ছাতকে অনাবাদি জমিতে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫৩

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের মঈনপুর গ্রামের পাশের আমন জমি আড়াই যুগ ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে ছিল। অনাবাদি পড়ে থাকা এসব জমির মধ্যে ২৫০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করায় বাম্পার ফসল হয়েছে। এসব পতিত জমিতে ধানের ফলন ভালো না হওয়ায় জমি গুলো বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি অবস্থায় ছিলো। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহায়তায় এসব অনাবাদি পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় আনা হয়েছে। সরিষার ফলন দেখে প্রান্তিক কৃষক পরিবারে চোখ-মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলনের আশাও করছেন চাষিরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় পতিত জমিতে বাড়তি ফসল তুলতে সরিষার চাষাবাদে ঝুঁকেছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। সেই সঙ্গে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় পরিবারের তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন তারা। ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়াসহ সঠিক সময়ে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

দেখা যায়, একাধিক কৃষক ফসলের মাঠে ক্ষেত থেকে সরিষা কাঠার পর জমা করছেন। কেউ মেশিনে সরিষা মাড়াই শেষ করে রোদে শুকিয়ে রাখছেন। আবার কেউ বা শুকানো সরিষা গুলো বস্তাবন্ধি করছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সকল সরিষা ফলন ঘরে উঠবে বলে আশা করছেন। 

সরিষা চাষী মঈনপুর গ্রামের শফিকুল হক ও মাষ্টার মতিউর রহমান জানান, ১২ জন কৃষকের উদ্যোগে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আড়াইশ বিঘা পতিত জমিতে এবার সরিষা চাষাবাদ করা হয়। যে জমিতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কোন চাষাবাদ হয়নি। ২৫০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে সরকারী বীজ ও সার ছাড়া মোট খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার মতো। এবার অনাবাদি জমিতে প্রথম সরিষার আশানুরুপ ফলনে তারা খুশি। প্রায় এক মাস ধরে ক্ষেত থেকে সরিষা কাটা চলছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ মণ সরিষার ফলন হবে। বর্তমানে সরিষার প্রতি মণ বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা হিসেবে ২৫০শ বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সরিষা বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে সরিষা রোপন শুরু করে শেষ হয় ২০ নভেম্বর। সরকারি ভাবে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে প্রতি কৃষককে দেড় কেজি উন্নত জাতের সরিষা বীজ ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়। সরকারি প্রণোদনা ও বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিগত বছরের তুলনায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

দোলারবাজার ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা লিটন চন্দ্র দাস বলেন, এর আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় ৩০ জন কৃষককে সরিষা চাষের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান বলেন, এখনে নানা জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদ বাড়ছে। সরকার সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা প্রদান, বাজারে সরিষার ভালো মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পতিত জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষের মাধ্যমে লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।