টবে পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৩৩

সাহস ডেস্ক
পেয়ারা আমাদের সকলের কাছেই একটি প্রিয় ফল। আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখা উচিত। আমলকির পরে পেয়ারাতেই সবচেয়ে বেশী ভিটামিন সি বিদ্যমান। পেয়ারাতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘সি’ ও লাইকোপেন—যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। এ ছাড়া এ ফলে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, স্নেহ, শর্করা ও প্রোটিন রয়েছে । আমাদের দেশে ছাদে অনেকেই পেয়ারার চাষ করে থাকেন। আসুন জেনে নেই ছাদে পেয়ারা চাষের সহজ পদ্ধতি - 
 
বাংলাদেশের চাষ উপযোগী অনেকগুলো জাত আছে পেয়ারার। সকল জাতের পেয়ারাই ছাদেও চাষ করা সম্ভব। কিছু জাতের পেয়ারার কদর একটু বেশি এর সুমিষ্টতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশির কারনে।
 
পেয়ারাতে যে সকল  ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বর্তমান :
  • ভিটামিন সি,
  • ক্যালসিয়াম,
  • পটাশিয়াম,
  • লোহা,
  • ক্যালোরি,
  • প্রোটিন,
  • ফসফরাস,
  • সোডিয়াম,
  • আঁশ,
  • ফোলেট,
  • পলিফেলন,
  • ভিটামিন এ,
  • ম্যাঙ্গানীজ,
  • সেলিনিয়াম,
  • ভিটামিন বি ১,
  • ভিটামিন বি 2,
  • ভিটামিন বি ৩,
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
  • শর্করা,
  • ফাইবার,
  • ফলিক এ্যাসিড,
  • ম্যাগনেশিয়াম,
 
পেয়ারার উল্লেখ্য যোগ্য জাতের এর মধ্যে রয়েছে-
  • বাউ পেয়ারা-১ (মিষ্টি),
  • এফটিআইপি বাউ পেয়ারা-৪ (আপেল),
  • বাউ পেয়ারা-৫ (ওভাল),’
  • এফটিআইপি বাউ পেয়ারা-৬ (জেলি) এবং থাই পেয়ারা।
  • এছাড়াও ইপসা -১ এবং ইপসা -২ পেয়ারাও ভাল জাতের পেয়ারা ।
 
টবের মাটি তৈরি :
পেয়ারা গাছের জন্য টবের মাটি তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এর প্রয়োজন মত সব পুষ্টি উপাদান  মাটিতে বিদ্যমান থাকে। এখানে ১৮” একটি টবের জন্য সারের মাত্রা উল্লেখ করা হলো। মাটি তৈরি করার জন্য প্রথমে দুই ভাগ মাটি ও এক ভাগ গোবর সঠিকভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণের সাথে ১৩০ গ্রাম টিএসপি ও ৭০ গ্ৰাম এমপি সার মিশিয়ে নিতে হবে। এছাড়া টবের নিচে ফুটো থাকা আবশ্যক। পেয়ারার গাছের টবে পানি জমে থাকলে পেয়ারা চাষ এখানেই শেষ। এ জন্য একটি ২০ ইঞ্চি ড্রাম নিয়ে ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । 
 
উপরোক্ত নিয়মের মাটি পানি দিয়ে ১০-১২ দিন ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে যাহাতে টবের মাটি শুকিয়ে যায় । টি শুকিয়ে ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে ।
 
পেয়ারা চারা রোপন :
পেয়ারা চারা রোপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়া যেন মাটি থেকে আলাদা না হয়ে যায়, গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু থাকে এবং চারা গাছটিকে সোজা থাকে।
চারা রোপনের পর লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । তবে গাছের গোড়া শুকিয়ে গেলে অল্প পরিমানে পানি দিতে হবে । কখনই বেশী পরিমানে পানি দিয়ে স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থায় রাখা যাবে না ।গ্রীষ্মকালে গাছ যাতে বেশী শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । প্রয়োজন হলে গ্রীষ্মকালে সকাল বিকাল দুই বেলা করে পানি দিতে হবে ।
 
টবে পেয়ারা গাছের পরিচর্যা :
সরিষার খৈল জৈব পদার্থ হিসাবে ভাল উপযোগী। গোবরে বিকল্প হিসাবে খুব ভাল কাজ করে সরিষার খৈল। সরিষার খৈল ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে । গাছ লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে । ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে । টবের মাটি কিভাবে পরিবর্তন করবেন লেখাটি পড়ুন। গাছ লাগানোর ২ বছর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পেয়ারার ডাল কেটে দিতে হবে । ছাদের গাছকে যতটা সম্ভব ছোট রাখতে হবে । ডাল পালা বড় হলে ফলন কম হবে । গাছকে ছোট রাখলেই ছাদের গাছে অধিক ফলন আশা করা যায় ।
 
ছাদের টবে পেয়ারা চাষে রোগবালাই দমন পদ্ধতি :
পেয়ারা গাছের পাতা নতুন হলে অনেক সময় দেখা যায় পোকা এগুলোকে ফুটো করে ফেলে। যার ফলে ফলন ব্যাঘাত ঘটে এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম পরিমাণ ডেরিস,বা ২০ গ্ৰাম ডারবাসন ব্যবহার করতে হবে।
 
পেয়ারা গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে করনীয় :
এই সমস্যা সাধারণত ছত্রাক এর কারনে হয়। প্রতিকার হিসেবে ব্যভিসটিন ঔষধ টি এক লিটার পানিতে এক গ্ৰাম পরিমাণে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 
পেয়ারা গাছে ফল আসার আগে করনীয়: 
পেয়ারা গাছে ফুল আসার আগে রিপকরড/ ভেজিম্যাক্স সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
 
বাগান করুন সুখি ও সুস্থ থাকুন।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত