আজ থেকে টানা ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৪৯

অনলাইন ডেস্ক

আজ ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে দেশের ৩৭ জেলার ৭ হাজার কিলোমিটার নদীতে মাছ ধরা। এই ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি করা, বাজারজাত করা, মজুত রাখাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ইলিশের মা মাছ রক্ষা এবং ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই প্রতিবছর এই সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও এই সময় ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় টাক্সফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  ইলিশ মূলত লোনাপানির মাছ। কিন্তু ডিম ছাড়ার আগে নদীর মিঠাপানিতে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। একটি মা-ইলিশ সর্বনিম্ন দেড় লাখ ও সর্বোচ্চ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়।

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজনন ক্ষেত্রের ৭০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এই সময় সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সরকার সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দী পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আউলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গণ্ডামার পয়েন্ট পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

সূত্র আরও জানায়, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যেই চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা,  পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরিয়তপুর,  ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীতে এ সময় সব ধরনের মাছধরা বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাসমূহেও এই ২২দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। ইলিশ ধরা রোধকল্পে দেশের মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২২দিন অভিযানও পরিচালিত হবে।

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ২২দিন জেলেদের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে (চাল) খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলে পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে ১০ কেজি হারে খাদ্য দেওয়া হলে বর্তমানে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ২০০৭-০৮ সালে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫টি জেলে পরিবার এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বর্তমানে পরিবার সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টিতে উন্নীত হয়েছে। প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে নিবন্ধনকরণ ও পরিচয়পত্র জুন ২০১৭ পর্যন্ত ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী জেলের নিবন্ধন ও ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের পরিচয়পত্র বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ মৎস্যখাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক দশমিক ১৫ শতাংশ। কাজেই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। ফলে মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।