চশমাপরা হনুমান রক্ষায় ৩ তরুণের সাইকেল যাত্রা

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২১, ১৮:৪৬

সাবিত হাসান
চশমাপরা হনূমেনর দল। ছবিঃ সাবিত হাসান​

বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা, প্লাস্টিক ব্যাবহার হ্রাস, গাছ লাগান, পরিবেশ দূষণ রোধ, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই এগুলো বিশেষ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিকে নষ্ট করে মানব জাতি তাঁর নিজের যে বিপর্যয় ডেকে আনছে, সময় আবর্তনে তা আজ বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিছিয়ে থাকা উন্নয়নশীল এই দেশে বেড়েছে শিক্ষার হার, বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি বড়েছে সচেতনতা ও প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, সোশাল মিডিয়া ও স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বেস কিছু প্রকৃতি বান্ধব জনসচেতনতার ক্লাব। প্রকৃতি প্রেমি ও চশমাপরা হনূমান গবেষক দলের এক সদস্য ও তাঁর ২ বন্ধুর এবারের যাত্রা এই হনূমান সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

বাংলাদেশে মহাবিপন্ন ও বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এই হনূমানের গত সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৩ তরুন

২২ তারিখ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসে ঢাকা থেকে তারা যাত্রা শুরু করেছেন। সাইকেল চালিয়ে তারা পারি দিচ্ছেন প্রায় সাত শো কিলোমিটার পথ। যাত্রা পথে তারা বিভিন্ন জায়গায় থেমেছেন, মানুষের মাঝে চশমাপরা হনূমান, বন ও বন্যপ্রাণীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তাঁর হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানও শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ শেষে জানিয়েছেন সিলেটের আরো কিছু বনে যেখানে এখনো এই চশমাপরা হনূমান টিকে আছে, তারা সেখানে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ভ্রমণ করবেন। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এ যাত্রা অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

মহাবিপন্ন এই চশমাপরা হনূমেনর শেষ আবাস বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু চিরহরিৎ বন। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের অধ্যাপকড. ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ড তার গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেছিলেন ১৯৯০ সালের হিসাব মতে বাংলাদশে প্রায় ১৩০০টা চশমাপরা হনূমান আছে, যা গত চার দশকে আশংকাজনক হারে কমে গেছে।

২০০৩ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় এই হনুমানের সংখ্যা গত তিন প্রজন্মে (প্রতি প্রজন্ম ১০-১২ বছর) ৮০ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে পুরো বাংলাদেশে এদের সংখার কোন সঠিক ধারণা নেই। “বাংলাদেশ চশমাপরা হনূমান সংরক্ষণ প্রকল্পের” আওতায় সিলেটের ৫টি বন তথা লাউয়াছাড়া, সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গা, আদমপুর ও লাঠিটিলা বনে ২ বছর ধরে (২০১৮-১৯) বিপন্ন এই প্রাণীর সংখ্যা নিরুপনের উদ্দেশে গবেষণা পরিচালিত হয়। সিলেট বিভাগে প্রায় ৪০০ চশমাপরা হনুমানের বাস রয়েছে বলে গবেষণায় জানা যায়। গবেষক দল ৫টা বনে ৩৬টা দলে মোট ৩৭৬টা চশমাপরা হনুমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ তরুন

এছাড়া সিলেট বিভাগের জুরী উপজেলার সাগরনাল বনে চশমাপরা হনুমানের উপস্থিতির কথা বলেছেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে হনুমানের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেলে ও বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা মোটামুটি ভালো আছে, তবে চট্টগ্রাম বিভাগে সংখ্যার কোন ধারণা নেই।

চশমাপরা হনুমান কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বনভূমি উজার হওয়া, অবৈধভাবে সংরক্ষিত বন থেকে বাঁশ ও জ্বালানী কাঠ সংগ্রহকরা, বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি এবং গাছ কেটে বনকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দেওয়া। কোথাও কোথাও প্রাকৃতিক বন কেটে লাগানো হয়েছে সেগুন বাগান বাঁ অন্য কাঠের গাছ যার ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাণীদের খাদ্যসংকট। বনের বাইরে খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে অনেক বানর। অপরিকল্পিতভাবে বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎলাইন নেওয়া, লম্বালেজি এই হনুমানের বিশেষ হুমকি সরূপ। কেবল ২০১৬-২০১৯ সাল পর্যন্ত লাওয়াছড়া, সাতছড়ি এবং লাঠিটিলা বনে মোট ৮টি চশমাপরা হনুমান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। গাছের পাতা, কচিশাখা, ফুল ও কুঁড়ি এবং ফল ও বীজ এদের খদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

খাদ্য গ্রহণ শেষে ফলের বীজ বনের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা বনকে নতুন জীবন দান করে। প্রকৃতির জন্য উপকারী এই প্রাণীকে রক্ষা করতে এখনি উদ্যোগী হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই ৩ তরুণের (সজিব বিশ্বাস, সুশীল মালাকার, নিলয় চন্দ্র মণ্ডল) এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষ্যায় যথাযত ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত