‘দেশের প্রতিটি খাতকে উন্নত করতে কাজ করেছি’

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০১৮, ১৮:১০

সাহস ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো, দেশকে উন্নত করবো। দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করা ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমরা বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করবো। আমাদের সরকারের সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। আমরা দেশের প্রতিটি খাতকে উন্নত করতে কাজ করেছি। জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়তে যে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই কাজ আমরা শেষ করতে কাজ করছিলাম।’

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপল‌ক্ষে বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যা‌নে আ‌ওয়ামী লীগ আ‌য়ো‌জিত সমা‌বেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জন্য এতকিছু করার পরও আমরা ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারলাম না। তখন দেশের গ্যাস উত্তোলন করার প্রক্রিয়া চলছিল। আমেরিকান কোম্পানি সেই গ্যাস তুলে ভারতের কাছে বিক্রি করবে। কিন্তু আমরা বললাম, গ্যাসের মালিক জনগণ। আমাদের জনগণের জন্য ৫০ বছরের রিজার্ভ নিশ্চিত করতে হবে, তারপর গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত হবে। দেশের জনগণের এই স্বার্থ দেখেছিলাম বলে আমাদের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত হলো, ষড়যন্ত্র হলো। আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েছিল। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। দেশের মানুষের স্বার্থ দেখার কারণে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলো না।’ এরপর আমরা কি দেখেছি। বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে যখন কোনো খুন হয়, তখন সবাই চিৎকার করে বিচার চায়। ৭৫-রে যখন আমি মা হারিয়েছি, বাবা হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি তখন কোথাও বিচার চাইতে পারিনি। ১৯৮১ সালে ফিরে এসে মামলা করতে গেছি, তখনও মামলা নেবে না। একটি স্বাধীন দেশে এটা কখনও হতে পারে না। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলার মানুষকে ২১ বছর অন্দোলন সংগ্রামের পর আমরা ক্ষমতায় যেতে পেরেছিলাম। এর জন্য দলের অনেক নেতাকর্মীকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণ যুগ। যে কাজগুলো জাতির পিতা শুরু করেছিলেন সেগুলো আমরা শেষ করি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, এদেশে ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর কোনো অধিকার ছিল না। যেখানেই বাজানো হতো সেখানেই বাধা দেওয়া হতো। তবুও আমি বলেছি সব বাধা উপেক্ষা করেই ৭ মার্চে ভাষণ বাজাতে হবে। এ ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তবুও এ ভাষণ বাজানো থেমে থাকেনি।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটা ভাষা ভিত্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করিয়েছিল জাতির পিতা। এদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, রাজনৈতিক মুক্তির জন্যই ছিল জাতির পিতার আন্দোলন সংগ্রাম। ফলাফল- তিনি গ্রেপ্তার, নির্যাতিত হয়েছেন, বারবার বন্দি হয়েছেন। আমাদের যুব সমাজ এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছেন।

কিন্তু আমাদের দুভ্যাগ্য মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছিল জাতির পিতা। এ অল্প সময়ে একটা দেশকে অনেকদূর নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জাতির পিতা সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট) চরম আঘাত আসে, কি অন্যায় তিনি করেছিলেন। দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, আজ যেখানে শিশুপার্ক ঠিক সেখানে সেদিনের মঞ্চ ছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে উপস্থিত থাকার। জাতির পিতা সেখানে দাঁড়িয়েই ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, একাত্তর সালের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ সে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর একশ্রেণির মানুষ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, মা-বোনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন ‘জাতির পিতার সে ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়। সত্যি প্রতিটি ঘর দুর্গ গড়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানিরা যখন গণহত্যা শুরু করলো তখন বঙ্গবন্ধু ইপিআরের ওয়ারলেস ব্যবহার করে স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলছিলেন।’ 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আইয়ুব খান তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, যখন কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হতো তখন তিনি এসে বসার সময় বলতেন ‘জয় বাংলাদেশ’। তোমরা আমার বিচার করে কী করবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। যদি আমাকে হত্যা করো, আমার লাশটা বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে এসো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত