ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধের দাবি সাংবাদিকদের

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০১৮, ১২:২৭

সাহস ডেস্ক

আড়াই বছরের রাইফা গলায় ব্যথা অনুভব করে সে হঠাৎ। গায়ে জ্বরও ছিল হালকা।  দেরি না করে বাবা-মা গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) বিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে। আশা ছিল- সঠিক চিকিৎসা নিয়েই ঘরে ফিরবে।  আবারও বাসার ড্রয়িংরুমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা খেলনা নিয়ে আগের মতো হেসেখেলে কাটাবে। 

কিন্তু ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় সমকালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুবেল খানের শিশুকন্যা রাফিদা খান রাইফা একদিন পর ফিরল, তবে লাশ হয়ে।

মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় নগরীর মেহেদীবাগস্থ ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ ও দোষী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা।

রবিবার (১ জুলাই) রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি তদন্ত দল ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে এলে সাংবাদিকদের সাথে বিএমএ নেতাদের অশোভন আচরণের প্রেক্ষিতে রাত ১০টার দিকে ম্যাক্স হাসপাতাল ঘেরাও করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন চট্টগ্রামে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।

এর আগে রবিবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ মো. মনজুরুল রহমান ও মাকসুদুল রহমান রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে আসেন। ম্যাক্স হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তদন্ত দল।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস জানান, রাত ৯টার দিকে ম্যাক্স হাসপাতালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএমএ নেতারা তদন্তে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এই সময় কতিপয় বিএমএ নেতা তদন্তে আসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সামনে সাংবাদিক নেতাদের সাথে অশোভন আচরণ করলে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বাধ্য হয়ে বৈঠক বয়কট করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এ সময় সাংবাদিকরা বিএমএর কতিপয় নেতার অপসারণ, ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধসহ শিশু রাইফা হত্যার বিচার দাবি করে স্লোগান দেন। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত সাংবাদিক নেতারা ম্যাক্স হাসপাতালে বিক্ষোভ সমাবেশ করার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মেহেদীবাগ, কাজীর দেউড়ি হয়ে জামালখান প্রেসক্লাবে এসে রাইফা হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটির সাথে বৈঠক করেন।

তদন্তে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে ম্যাক্স হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে। তারা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসির কোনো অনুমোদনই গ্রহণ করেনি।’ এই বিষয় ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন।

ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রাক্তন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি শহীদ উল আলম, সিনিয়র সহসভাপতি মাঈনু্দ্দিন দুলাল, সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, সিইউজের প্রচার সম্পাদক আহমেদ কুতুব, সিনিয়র সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ, সরোয়ার সুমন, মহসিন কাজী, ফারুক তাহের, সাইদুল ইসলাম, আজহার মাহমুদ, ইফতেখার ফয়সাল, রাহুল দাশ নয়ন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মুস্তফা ইউসুফ, শৈবাল আচার্য্য, এম এ হোসাইন, রেজাউল করিমসহ চট্টগ্রামের প্রায় সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক।

সাহস২৪.কম/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত