ভোলার চরাঞ্চলে মহিষ পালনে আগ্রহ বাড়ছে

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০১৯, ১৬:১৬

সাহস ডেস্ক

ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে মহিষ পালনে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুগ যুগ ধরে এসব চরে সনাতন পন্থায় মহিষ লালন হলেও সাম্প্রতিক আধুনিক পদ্ধতির ছোঁয়ায় মহিষের উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার চিকিৎসা সেবা পৌঁছে যাওয়ার ফলে রোগ-বালাইর কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে মহিষ। বেড়েছে মাংস ও দুধের উৎপাদন। আধুনিক ও উন্নত ষাড় মহিষের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন জাত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার সাত উপজেলায় ছোট-বড় ৭০টি চর রয়েছে। যারমধ্যে গরু ও মহিষ চরার উপযোগী চর রয়েছে ৪৫টি। এসব চরে মহিষ রয়েছে প্রায় ১ লাখ। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এসব মহিষ পালন করা হয়ে আসলেও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মহিষ পালন ও মহিষের মৃত্যু ঠেকাতে না পারায় লোকসান গুনতে হতো মহিষ মালিকদের।

শীবপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর চরে মহিষ পালন করছেন মো: ইউনুছ মিয়া। তিনি বলেন, তারা ৩ পুরুষ ধরে মহিষ পালন করে আসছেন। বিগত দিনে মহিষের বিভিন্ন অসুখ বিসুখ লেগেই থাকতো। তাই অনেকে মহিষ বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মহিষের সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় আবারো মহিষের প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তার শতাধিক মহিষ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদের অর্থায়নে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের সহযোগিতায় উন্নত পদ্ধতিতে মহিষ পালন ও জাত উন্নয়নে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা চরে উন্নত জাতের ষাড় মহিষ ও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। যার ফলে মহিষের আন্ত:প্রজনন রোধ হচ্ছে ও মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে বলে জানান মহিষ মালিকরা। অধুনিক চিকিৎসা সেবা ও উন্নত জাতের ষাড় মহিষ পেয়ে মহিষ মালিকরা বেজায় খুশি।

মহিষ পালন কারী চরের আব্দুল হাই, আব্দুল সত্তার ও সিরাজ উদ্দিনসহ অনেকে জানান, আগে মহিষ পেলে করে তেমন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতনা। বিশেষ করে মহিষের অসুখ-বিসুখ হলে চিন্তায় পড়তে হতো কিন্তু এখন অনেকটা হাতের নাগালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা। তারা আরো জানান, গত এক বছর ধরে মহিষের মৃত্যু কমে গেছে। উন্নত ষাড় দ্বারা মহিষের প্রজনন করায় স্বাস্থ্যসম্মত বাচ্চাও পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে ভোলার চরাঞ্চররে মহিষের চিকিৎসা ও পরামর্শ পাওয়ার কারণে দিন দিন মহিষ পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চরাঞ্চলের মহিষ পালনে উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুল কাদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চরাঞ্চলে মহিষ পালন বেড়েছে। আমরা বিভিন্ন ধাপে পর্যবেক্ষন করে আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত মহিষ পালনে সফলতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতেও এ প্রকল্পকে আরো প্রসার ঘটানোর চিন্তা রয়েছে।।

জেলার (ভারপ্রাপ্ত) প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা দিনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সময়ে মহিষ পালন অনেক প্রসার লাভ করেছে। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। কারণ, জনবল সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্র দুর্গম এলাকায় যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। কিন্তু ওই সংস্থার লোকজন দুর্গম এলাকা গিয়ে মহিষের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমার ম্যাসেজ দেয় যারফলে আমরা খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যেতে পারি।

তিনি আরো বলেন, দ্বীপজেলা ভোলায় প্রতিদিন ৫০০ মেট্রিক টন গরু ও মহিষের দুধের উৎপাদন চাহিদা রয়েছে, যার বিপরীতে জেলায় উৎপাদন হচ্ছে ৪২০ মেট্রিক টন। এখানকার মহিষের দুধ বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। বিশেষ করে মহিষের দুধের দধির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত