ডলফিন, কবুতর কিংবা কাকের গোয়েন্দাগিরি

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৪ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৮

বিশ্বের অনেক অঞ্চলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, হাজার বছর আগে চিঠি আদানপ্রদানে কবুতরের ব্যবহারের কথা। কিন্তু কাক ও ডলফিন দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি! জানা যায়, রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কবুতর, কাক ও ডলফিনকে ব্যবহার করতো গুপ্তচর হিসেবে। সম্প্রতি সিআইএ এই বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই গুপ্তচরেরা যেভাবে কাজ করত:

প্রকাশিত তথ্য দেখা যাচ্ছে গোপন মিশনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হতো এসব প্রাণীদের। কবুতর স্নায়ু যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের গোপন স্থাপনার ছবি তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। সিআইএ কাক পাঠাতো জানালায় গোপন মাইক ফেলে আসার জন্য।

তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো ৪০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের কোন বস্তু জানালার ধারে ফেলে আসা বা নিয়ে আসার জন্য। যেসব ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতো সেখানে তাদের পাঠানো হতো। লেজার তাক করে তাকে কোথায় বস্তুটি ফেলতে হবে সেই টার্গেট বুঝিয়ে দেয়া হতো। আর ছোট বাতির মাধ্যমে সংকেত দিয়ে তাকে ফিরে আসতে সাহায্য করা হতো।

ডলফিন প্রশিক্ষণ দেয়া হতো পানির নিচের মিশনে বিশেষ করে বন্দরের নিচে ঢোকার জন্য। ডলফিন দিয়ে হামলার চেষ্টাও হয়েছে। এমনকি পরিযায়ী পাখি দিয়ে এমন গুপ্তচরবৃত্তি করানো যায় কিনা সেই চিন্তাও ছিল। কুকুরের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ দিয়ে দুর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সেই গবেষণাও হয়েছে।

ষাটের দশকের শেষের দিকে সিআইএ এসব গোয়েন্দা মিশনে প্রাণী পাঠানোর জন্য ৬ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করতো।

গুপ্তচর হিসেবে সবচেয়ে সফল কবুতর:

তবে কবুতর ছিল সবচাইতে কার্যকর কারণ তাদের খুব দারুণ একটা ক্ষমতা হল শত মাইল দুরের অপরিচিত কোন যায়গায় ফেলে আসার পরও তারা ঠিকই পথ খুঁজে বাড়ি ফিরে আসে।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় গোপন তথ্য সংগ্রহে কবুতর ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার গোপন কবুতর গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। যাকে কিনা বলা হতো “সিক্রেট পিজন সার্ভিস” । এই বিশেষ কবুতর গোয়েন্দা বাহিনীর এক হাজারের বেশি কবুতর সফলভাবে বার্তা নিয়ে ফিরে এসেছিলো।

জার্মানদের রাডার স্টেশন ও রকেট ছোড়ার স্থাপনা সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ৭০ এর দশকে টাকানা নামে একটি অভিযানের অংশ হিসেবে কবুতর দিয়ে ছবি তোলার বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছিলো।

সিআইএ সেসময় কবুতর দিয়ে ছবি তোলার পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করে। ৩৫ গ্রাম ওজনের ক্যামেরা তাদের শরীরে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। সেই ক্যামেরাগুলো ছিল স্বয়ংক্রিয়। কবুতরের কাজ ছিল সঠিক যায়গা দিয়ে উড়ে যাওয়া। সেই ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিগুলো বেশি পরিষ্কার ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে গোপন স্থাপনায় তাদের কিভাবে নিয়ে যাওয়া হবে সে নিয়েও নানা গবেষণা হয়েছে।

১৯৭৬ সালের একটি নথি অনুযায়ী লেনিনগ্রাদের কাছে রাশিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী সাবমেরিন তৈরি করতো এমন একটি বন্দরকে নির্বাচিত করা হয়েছিলো গুপ্তচর কবুতরদের মিশনের জন্য। কিন্তু এর পর থেকে এই কবুতরেরা কতগুলো সফল মিশনে গেছে এবং তা থেকে কী ধরনের গোপন তথ্য মিলেছে সে সম্পর্কিত নথিপত্র এখনো গোপনই রয়ে গেছে। তাই এর বেশি কিছু আর জানা যায়নি। 

সূত্রঃবিবিসি