নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত-শিবির

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৫৬

সাহস ডেস্ক

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সক্রিয় ছিল সবচেয়ে বেশি। আবার সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোপনে নাশকতার ছক কষছে জামায়াত-শিবির। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত অক্টোবর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। এরই মধ্যে গোপনে বৈঠক ও নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একমাত্র জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারাই শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে লিপ্ত হবে তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে বিশেষ টার্গেট করে অভিযান পরিচালনা করছি না। আমাদের কাছে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করেছি। সে অনুযায়ী যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনছি।’

পুলিশ সদর দফতর ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অগ্রভাগে থেকে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। এছাড়া এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়েও নাশকতা করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় একাদশ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না জামায়াত। এজন্য তারা আগের চেয়ে আরও বেশি নাশকতার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করতে পারে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এখন জঙ্গি স্টাইলে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। এজন্য সহজেই তাদের গোপন পরিকল্পনা জানা যায় না। নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে কোনও একটি ইস্যুকে সামনে দাঁড় করিয়ে তারা মাঠে নেমে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে শিবিরের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে দেড়শ’ কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের বরাতে মামলার এজাহারে বলা হয়, জামায়াত-শিবির বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নেওয়ার জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা সেসময় জানায়, তারা নাশকতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় বিস্ফোরকদ্রব্য মজুদ করেছে।

ওই ঘটনা তদন্তে যুক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই এলাকাকে টার্গেট, বিভিন্ন সরকারি দফতরে নাশকতার পরিকল্পনা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে লক্ষ্য স্থির করে হত্যার (টার্গেট কিলিং) পর তার দায় জঙ্গিদের ওপর চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা জঙ্গিদের মতো টেলিগ্রাম অ্যাপস, প্রোটেক্টেড টেক্সটসহ বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করে আসছিল।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারসে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠকে জামায়াত-শিবির সদস্যদের নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা হয়। এর জেরে গত কয়েক বছরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এসব মামলায় যারা পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ কারণে ঢাকা মহানগর এলাকায় গত একমাসে জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিএমওপির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে দায়ের হওয়া কমবেশি ৮০০ নাশকতার মামলার মধ্যে অন্তত ৫০০টিতে শিবিরের নেতাকর্মীরা আসামি হিসেবে আছে। এসব পেন্ডিং মামলার আসামিদের ধরতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, সারাদেশেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে গত একমাসে ঠিক কতজন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা পুলিশের বরাতে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত শনিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চন্দনপুরায় ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ছয়টি ককটেল, দুই বোতল পেট্রোল ও অকটেন, বোমা তৈরির উপকরণসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জামায়াত-শিবির নাশকতা করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এজন্য আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এই অভিযান চলতে থাকবে।’

তবে গত অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো জামায়াতের বিবৃতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ওই মাসে তাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনটাই দাবি করেছে তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত