ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: সম্পাদক পরিষদের সাত দফা

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৪

সাহস ডেস্ক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন করছে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই সাত দফা দাবি তুলে ধরেন ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

শুধু সম্পাদক পরিষদের সদস্যরাই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমানসহ আরও অনেকে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করার কথা ঘোষণা করে সম্পাদক পরিষদ। কিন্তু তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল।

লিখিত বক্তব্যে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগ থেকেই এই আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম। আমরা মনে করি, এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। আমরা চাই আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হোক।’

সম্পাদক পরিষদের সাত দফা দাবিগুলো হচ্ছে-

১. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।

২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে।

৩. পুলিশ বা অন্য কোনও সংস্থার মাধ্যমে কোনও সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অুমতি দেওয়া যাবে, কিন্তু কোনও কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

৪. কোনও সংবদামাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনও কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনও অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইন প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।

৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

৭. এই সরকারের পাশ করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্বার্থহীনতভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।

সাত দফা দাবি ঘোষণার পর সম্পাদকরা ১০ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত