নদীগর্ভে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৫৬

অনলাইন ডেস্ক

পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নতুন ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ইতোমধ্যে  নড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সামনের রাস্তা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাচীর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মসজিদ, গাড়ির গ্যারেজ পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যাবে পুরাতন ভবনটি। তাই সরিয়ে নেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মালামাল ও সেবা কার্যক্রম। আতঙ্কে আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক বাসিন্দারা।

গত সপ্তাহে সাড়ে তিনশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ বড় বড় স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মারাত্মক ভাঙনের মুখে মুলফৎগঞ্জ বাজারের আট শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ তাদের দেখার কেউ নেই। কোনও জনপ্রতিনিধি বা সরকারের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের দেখতেও আসেনি। নদীভাঙা মানুষ তাদের এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গেল দুই মাস যাবত জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙন চলছে। এ  ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ও কেদারপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ ও নড়িয়া পৌর এলাকার চার নম্বর ওয়ার্ড বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের কবলে পড়েছে পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরনড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সরকারের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন বরাদ্দ দিয়ে পাঁচ কোটি টাকার জিওব্যাগ ফেলেও নদীভাঙন রোধ করতে পারছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বাপ-দাদার ভিটেমাটি সহায়-সম্বল হারিয়ে মাথা গোঁজার জায়গা খুঁজছে। যদিও গত কয়েকদিন পূর্বে ছিল তাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ। নদী ভাঙার কবলে পড়ে তারা আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কাজ নেই কর্ম নেই। নেই কোনও উপার্জনের পথ। অসহায় দিন কাটাচ্ছে তারা।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কিছু শুকনো খাবার, সাড়ে তিন হাজার পরিবারকে জি আর চাল, তিনশ’ পরিবারকে ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এলাকাবাসীর একটাই দাবি নড়িয়াকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের কাজটা শুরু করা হোক। পাশাপাশি এ এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।

ক্ষতিগ্রস্ত মিহির চক্রবর্তী বলেন, দুই মাসে আমাদের নড়িয়ার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি, দোকান, ব্রিজ, কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের অতি প্রাচীনতম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও বিলীন হয়ে গেল। এখন আমাদের আর কিছুই রইল না।

কেদারপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফেজ সানাউল্লাহ বলেন, পদ্মা নদী গত দুই মাসে আমাদের কেদারপুর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ি-ঘর, মুলফৎগঞ্জ বাজারের একটি অংশের প্রায় দুই শতাধিক দোকান, সাধুর বাজার ও ওয়াপদা বাজার বিলীন করে নিয়েছে। এ এলাকার মানুষ অসহায়। সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য সাহায্য চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করে এ এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার  দাবি জানান।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে আমার উপজেলার নুতন নুতন এলাকা ও স্থাপনা বিলীন করে নিয়েছে। সোমবার বিকেলে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও বিলীন হয়ে গেল। এ এলাকায় স্বাস্থ্য সেবার সমস্যা হবে। এটা সমাধানের জন্য আমরা দ্রুতই বিকল্প ব্যবস্থা নেবো।