পাটের সোনালী দিন ফিরছে নাটোরে

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৬:৩৪

রাজশাহীর নাটোর জেলায় সোনালী আঁশের দিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলোতে স্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে পাট প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধা এবং পাটের বাজার দরের ঊর্ধ্বমুখী থাকার কারণে কৃষকরা পাট চাষে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বেড়েছে পাটের আবাদি জমি এবং উৎপাদনের পরিমাণও। 

জমিতে সবুজে ভরপুর পাট রাজ্যে চলছে পাট কাটা। অন্যদিকে জলাশয় ও এর পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতে পাট গাছ ভেজানো, পাটের আঁশ ছড়ানো, পাট শুকানো, পাটকাঠি সংগ্রহ-সব কর্মযজ্ঞই চলছে যুগপৎ ভাবে। সবুজ পাট গাছের রূপান্তর ঘটছে সাদা পাট আর পাটকাঠিতে। রূপালী রৌদ্রকে মেঘে ঢেকে দিয়ে প্রকৃতিতে নামছে শ্রাবণ ধারা। প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করে গ্রামীণ জনপদে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকেরা কর্মে মুখরিত হয়েছেন পাট রাজ্যে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ পাট কাটা হয়ে গেছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৩ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সর্বাধিক পাট আবাদ হয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলায়-সাত হাজার ৯১০ হেক্টর, লালপুরে পাঁচ হাজার ৯১০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে তিন হাজার হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় এক হাজার ৮৬০ হেক্টর, সিংড়ায় এক হাজার ৭৮০ হেক্টর, নাটোর সদর উপজেলায় এক হাজার ৭২০ হেক্টর এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় এক হাজার ১৬৫ হেক্টর। এরমধ্যে প্রায় সবটাই তোষা জাতের পাট। বিগত ২০১৮ সালে জেলায় ১৭ হাজার ২৪০ হেক্টর আবাদি জমি থেকে ৪১ হাজার ৪৭৩ টন পাট উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছরে উৎপাদন প্রায় ৬০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে আবাদি জমির পাশাপাশি হেক্টর প্রতি পাটের গড় উৎপাদনও বেড়েছে।

সিংড়া উপজেলার লাড়য়া গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে এবং সংলগ্ন বিল ও ডোবাতে শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এই কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। তারা মূলতঃ পানিতে না নেমেই জলধারা থেকে পাড়ে তুলে আনা পঁচানো পাটের আঁশ ছড়াচ্ছেন। আঁশ ছড়ানো কাজে নিয়োজিত কুলসুম বিবি জানান, 'এই কাজে পুরুষের মজুরি বেশি। তাদের ৩৫০ টাকা আর আমাদের ২০০ টাকা।' হাজেরা বেওয়া বলেন, 'আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি।'

রাস্তার দুধারে বাঁশের আড় টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ্য বাড়ির চারপাশ-সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকা জুড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। লাড়–য়া এলাকার কৃষক আনছার আলী বরাবরের মত এবারো তার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। লাড়–য়া বিলে পাট ছড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী আনছার আলী বলেন, 'এবারের বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পাট পঁচানোর সুবিধা হয়েছে। আশা করি বিঘা প্রতি দশ মণ করে ফলন পাবো।'

নাটোর সদর উপজেলার রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, 'এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি নয় মণ।' 
একই ব্লকের জাঠিয়ান এলাকার কৃষক শামসুল আলম এবার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি জানান, 'পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশাকরি বিঘায় অন্তত নয় মণ পাট পাওয়া যাবে।'
তিনবিঘাতে পাট ফলানো সিংড়া উপজেলার বড়শাঁঐল গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের বলেন, 'জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি আর অনাবাদি থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মৌসুম ধরা যায়।'
নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী বলেন, 'বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে বেশ ভাল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।' কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'বাজারের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর ফলে দরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।'

নাটোরের সর্বাধিক পাট উৎপাদনকারী বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার ইকবাল আহমেদ জানান, 'উপজেলায় বিঘাপ্রতি গড়ে ১০ মণ করে ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলনের পাশাপাশি দরও উদ্ধমুখী। তাই কৃষকরা পাট চাষ করে লাভবান হয়েছেন। পাট এ এলাকার অন্যতম অর্থকরি ফসলে পরিণত হচ্ছে।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি মূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় পাট চাষে তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থাকছে।

সূত্র: বাসস

সাহস২৪.কম/জুবায়ের/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত