী দল সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ (নারায়ণগঞ্জ-৫), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান (পিরোজপুর-১) আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তবে তাদের নিশ্চিত করেনি বিএনপি।

তবে জামায়াতের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৫৩টি আসনের তালিকা দেয়া হলেও ৩৫টি আসন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৮ আসনে নির্বাচন করা জামায়াত ৩৩টিতে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল। পাঁচটি আসনে বিএনপি ও জামায়াত দু’দলেরই প্রার্থী ছিল।

গতবারের ৩৩টির ২৭টিতে এবারও জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। গতবারের উন্মুক্ত পাঁচটি আসনের তিনটিতে জামায়াত দ্বিতীয় হয়েছিল। বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এগুলোতেও এবার জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। নতুন করে রাজশাহী-১, বগুড়া-৪, ঢাকা-১৫, সাতক্ষীরা-১ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জোটের মনোনয়ন চায়।

সুত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত