সন্ত্রাসী হামলা, রক্ষ‍া পেলেন ইবি উপাচার্য

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:৫৬

সাহস ডেস্ক

গাড়াগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী।

২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) ভোর পৌনে ৪টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

পরে ভোর পৌনে ৫টার দিকে স্থানীয় ও ইবি থানা পুলিশের সহায়তায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী তার ওপর হামলার বিবরণ দেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ব্যক্তিগত কাজে উপাচার্যের গাড়ি (কুষ্টিয়া ঘ ১১-০০২৮) নিয়ে ঢাকা যাই। কাজ শেষে রাত ১০টায় আমি ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হই। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হয়ে গোয়ালন্দ মোড়ে আমি গতিপথ পরিবর্তন করি। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়ক না হয়ে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়ক হয়ে ঝিনাইদহ আসি।

ঝিনাইদহে আমার ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউলকে তার বাসার কাছাকাছি নামিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হই। ঘটনার সময় রাত তিনটা ৪২ মিনিটে আমার গাড়িটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ পার হওয়ার পর দূর থেকে দেখলাম দু’টো ট্রাক রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরও একটু এগিয়ে দেখি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে গাছ পরে আছে।

পরিস্থিতি খারাপ দেখে গাড়ির চালক ভিআইপি (পুলিশের গাড়ির হর্ন) হর্ন বাজাতে থাকে। ওই সময় আমার গাড়ির পেছনে আরো পাঁচটি ট্রাক চলে আসায় পেছন দিকেও ফিরে যাওয়া সম্ভব হলো না। এসময় তিনজন মুখোশধারী হাতের রামদা দিয়ে চালকের গ্লাসের দিকে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে তারা পেছনের গ্লাসেও কোপ দিলে গ্লাস ভেঙে যায়।

এসময় চালক ফরহাদ গাড়ির গিয়ার বাড়িয়ে গাছের উপর দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু গাছটি মোটা থাকায় তা আর সম্ভব না হওয়ায় চালক আমাকে বললো স্যার গাড়ি থেকে নেমে পালান। তখন আমি গাড়ির ডানদিকের দরজা খুলে পালিয়ে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেই। আর চালক ফরহাদ বামদিকে নেমে যায়।

এসময় সন্ত্রাসীরা টর্চ দিয়ে খুঁজে আমাকে কাছে নিয়ে আসে। এ সময়টাতে আমার মনে হলো এই বুঝি আমার সময় ফুরিয়ে আসছে।
গাড়ির কাছে এসে তারা আমাকে টাকা দিতে বলে। আমার কাছে টাকা না থাকায় ওদের ল্যাপটপটা নিয়ে যেতে বলি। তখন সন্ত্রাসীরা ল্যাপটপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাকে একদম নড়বি না- বলে গাড়ির পেছনের দিকে যায়।

এ সুযোগে আমি ঝুঁকি নিয়ে সোজা সামনের দিকে দৌড় দেই। প্রায় দেড় মিনিট দৌড়ে এক বৃদ্ধার বাড়িতে আশ্রয় নেই। পরে আমি বৃদ্ধার কাছে পরিচয় দিলে তিনি আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাচ্চু নামে এক কর্মচারীর বাসায় নিয়ে যান। পরে বাচ্চুর বাসায় গিয়ে ওর মোবাইল ফোন থেকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে জানাই। পরে প্রক্টর ইবি থানায় যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তায় ভোর চারটা ৪৬ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি।’

গাড়ির চালক ফরহাদ বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা হাতের রামদা দিয়ে গাড়িতে কোপ দিলে আমি প্রতিবাদ জানাই। এতে তারা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে স্যারকে পালাতে বলি। পরবর্তীতে স্যারের ফোন বন্ধ পেয়ে ভেবেছিলাম স্যার বুঝি আর নাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় উপাচার্য মহোদয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসি। ইতোমধ্যে দুই জেলার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

সাহস২৪.কম/খান

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত