আজ থেকে শুরু হচ্ছে সংলাপ

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩১

সাহস ডেস্ক

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আজ সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে  সাত দফা দাবি নিয়ে সংলাপে অংশ নেবে রাজনৈতিক অঙ্গণে নতুন মাত্রা যোগ করা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই সংলাপে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মোট ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা।

বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বিএনপির পক্ষ থেকে ফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে থাকছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পাঁচ নেতা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে যারা থাকছেন

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃত্বে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ; আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য- কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, কাজী জাফর উল্লাহ ও ড. আব্দুর রাজ্জাক; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন; আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ,  ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান; আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ও বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যারা সংলাপে অংশ নেবেন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু স্বাক্ষরিত ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তালিকা মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন।  প্রতিনিধি দলে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী  কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস।  প্রতিনিধি দলের অবশিষ্ট ১০ সদস্য হলেন- গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা এসএম আকরাম; জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মিসেস তানিয়া রব; জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব ড. আ ব ম মোস্তাফা আমীন ও কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন।  চিঠিতে ঐক্যফ্রন্ট তাদের সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্যও সংযুক্ত করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি হওয়ার কথা সোমবার বিকালে জানান ওবায়দুল কাদের। সংলাপে বসতে রাজি হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তারিখ, সময় ও স্থান জানার অপেক্ষায় থাকে ঐক্যফ্রন্ট।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী চিঠি দেন ড. কামালকে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’

সংলাপের আগে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

সংলাপে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রেখেছেন ক্ষমতাসীন ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন আলোচনা হবে সংবিধানের ভিত্তিতে।  এর বাইরে আলোচনার টেবিলে অনেক বিষয়ই আসতে পারে।  গতকাল ঢাকায় এক সমাবেশে ১৪ দলের নেতারাও বলেছেন, সংবিধানের বাইরে কোনো দাবি মানা হবে না।

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।  তার মুক্তি ছাড়া সংলাপ ও নির্বাচন কিছুই ফলপ্রসূ হবে না।  আর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দলীয় দাবির চেয়ে জাতীয় স্বার্থই সংলাপে গুরুত্ব পাবে।  সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে।  এবার অনুরোধ করব, সবাই সংগঠিত হন, ঘরে-ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে-গ্রামে।  এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।  আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নতুন করে আর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা না দেয়া ও গ্রেপ্তার না করা।

ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সাত দফার ভিত্তিইে সংলাপে আলোচনা হবে।  আমাদের সাত দফার সবগুলোই মানতে হবে।  একই কথা বলেছেন মির্জা ফখরুলও।

আরও যাদের সঙ্গে সংলাপ

গণভবনে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপে যাবে বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নেতারা।  সোমবার সংলাপে বসবে এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্বধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট-ইউএনএ।  এছাড়া নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি।

ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত