বিশ্ব চড়ুই দিবস

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৯, ১৭:৫৫

১.
চড়ুই বা চড়াই কেবল একটি শব্দ নয়, একটি পাখির নাম নয়। আমার মতোন গ্রামে জন্মগ্রহণ ও ছোটবেলা কাটানো ভীষণ চঞ্চল আর দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের কাছে চড়ুই মানেই স্মৃতির ওড়াউড়ি, নিরন্তর ঘোরাঘুরি, ঠিক যেমনটি চড়ুই পাখিটি আমাদের ঘরের কোণে, প্রকৃতি ও মনের বাগানে, গাছে গাছে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়ায়। পুরনো স্মৃতিদের কিচিরমিচির হয়ে ফিরে আসা। শুধুই মনে পড়ে সেই ছোট্টবেলার কথা, ঠিক যেন চড়ুই পাখিটির মতোই দুরন্তপনায় ভরপুর ছেলেবেলা ছিল আমার। বিশেষ করে শীতের কুয়াশায় জানালার পাশের গাছের ডালে বসে রোজ সকালে চড়ুই পাখিটির ডানা ঝাপটানো স্মৃতি ভুলি কী করে? আজ আমাকে তাই চড়ুই স্মৃতিতে পেয়ে বসেছে। কারণ আজ বিশ্ব চড়ুই দিবস। ২০১০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম পালিত হয় চড়ুই দিবস। প্রতি বছর ২০ মার্চ অনেকটা নীরবেই পালিত হয় বিশ্ব চড়ুই দিবস বা World Sparrow Day। চড়ুই পাখি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এদের বিলুপ্তি রুখতে যৌথ উদ্যোগ নেয় নেচার ফরএভার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ও ফ্রান্সের ইকো-সিস অ্যাকশন ফাউন্ডেশন, পাশাপাশি বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরিবেশ সংস্থা। ব্রিটেনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব প্রোটেকশন অব বার্ডস’ লাল তালিকাভুক্ত করেছে চড়ুইকে। 

২.
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ছোট্ট এ পাখিটির জন্য আবার দিবস কিসের? না, ছোট হলেও এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। সুবোধ চড়ুই পাখি আমাদের জীবন বিঘ্নিত করে না। ভীষণ আদুরে পাখি চড়ুই মানুষের কাছাকাছি থাকতে খুব ভালবাসে। এজন্যেই এদের ইংরেজি নাম হাউস স্প্যারো অর্থাৎ ‘গৃহস্থালি চড়ুই’। খড়কুটো, শুকনো ঘাস পাতা দিয়ে কড়িকাঠে, কার্নিশে বাসা বাঁধে, বসবাস করে। সমস্ত দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। দুদন্ডও যেনো অবসর নেই তার। চড়ুই মাটি থেকে পোকামাকড় শস্য খুঁটে খায়। প্রকৃতি এখন ফাগুনময়। চারদিকে বসন্ত ঋতুর সাজ। পাতা ঝরার দৃশ্য। তারই মাঝে গাছের ডালে ডালে নতুন প্রাণের আবহ। পথে-প্রান্তরে পত্র-পল্লবহীন আমড়াগাছের ডালে দু-চারটি পরিপক্ব ফল চোখে পড়ে। মানুষ তো বটেই, পাকা রসালো আমড়ায় আকৃষ্ট হয় চড়ুই পাখিও। পরিবেশ সহায়ক প্রিয় পাখি চড়ুই পাখি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এদের বিলুপ্তি রুখতে আসুন যে যার অবস্থান থেকে সহায়ক কিছু একটা করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং আসুন চড়ুইসহ প্রিয় পাখিদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করি।

৩.
কান্তকবি রজনীকান্ত সেন লিখেছিলেন চড়ুই পাখি ‘মহাসুখে অট্টালিকা’য় থাকে। আসলেই কি সেই সুদিন আছে চড়ুই পাখির? সারা পৃথিবী জুড়ে সব সময় মানুষের পাশে এর সহ অবস্থান ছিল সব সময়। কিন্তু আশংকাজনক হারে গত কয়েক দশক জুড়ে এর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তাই কিছু পাখি প্রেমিক এই দিনটি পালনে মোনযোগী হন। কিন্তু লোকবল আর প্রচারণার সীমাবদ্ধতার কারণে তা তেমন সচেতন প্রভাব ফেলতে পারছে না। ভারতের বিহারে চড়াই ‘রাজ্য-পাখি’ হলেও সেখানে তার অবস্থা অতটা সুখের নয় বলেই জানা যায়। এক সময় পটনায় ঝাঁকে ঝাঁকে চড়াই দেখা যেত। এখন আর সে দিন নেই। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার চড়াইকে ‘রাজ্য-পাখি’ ঘোষণা করেন। তার পরেই শুরু হয় সংরক্ষণের পরিকল্পনা। সে রাজ্যের পক্ষী বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মিশ্র বলেন, ‘‘পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলা ছাড়াও মোবাইল টাওয়ারগুলো চড়াইয়ের জন্য সমস্যার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল টাওয়ারের পাশে চড়াইয়ের বাসায় ডিম ফুটতে চায় না। চড়াইয়ের শরীরে মোবাইল টাওয়ারের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’’ তা ছাড়া পুরনো বাড়ির লাগোয়া বাগানগুলো ছিল চড়াইয়ের বিচরণ ও খাবার সংগ্রহের জায়গা। একে তো পুরনো বাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাগান কমেছে। যেটুকু আছে, সেখানেও অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারে চড়াইয়ের খাদ্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। 

৪.
এক সময় ঘরের কোনে, উঠান, বারান্দায় এদের উপস্থিতি ছিল সরব। সারাক্ষণ কিচির মিচির করে বাড়ী মাতিয়ে রাখতো। কিন্তু এই আধুনিক শহূরে এলাকায় এরকম বাড়ী কোথায় বলুন? যাও বা ঘরের ভেন্টিলেটারে বাসা বেধে থাকতো এখন তাও থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন এর পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে- তার একটি বাধা হল মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারগুলো। ওগুলো যেখান দিয়ে তরঙ্গ প্রবাহিত করে সেই জায়গাগুলোই চড়ুইদের উড়ার জন্য প্রকৃত উচ্চতা। ফলে তারা বেশীর ভাগ সময়ই সাবলীলায় উড়তে পারে না, পথ হারায়। আবার ইদানিং জলাধারগুলো ভরাট করে চলে কল-কারখানা ও বাড়ী নির্মাণ। ফলে তেষ্টা মেটানোর জলটুকুও তারা পাচ্ছে না। ফসলের জমিও বিলিন হয়ে যাচ্ছে। পাচ্ছে না খাদ্য। এ রকম আরো নানা কারনে মানুষের চির প্রতিবেশী এই পাখিটি চলে যাচ্ছে দূরে। হয়ত কোনদিন হারিয়েও যাবে এরা। তবে আমরা চাইলেই এদেরকে আমাদের মাঝে রেখে দিতে পারি। এজন্য বেশী কিছু করার দরকার নেই। প্রতিদিন বেঁচে যাওয়া কিছু ভাত বারান্দায় রেখে দিই আর একটা বাসনে কিছু পানি রেখে দিই যেন গোসল আর তৃষ্ণাটুকু মেটাতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এ প্রণীকুলকে আমাদের প্রয়োজনেই যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। 

৫.
চড়ুই বা চড়াই পাখি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ইংরেজি : house sparrow, sparrow। Passer গণের পাখির সাধারণ নাম। এই গণের যে কোনো প্রজাতিকেই চড়ুই বলা হয়। এরা আকারে ছোট এবং অত্যন্ত চঞ্চল। সারা পৃথিবী জুড়ে বহু রকমের চড়াই আছে। দেশের বিচারে বা বসবাসের প্রকৃতি অনুসারে চড়ুইকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সাধারণত চড়ুইয়ের রঙ বাদামি-ধূসর হয়ে থাকে। প্রজাতিভেদে কিছু রঙের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। এদের লেজ খাটো। প্রজাতিভেদে এদের দৈর্ঘ্য ১১ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ওজনের বিচারের একই ভাবে হেরফের দেখা যায়। প্রজাতিভেদে এদের ওজন ১৩.৪ গ্রাম থেকে ৪২ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। আকারে বা ওজনে ছোটো-বড় হলেও এদের দৈহিক গড়নশৈলী একই রকম। সকল প্রজাতিই চিঢ়িক্ চিঢ়িক্ শব্দে ডাকে। কখনো কখনো অনেক চড়ুই একসাথে দেখা গেলেও এরা কোনো দলের অন্তর্গত হয়ে বসবাস করে না। 

৬.
চড়ুই পাখির প্রধান খাদ্য শস্য, ফুলের কুড়ি, বাদাম জাতীয় ফল ইত্যাদি আহার করে। সারা দিনে একটি চড়ুই পাখি মাত্র পাঁচ থেকে সাত গ্রাম খাবার খায়। কত খাবার আমাদের নষ্ট হয়, বিদেশি কুকুর পুষে কত অর্থের অপচয় হয়, আবর্জনায় কত খাবার ফেলে দেওয়া হয়। সুবোধ চড়ুই পাখি আমাদের জীবন বিঘ্নিত করে না, কাকের মতো ছোঁ মেরে খাবার নিয়ে যায় না। ইঁদুরের মতো গর্ত করে খাবার মজুত করে না। কিন্তু নগরায়ণের দিগন্ত যতই প্রসারিত হচ্ছে, ততই বিলুপ্ত হচ্ছে চড়ুই পাখিদের জলাধার, খাবার, ঝোপঝাড়। ১৯৮৯ সালে ঢাকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ সালে ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি এবং ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ ডিগ্রি। রাত-দিন হাইড্রোলিক হর্নের অসহনীয় শব্দদূষণে চড়ুই আজ সংকটাপন্ন। শব্দদূষণের মাত্রা এখন ঢাকা মহানগরীতে ১৩১ ডেসিবেল পৌঁছেছে। কংক্রিটের এ নগরীতে চড়ুই পাখিরা আজ ছিন্নমূল। নগরায়ণ, ধোঁয়া ও ধুলার আস্তরণ এবং অগণিত এসির আগ্রাসনে চড়ুই পাখি জীবনযুদ্ধকে আরও কঠোর করে তুলেছে। উঠান নেই, বাগান নেই; তবু নগরের ভবনগুলোর কার্নিশ, ছাদ, বারান্দা ও চিলেকোঠায় নিজেদের আবাস গাড়তে সচেষ্ট ওরা। মাত্র পাঁচ–ছয় বছর আয়ুষ্কালের এ পাখি মানুষের আড়াল হতে চায় না, শত সংকটেও এ নগরী তাদের প্রাণপ্রিয় চারণভূমি। তারাও এখন শীতার্ত, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত।

৭.
চড়ুইয়ের প্রায় কাছাকাছি কিছু পাখি রয়েছে। যেমন- Cinnamon Ibon। Petroniaগণের প্রজাতিগুলো। তবে প্রকৃত চড়ুই বলতে Passer গণের পাখিগুলোকেই বুঝায়। বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় গৃহ চড়াই (House Sparrow)। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Passer domesticus। সারা বিশ্ব জুড়েই এই চড়াই দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চড়ুইয়ের স্ত্রী পাখির গায়ের রঙ ধূসর এবং পিঠের দিকের রঙ অপেক্ষাকৃত গাঢ়। পুরুষ পাখির ডানা বাদামি। গাল সাদাটে হয় এবং ঠোঁটের নিচের দিক কালো বর্ণের হয়। এদের দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার। ওজন হব প্রায় ৪০ গ্রাম। এরা চিঢ়িক্ চিঢ়িক্ শব্দে ডাকে। এরা জোড়া ধরে বা একাকী বিচরণ করে। এরা শস্য, ফুলের কুড়ি, বাদাম ইত্যাদি আহার করে। এরা বাড়ির ফাঁক ফোকরে খরকুটা দিয়ে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি ৩টি থেকে ৫টি ডিম প্রসব করে। চড়ুইয়ের বিভিন্ন প্রজাতিও রয়েছে।

৮.
তাই স্মৃতির পাখি চড়ুই বাঁচাতে চাই ইচ্ছা। শহরে নির্মাণ শিল্পে জোয়ারে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির ধুম পড়ে যাওয়ার জেরে নিজেদের বাসস্থান হারিয়েছে চড়ুইয়ের দল। গ্রামেও তাদের বাঁচার জন্য সহায়ক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে নানা কারণে। তারপরও দেখি সময়ের সাথে সাথে চড়ুই পক্ষী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। ঢাকা শহরে কবে জানি না, তবে গ্রামাঞ্চলে চড়ুই তার পুরনো কিচিরমিচির করার স্বধীনতা ফিরে পাবে, বিশ্ব চড়ুই দিবসে সেটারই অপেক্ষায় রইলাম। কারণ আমরা জানি, পাখি বাঁচিয়ে রাখাটা আমাদের নিজেদের জন্যই জরুরি। পাখি রক্ষায় কেবল পাখি গবেষকরাই নয়, সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততাও দরকার। কারণ গবেষণার পাশাপাশি জনসচেতনতাও পাখি রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। সে লক্ষেই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। পাখির জন্য অত্যন্ত উপযোগী অভয়াশ্রম সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই মনে করি।এ বিষয়ে সকলকে উৎসাহিত করা দরকার। নির্বিচারে চড়ুই পাখি হত্যার পরিণামে ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শাস্তি ভোগ করেছিল, তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ চীন। চড়ুই ফসলের ক্ষতি করে, এ ভ্রান্ত ধারণায় ৫০-এর দশকে মাও সে তুংয়ের নির্দেশে লাখ লাখ চড়ুই নিধন করা হয়। কিন্তু চার–পাঁচ বছরের মাথায় চড়ুইয়ের অভাবে শস্যক্ষেত্রে পোকামাকড়ের বিধ্বংসী আক্রমণে খাদ্যসংকটের কবলে পড়ে চীন। দুর্ভিক্ষে মারা যায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ। এরপর আবার শুরু হয় চড়ুই রক্ষার আন্দোলন।

৯.
চড়ুই পাখির সাথে সাথে রজনীকান্ত সেন-এর বিখ্যাত সেই ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটিও মনে ভাসে। কবিতাটির পুন:পাঠ করা যেতেই পারে।-
‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।”
বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

১০.
আবার প্রিয় ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়ার ‘শব্দদূষণ’ কবিতার কিছু অংশ মনে পড়ছে। তিনি লিখেছেন-
‘গরু ডাকে হাঁস ডাকে—ডাকে কবুতর
গাছে ডাকে শত পাখি সারা দিনভর।
মোরগের ডাক শুনি প্রতিদিন ভোরে
নিশিরাতে কুকুরের দল ডাকে জোরে।
দোয়েল চড়ুই মিলে কিচির মিচির
গান শুনি ঘুঘু আর টুনটুনিটির।’

১১.
গবেষকদের মতে, আমাদের জীবন এখন মুঠোফোনের পর্দায় বন্দী। প্রকৃতি ও পাখির সঙ্গে বন্ধন ছিঁড়ে গেছে। শিশুরা পাখি দেখে স্ক্রিনে। আর স্ক্রিনের বাইরে প্রাণহীন পুতুল, মনোগ্রামের ছবি, খেলনা পাখি তাদের সঙ্গী। অথচ একসময় চোখ ফেরালেই আমাদের চারপাশে শুধু চড়ুই আর চড়ুই। তাদের ফুড়ুত ফুড়ুত আসা-যাওয়া দেখেই কেটে যেত কত শিশু-কিশোরবেলা। দল বেঁধে আসা, খুঁটে খুঁটে খাওয়া, ঠোঁট ডুবিয়ে পানি পান, হঠাৎ উড়াল, হঠাৎ আড়াল—এত মায়াবী, এত আদুরে পাখি! চড়ুই পাখিদের বাঁচতে দিন। তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ, পড়া আর বিনোদনের ফাঁকে প্রতিদিন দুবেলা ছাদে বা বারান্দায় চড়ুইদের জন্য সামান্য খাবার ছিটিয়ে দাও। দেখবে, তাদের কত আনন্দ, আহ্লাদ। প্রিয় গৃহিণীরা, সাংসারিক ব্যস্ততার মাঝে মিটিয়ে দিন চড়ুইদের ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যন্ত্রণা। এ মহৎ কাজে সন্তানদের অনুপ্রাণিত করুন। বিশাল এ প্রকৃতির রাজ্যে জীবনটা পারস্পরিক, সামষ্টিক। কোনো জীবনই ক্ষুদ্র নয়, কোনো প্রাণীই সামান্য নয়। শুধু জৈব প্রবৃত্তি পূরণের জন্য মানুষের জীবন নয়। আমাদের প্রতিটি ঘরবাড়ি যেন হয় চড়ুই পাখির জন্য পরম মমতায় ভরা ভুবন, নির্ভয় আবাসন। আসুন, কম্পিউটার গেমস আর টেলিভিশননির্ভর যান্ত্রিক বিনোদনের আসক্তি কমিয়ে গড়ে তুলি চড়ুই পাখির সঙ্গে মিতালি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত