নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচি

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২০

সাহস ডেস্ক

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কের পথে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ কর্মসূচিতে যোগদান করবেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষে শান্তিপূর্ণ কূটনীতি পরিচালনায় অবদানের জন্য ইন্টার প্রেস সার্ভিস এবং গ্লোবাল হোপ-এর কাছ থেকে দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং একইদিন তাঁর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও করার কথা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন- এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানান প্রেস সচিব।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শুক্রবার সকালে ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে। একই দিনে লন্ডনের স্থানীয় সময় ৩টা ৫৫ মিনিটে বিমানটির হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।

ব্রিটিশ রাজধানীতে দুদিনের যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের পথে লন্ডন ত্যাগ করবেন। বিমানটির ঐদিনই স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ জার্সিতে অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বিমানবন্দরে অর্ভথ্যনা পর্ব শেষে একটি সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্রধানমন্ত্রীকে নিউইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী সফরের দ্বিতীয় দিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন।

প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করবেন। পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস আয়োজিত ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজিস : এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী হোটেল গ্রান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের সম্মেলনকক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটেও বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে।

নিউইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’-এও তাঁর যোগদানের কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষ ১১-তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আয়োজিত নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেবেন। তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল : আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রু দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত স্বাগত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংবর্ধনাটি নিউইয়র্কের লোটিকে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।

শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে এটির আয়োজন করবে। সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিংয়ের’ (এ ফোর পি) অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।

২৬ সেপ্টেম্বর, ইউনিসেফ-এর নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফিজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

একইস্থানে প্রধানমন্ত্রী এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ-এর সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ১২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর সভাকক্ষে বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মওরার-এর জাতিসংঘের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

একইদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

‘নারীর ক্ষমতায়মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যাযের আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইন্টার প্রেস সার্ভিসেস (আইপিএস) আয়োজিত সংবর্ধনাতেও যোগদানের কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করবেন এবং নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউয়ে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন আয়োজিত বার্ষিক নৈশভোজে যোগ দেবেন।

অন্যান্য বারের মতো এবারো সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ প্রদানের পরের দিন, ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিউইয়র্কে কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগামী ১ অক্টোবর সকালে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত