বাংলাদেশ থেকে আবিষ্কার হল নতুন প্রজাতির ব্যাঙ

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২১, ১৭:৫৫

সাবিত হাসান
ছবি: সাবিত হাসান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর অকৃত্রিম সাফল্য। ২০১০-২০১১ সেশনের শিক্ষার্থী হাসান আল রাজি চয়ন ও একই বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মার্জান মারিয়া একটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন।

নতুন আবিষ্কৃত এ ব্যাঙটির নাম লেপটোব্রাকিয়ামসাইলথিয়াম (Leptobrachiumsylheticum)। গবেষণা কাজটির সার্বিক তত্বাবধানে ছিল Lomonsov Moscow State University এর সহযোগী অধ্যাপক নিক পোয়ারকভ (Nick Poyarkov)। ব্যাঙটি আবিষ্কার করা হয় সিলেট বিভাগ থেকে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে লেপটোব্রাকিয়ামসাইলথিয়াম (Leptobrachiumsylheticum)। নতুন প্রজাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই ব্যাঙের শারীরক পরিমাপ, এদের মলিকুলার বিশ্লেষণের পাশাপাশি ডাকের বিশ্লেষণও করা হয়েছে যা এই গণের অন্য ব্যাঙদের থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন।

হাসান আল রাজি চয়ন বলেন গত বছর সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গবেষণার কাজের জন্য গেলে তারা সেখানে এ ব্যাঙটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন যে এটা আমাদের পরিচিত ব্যাঙয়ের থেকে কিছুটা আলাদা প্রকৃতির। পরবর্তিতে বিস্তর গবেষণা করে বিশ্বের জন্য একদম নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করেন এই গবেষকদল। নতুন আবিষ্কৃত লেপটোব্রাকিয়ামসাইলথিয়ান (LeptobrachiumSylhetian)  ব্যাঙটি মাঝারি আকৃতির, ডাক অনেকটা হাসির মত এবং এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এদের চোখগুলো লাল যেকারনে এদের Fire frog বলা হয়ে থাকে। এটি ঝরাপাতার ওপর চুপ করে বসে থাকে। এ জন্য ইংরেজিতে একে Liter Frog বলা হয়ে থাকে।

গবেষণাপত্রটি Journal of Natural History জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এ আবিষ্কার বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে,  দেশের জন্য বয়ে এনেছে গৌরব। এ বিষয়ে হাসান আল রাজি চয়ন বলেন, আবিষ্কৃত ব্যাঙটিকে প্রথমে লেপটোব্রাকিয়ামসাইলথি (LeptobrachiumSmithi) নামে বলা হত। কিন্তু লেপটোব্রাকিয়ামসাইলথি (Leptobrachiumsmithi) এর প্রাপ্তিস্থান বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে ইন্দোনেশিয়া আইল্যান্ড এর দিকে হওয়ায় আমরা শুরু থেকেই নিশ্চিত ছিলাম যে এটি অন্য প্রজাতির। তখনই রাশিয়ার Lomonsov Moscow State University এর সহযোগী অধ্যাপক নিক পোয়ারকভ (Nick Poyarkov) এর পরামর্শক্রমে আমরা ব্যাঙটি নিয়ে কাজে নেমে পড়ি। ফরেস্ট বিভাগের অনুমতি থাকায় গতবছরের লকডাউনেও কাজ করতে পেরেছি। ৩ মাসের গবেষণা শেষে গতকাল এটি প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান এর আগেও আমরা ওই বন থেকে রাওচেস্তেসরখানি (Raochestesrazkhani) নামের আরো একটি ব্যাঙ আবিষ্কার করেছি। এ থেকে বোঝা যায় বনটি জীববৈচিত্র্য দিয়ে পরিপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বনটি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন কারণে বনের প্রাণ পানির ছড়াগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বনের ছড়াগুলো ব্যাঙদের আবাসস্থল তাই আমাদের ছড়াগুলো রক্ষার্থে এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্জান মারিয়া বলেন নতুন কিছু আবিষ্কার করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করতে চাই। নিজের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে হাসান আল-রাজি বলেন আসলে নিজের কাছে ভালো লাগছে কারণ আমার কাজের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পেরেছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত