চায়না দুয়ারীর ফাঁদে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ২০:০৭

সাহস ডেস্ক

নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী জালের ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির মাছ। সহজে বেশি বেশি মাছ ধরা পড়ায় নদ-নদী জুড়ে জেলেরা ব্যবহার করতে শুরু করেছে নিষিদ্ধ এই চায়না দুয়ারী জাল।

নদ-নদীতে থাকা স্বাদু পানির সব ধরনের দেশি মাছ সূক্ষ্ম এই চায়না জালে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নদীতে মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কই, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেশের ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, পাবনার বেড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে আধুনিক চায়না দুয়ারী জালের কারখানা রয়েছে। 

ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীতে এই চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। কয়েকশ' গজ দূরে দূরে চায়না জাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। ডিঙি নৌকা নিয়ে প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হয়ে যায় এই জালের ফাঁদ পাতার প্রক্রিয়া। সারা রাত ফাঁদ পেতে সকাল থেকে চলে জাল গোছানোর পালা। জালে ধরা পড়ে একে একে দেশি প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় স্বাদু পানির সব মাছ। শুধু মাছই নয় নদীতে থাকা কোন জলজ প্রাণিও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মাছের ডিমও ছেঁকে ওঠে এই চায়না জাল থেকে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার হজরতপুর ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়কার খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী, এমনিতেই পানির অভাবে মৃত প্রায় এই নদী। গত বর্ষা মৌসুমে পর নদীর চরাঞ্চলে যখন কিছুটা পানির দেখা মিলেছে এর ভেতরে এই চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহারে কোন ধরনের মাছই আর অবশিষ্ট থাকছে না পানিতে। চায়না দুয়ারী জালে মাছ ধরার মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণির মৌসুমী অসাধু মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

হজরতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক একটি চায়না জালের দাম ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। সাধারণত ৩০ হাত লম্বা হয়ে থাকে এ জাল, লোহার ৪টি শিক দিয়ে খোঁপ-খোঁপ আকারে থাকে। সূক্ষ ঘন চায়না জালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদীতে মাটির সাথে লম্বা-লম্বিভাবে লেগে থাকে এবং দু’দিক থেকে মাছ ঢুকতে পারে। চায়না জালের এ ফাঁদে মাছ ধরতে মাছের কোন খাবার বা টোপ লাগে না, ফলে চিরায়িত মাছ ধরার যেসব কৌশল দিয়ে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে। প্রকৃত জেলেদের চেয়ে এই চায়না দুয়ারী জালের সহজ ফাঁদে মাছ ধরতে নেমেছে মৌসুমী শিকারীরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ঢালীকান্দী  থেকে শুরু করে একই উপজেলার ডোমরা কান্দা নদীর জায়গা জুড়ে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

হজরতপুর গ্রামের সৌখিন মৎস্য শিকারী এরাবত হোসেন সাহস২৪.কমকে বলেন, এভাবে মাছ শিকার করা ঠিক না। কারেন্ট ও চায়না জাল দিয়ে মাছ মারলে, কিছুদিন পর নদীতে আর কোন মাছ পাওয়া যাবে না।

নদীপাড়ের বাসিন্দা হজরতপুর গ্রামের কৃষক গনি মোল্লা সাহস২৪.কমকে বলেন, ভয়ঙ্কর চায়না জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে কিছুদিন পর স্বাদু পানির এসব মাছের আর দেখা মিলবে না।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা সাহস২৪.কমকে বলেন, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জালের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার আছি, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে হজরতপুর বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য আসেনি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।

সাহস২৪.কম/এবি.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত