নারীরা সচেতন হলে সমাজে দুর্নীতি কমে যাবে: দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশ : ০৬ মে ২০১৮, ১৮:১২

সাহস ডেস্ক

আইনের হাত থেকে রেহাই পেতে অবৈধ, বেআইনি সম্পদ স্ত্রীর নামে গড়েন স্বামীরা। এতে মামলা হলে ফেঁসে যান নির্দোষ স্ত্রীও। তাই স্বামীর অপকর্ম এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পেতে তাদের পাঁচ পরামর্শ দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

তিনি সাবেক এক সহকর্মীর উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বহু লোক কিন্তু সমাজে আছে, বউয়ের ভয়ে দুর্নীতি করেন না। নারীরা সচেতন হলে সমাজে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বলেন, স্বামীর অবৈধ আয়ে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত ৯০ শতাংশ মামলায় স্ত্রী এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অথচ আইনে ওই কিছুই না-জানা নারীকেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি কাঠামোর মধ্য থেকেই এ ধরনের নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে দুদক।

২০১৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এ ধরনের ১১৮টি মামলার কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নারীরা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টিতে কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। যিনি জানেন না, তাকে কেন আসামি করব? দেড় বছর আগের মামলাগুলো ভাবিয়ে তুলেছে। সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। অন্তত আলোচনাটা শুরু হোক এবং চলুক।

এমনও হয়েছে, স্বামী স্বাক্ষর করেছে স্ত্রীর নামে। সেগুলো আমরা এক্সপার্ট দিয়ে বের করেছি। কিন্তু যেগুলো বের করতে পারব না, সেগুলোর কী হবে? সংবেদনশীল হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে সংবেদনশীল হওয়ার সুযোগ থাকে না। আদালতে আমাদের প্রমাণ করতেই হবে, এখানে তার স্বাক্ষর আছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পার্টিসিপেইট করবে। এটারই অফশুটের একটি জায়গা হচ্ছে দুর্নীতি। আমার একটি অনুরোধ, আপনারা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সই করার আগে জিজ্ঞেস করবেন, কীসের সই? কোন কারণে? চেকে সই করার আগে ব্ল্যাংক চেকে সই করবেন না। চেকের সই করার আগে কীসের টাকা? কোথায় টাকাটা যাবে? জানবেন।

অনেক আসামি জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসিমুখে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন, তবে কি আগেই সব ঠিক করা হয়ে থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক প্রধান বলেন, আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ অনেক কঠিন বিষয়। এখানে যখন সব কাগজপত্র নিয়ে বসা হয়, তারা অনেক কিছুই স্বীকার করেন। বাইরে গিয়ে হয়তো গণমাধ্যমের সামনে নাটক করেন। নিজের সামাজিক প্রভাব বজায় রাখতে হয়তো এটা করেন। অনেকেই তো আগের দিন হেসে হেসে দুদক থেকে বের হয়েছেন। আর পরেরদিন দেখা গেছে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছেন।

সভায় দুদকের বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে টিআইবির করা একটি কার্যপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম।

এতে বলা হয়েছে, গত এক যুগে দুদকে দায়ের করা ২৯টি মামলায় ২৯ জন নারীকে স্বামীর দুর্নীতির কাজে সহযোগিতা বা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বা তথ্য গোপনের অভিযোগে আদালত কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জনকেই স্বামীর দুর্নীতিতে সহায়তা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২৫ জন তিন বছর এবং একজনকে দুই বছরের সাধারণ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় সব কটি মামলাতেই অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে ৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত।

সাহস২৪.কম/রনি/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত