ফটিকছড়িতে চাষ হচ্ছে বিশাল আকৃতির জাপানি মুলা

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০১

সাহস ডেস্ক

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদীর চরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে বড় বড় জাপানি মুলার। বিশাল আকৃতির এ মুলা দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও অন্যরকম স্বাদ। এবার ফটিকছড়ি বারৈয়ারহাটের পশ্চিম পাশে হালদা নদীর চরে হাজার হাজার মুলা চাষ করে সফল হয়েছেন চাষি আব্দুর রহিম। তার দাবি দেশের সবচেয়ে বড় মুলা উৎপাদিত হয় ফটিকছড়িতে।

ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বিক্রি হচ্ছে এসব বিশাল আকৃতির জাপানি মুলা। হালদা নদীর কূল ঘেঁষেই বিস্তীর্ণ মাট জুড়ে মুলা চাষ হয়েছে। একেকটি মুলার ওজন ৪-১৫ কেজি এবং এসব মুলার মূল্য ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

চাষি আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১৫ বছর ধরে মাইজভান্ডারের ১০ই মাঘের ওরশ উপলক্ষে তারা মুলা চাষ করে আসছে। তবে এবার সে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় চার হাজার পিস মুলা রোপণ করেছে। এজন্য তার এক লাখ টাকা মত খরচ হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ও হয়েছে ভালো। এবার তার লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ টাকার ও বেশি।

ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার মুলা খেত থেকেই বিক্রি করে দিয়েছে রহিম। তবে মুলা চাষিরা আক্ষেপ করে বলেন, এতবড় একটা মুলা ক্ষেত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কৃষি অফিসেরও কোন সহযোগিতা মেলে না।

মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশে বিশাল আকৃতির যে মুলা বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ ফটিকছড়ির সুয়াবিল এলাকার মুলা। এবার ওরশে ২০ লাখ টাকার মুলা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ এলাকার কৃষকদের। এছাড়া এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মুলা বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৬ কেজি ওজনের।

এবার মূলত মুলা চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার হালাদা নদী ধুরুং খালের দুই পাড়ে মুলা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। হালদা নদীর নাজিরহাট চরঘো পাড়া, কুম্মারপাড়া, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, রোসাংগিরি, সমিতির হাট ইউনিয়নে।

অপর দিকে সর্তা নদীর পাড়ে খিরাম ও ধুর্মপুর, আবদুল্লাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মুলার আশাতীত ফলন হয়েছে। মুলা চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে।

ফটিকছড়িতে মুলার ফলন ভাল হওয়াতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছে মুলা ক্রয়ের জন্য। দেশ জুড়ে খ্যাতি রয়েছে ফটিকছড়ির বুকের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী, ধুরুং খালে চরে উৎপাদিত শাক-সবজির। পাশি পাশি কৃষকরা চাষ করে যাচ্ছেন মুলার। বছর বছর মুলা চাষ বেড়েই চলছে এ বৃহত্তর ফটিকছড়িতে।

মাইজভান্ডার দরবারের ভক্ত সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রানা জানান, দেশে জুড়ে ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডারী আশেক ভক্তদের মাঝে এ অঞ্চলের মুলার আলাদা কদর রয়েছে। তাই প্রতিবছর কৃষকরা উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলীয়ে কামেল মাইজভান্ডারী ত্বরিকার প্রবর্তক হযরত শাহছুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) মাইজভান্ডারীর ১০ মাঘের ওরশ শরীফে মুলা বিক্রির আশায় থাকেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লাখ লাখ আশেক ভক্তের চাহিদা থাকে মুলা ক্রয়ে। তাই ১০ মাঘের ওরশ শরীফের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুলা। এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত বড় আকারের মুলা মেলায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায় কৃষকরা।

এ বছর নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে শুরু করে মাইজভান্ডার শরীফ মেলা পর্যন্ত মুলা বিক্রি চোখে পড়ার মতো। এক একটি মুলা দুই তিন হাত পর্যন্ত লম্বা ও পাঁচ থেকে ১৬ কেজি ওজনের পর্যন্ত হয়।

কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের মুলা চাষি মোতালেব হোসেন জানান, ছয় কানি জমিতে মুলা চাষ করেছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ মুলা সাত থেকে ৮শ’ টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, ছয় কানি মুলা চাষ থেকে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা বিক্রি হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, জাপানি হাউব্রীড জাতের এ মূলা পাহাড়ি ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং ফলনও হয় ভালো। উপজেলার প্রায় এক হাজার কৃষক মোট ৯৫ হেক্টর জমিতে এবার মুলা চাষ করেছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন মুলা উৎপাদন হয়েছে। যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার অধিক। এবারো লক্ষ্যেমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ মো. গোলাম আজম জানান, মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনি ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিন কমিয়ে তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে, যা কি না জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মুলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং কম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত