দুর্গম চর এলাকায় চলছে ইলিশ শিকার, বিক্রি হচ্ছে পানির দামে

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:২৬

সাহস ডেস্ক

চলতি সময়ে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম। ডিম ছাড়তে মা ইলিশ ছুটে আসে পদ্মায়। ইলিশের এই প্রজনন মৌসুমে নির্বিঘ্নে যেন ডিম ছাড়তে পারে, সেজন্য বাইশ দিন পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও থেমে নেই ইলিশ শিকার। পদ্মার চরাঞ্চলের দুর্গম চর এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে অনেকটা গোপনেই জেলেরা ব্যস্ত থাকে ইলিশ শিকারে। আবার প্রকাশ্য বাজারে বিক্রি করতে না পারায় খুবই সস্তায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে এই ইলিশ।

সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের বাজার দাম কেজিতে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা সেই ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড়শ’ টাকায়। এতো সস্তায় ইলিশ পেয়ে স্থানীয় দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভিড় করছে পদ্মার পাড়ে। ব্যাগ বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালানো হয় পদ্মায়। তবে দুর্গম অঞ্চল প্রায় সময়ই অভিযানের বাইরে থেকে যায়। জেলেরা কৌশলে গভীর রাতে ও খুব ভোরে পদ্মার বিভিন্ন এলাকায় ইলিশ শিকার করে থাকে। সেক্ষেত্রে ইলিশের জাল নদীতে ফেলে কৌশলে জালটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানিতে লুকিয়ে রেখে মাছ শিকার করে বলেও জানা গেছে।

উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা এলাকার চর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করে থাকে। চরাঞ্চলের এই পদ্মার পাড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি হয় এই ইলিশ।

সরেজমিনে চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা ইউনিয়নের ইলিশ বিক্রির চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ব্যগ হাতে পদ্মার পাড়ে নারী-পুরুষের ভিড়। রয়েছে ছোট ছেলে মেয়েরাও। উদ্দেশ্য সস্তায় ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরবে।

ইলিশ কিনতে আসা কিশোর রবিউল জানায়, এ সময় পদ্মার পাড়ে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায়, এই খবরে সে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা থেকে মাছ কিনতে এসেছে। তার দিনমজুর বাবার পক্ষে অন্যান্য সময়ে দাম দিয়ে ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না। তাই সস্তায় একটু বড় ইলিশ কিনতে কষ্ট করে এই দুর্গম চরে এসেছে সে।

একই এলাকার সালমা বেগম মানুষের মুখে শুনে এসে বেশ কম দামে প্রায় ১০ কেজি ইলিশ কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা এখন নিষেধ। কিন্তু জেলেরা তো থেমে নেই। আর দাম কম পেয়ে শত শত মানুষ মাছ কিনছেও। মাছ না ধরলে তো কিনতে আসতাম না। তাছাড়া আমি না কিনলেও তো বিক্রি থেমে থাকছে না।’

জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘পদ্মায় মাছ শিকার করা জেলেরা বেশির ভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল, নৌকা কিনে পদ্মায় মাছ ধরেন তারা। ফলে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতেই হচ্ছে। তাছাড়া সংসারের খরচ তো আর থেমে নেই। তাই মাছ শিকার বন্ধ করা হয়ে ওঠে না।’

অপর এক জেলে বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে এ সময় মাছ ধরতে যেতাম না। গত বছরও ধরিনি। কিন্তু অন্যরা তো ঠিকই ধরেছে। তারা মাছ বিক্রি করে টাকাও কামাচ্ছে। তাই এবার আমিও মাছ ধরতে নেমেছি। তবে দিনে একবারই পদ্মায় জাল ফেলি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সতর্ক থাকতে হয়। পুলিশের হাতে অনেকে ধরাও পড়েছে।’

শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম শামসুজ্জামান (দায়িত্ব প্রাপ্ত) বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে। দিনের পুরোটা সময়ই আমরা পদ্মায় নজর রাখছি। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করতে চেষ্টা করছি। তারপরও সাধারণ মানুষের ভিড় পদ্মার পাড়ে লেগেই থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি। জেলেদের আটক, মাছ জব্দ এবং জাল ধ্বংস কার্যক্রম চলছে।’

সাহস২৪.কম/খান

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত