কমলগঞ্জে কমরেড মফিজ আলীর ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৮

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, প্রখ্যাত চা-শ্রমিক নেতা মফিজ আলী-এর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। এদিন সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, চা শ্রমিক সংঘ, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও স’মিল শ্রমিক সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনয়নের ধূপাটিলাস্থ প্রয়াত নেতার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ গ্রহণ করা হয়। পরে স্থানীয় মাঠে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের জেলা সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, প্রয়াত নেতার অনুজ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক রমজান আলী পাখি।

আলোচনা সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দাশ, সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন, জাতীয় ছাত্রদল মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাবেক আহবায়ক নুর মোহাম্মাদ তারাকী ওয়েছ, চা শ্রমিক সংঘের নেতা স্যামুয়েল ব্যাগমেন, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল আহমেদ, স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা মোঃ ফরিদ মিয়া, চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজনগর চা-বাগানের নেতা নারায়ন গোড়াইত প্রমুখ।

সভায় বক্তারা প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজ শোষণহীণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, মফিজ আলীর জীবন ও সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। সংগ্রামী এই জননেতা ১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শ্রীসূর্য-ধূপাটিলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের বেশি রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্র আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, চা শ্রমিক আন্দোলন, বালিশিরা কৃষক আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করার কারণে তিনি বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলে মোট ৭ বার কারাবরণ করেন। 

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শে বিশ্বাসী সাম্রাজবাদ সামন্তবাদ বিরোধীনেতা মফিজ আলী জননেতা হিসেবে শোষিত নির্যাতিত শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেমন নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন তেমনি তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি ইংরেজি ডন, সংবাদ, ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক জনতা, লালবার্তা প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। গণতন্ত্রের নির্ভীক মূখপত্র সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করে গেছেন। ২০০৮ সালে ১০ অক্টোবর সংগ্রামী এই জননেতা ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আলোচনা সভা থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ ও রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থা সমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে কমানো, গ্যাস-বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা প্রত্যাহার, চা-রাবার, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, স’মিল, দর্জি, প্রেসসহ সকল শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ২০ হাজার টাকা মূল মজুরি নির্ধারণ ও গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে প্রয়াত মফিজ আলী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ