নাইকো দুর্নীতি মামলা

তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই ও কানাডার পুলিশ

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩৮

নাইকো দুর্নীতি মামলায় ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই ও কানাডার পুলিশ। এফবিআই ও কানাডিয়ান পুলিশের করা তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘কানাডায় নিবন্ধিত নাইকো নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের কয়েকটি গ্যাস ফিল্ড লিজ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। ২০০২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ড একটি ভার্জিন গ্যাস ফিল্ড অর্থাৎ গ্যাসে পূর্ণ ছিল বলে বাপেক্স এবং আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অভিমত দিয়েছিল। কিন্তু নাইকো নানা অসৎ পন্থা অবলম্বন করে আমাদের দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে হাওয়া ভবনকে প্রভাবিত করে এই পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ডটি লিজ নেয় এবং একটি পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে এটাকে তখন তাদের হাতে দেওয়া হয়। আসলে এই গ্যাস ফিল্ড কখনো পরিত্যক্ত ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘পূর্ব ছাতকের গ্যাস ফিল্ড নেওয়ার ব্যাপারে তারা (নাইকো) যে ঘুষ প্রদান করে, তা নিয়ে কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশ ২০০৫ সালে তদন্ত শুরু করে এবং তারা তদন্তে প্রমাণ পায়, এই নাইকো তাদের দেশ (কানাডা) থেকে টাকা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল এবং কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়েছিল।’

কানাডা পুলিশ এবং এফবিআইয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “২০১৭ সালে আমি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম তদন্ত করে তারা যে তথ্য পেয়েছেন সেগুলো আমাদের পাঠাতে। তারা এ অনুরোধে সাড়া দিয়ে ‘মিউচ্যুয়াল অ্যাসিস্টেন্স’-এর আওতায় প্রতিবেদনগুলো আমাদের পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদনগুলো ৭/৮ পৃষ্ঠার। কানাডার মাইন্টেড পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে তার একটি প্রতিবেদন এবং এফবিআইয়ের বিশেষ প্রতিনিধিরা তদন্ত করে যা পেয়েছে তারও একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই তদন্তে তারা (তদন্তকারীরা) পেয়েছেন কীভাবে টাকা কানাডা থেকে অন্যান্য দেশ হয়ে, বিশেষ করে ক্লেমান আইল্যান্ড হয়ে সুইজারল্যান্ড, সেখানে থেকে যুক্তরাজ্যে এবং তারপরে বাংলাদেশে এসেছে এবং তা ঘুষ হিসেবে দিয়েছে। আর এভাবেই গ্যাসে পরিপূর্ণ একটি ফিল্ডকে (ভার্জিন ফিল্ড) পরিত্যক্ত দেখিয়ে তারা (নাইকো) তৎকালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে কাজটি নিয়েছে। এভাবে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাদের দেশের ক্ষতি করেছেন এবং এই ক্ষতির ব্যাপারে যারা তাদের সহযোগিতা করেছেন, তারা এই মামলার আসামি।’

এসব প্রতিবেদনের যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, খন্দকার শহিদুল ইসলাম, কাশেম শরীফ, সি এম ইউসুফ হোসেন, সেলিম ভূঁইয়া, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মীর মঈনুল হক এবং এম ডি শফিউর রহমান।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘কানাডার মাইন্টেড পুলিশের এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের তদন্তকারীরা যাতে এ দেশে এসে তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য পেশ করতে পারেন সেজন্য বিশেষ জজ আদালত-৯-এ এই প্রতিবেদনগুলো দাখিল করেছি। আমার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৯ ডিসেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম এই প্রতিবেদনে আছে কিনা তা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এসব প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর নাম নেই। কেননা, ঘটনার সূত্রপাত ২০০২ সালের পরে।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত