ধান ছেড়ে আমে নওগাঁর কৃষক

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১৬:০০

মুরাদ চৌধুরী

লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁর অনেক কৃষক ধান ছেড়ে আমের চাষ শুরু করেছেন। প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠছে আম বাগান।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে জেলায় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন জমিতে আম চাষ হচ্ছে। তবে প্রচার-প্রচারণা এর অভাবে পরিচিতি পাচ্ছে না নওগাঁর আম।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দা, ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও জেলার ১১টি উপজেলায় আম বাগান গড়ে উঠেছে প্রায় ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলতি বছর প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর আম উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন। 

এ বছর জেলায় আমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর এলাকায় আগাম জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। আমের মোকাম হিসেবে পরিচিত পোরশার সারাইগাছী, নিয়ামতপুরের আড্ডা ও সাপাহার বাজারে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আমের গঠন ও স্বাদ ভাল হওয়ায় নওগাঁর আমকে ব্যবসায়িরা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ জেলায় আমের আবাদ হয় ৭ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। ফলন হয় ৯৯ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করে ফলন হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করে ফলন হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় ১৩ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করে ফলন হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।

নওগাঁয় পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় সবচেয়ে বেশী আমের আবাদ হয় পোরশা উপজেলায়। এই উপজেলাতে জেলার মোট উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি আম উৎপাদন হয়। 

পোরশা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম বলেন, এ বছর পোরশায় আমের আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এখাকার বেশির ভাগ আম চাষিই অভিজ্ঞ। ফলে এখানে আমের ফলনও হয় বেশি। এখানে ফজলি, ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, আম্রপালিসহ সুপরিচিত ও সুস্বাদু প্রায় সব জাতের আম উৎপাদিত হয়ে থাকে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই আমগুলোই ঢাকায় কিংবা দেশের অন্য অঞ্চলে গিয়ে চাঁপাই কিংবা রাজশাহীর আম বলে পরিচিতি পাচ্ছে।

পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া গ্রামের আমচাষী আমির উদ্দিন বলেন, হামাগের এলাকার ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা। খরার সময় স্যাচের (সেচ) অভাবে ইরি ধান আবাদ হয় না। আমন ধান আবাদ হলেও অ্যাঁটেল (এঁটেল) মাটি হওয়ায় ধানের ফলন ভালো হয় না। এক বিঘা জমিতে বছরে ২০ মণ ধান উৎপাদন হলে যে লাভ হবে ওই জমিত আম বাগান করলে তার ডবল (দ্বিগুন) লাভ হয়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার মল্লিক বলেন, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলায় (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর) মোট আম উৎপাদনের পরিমান ছিল প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু নওগাঁতেই আমের উৎপাদন ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। নওগাঁয় উৎপাদিত প্রায় সব আম আধুনিক প্রজাতির।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত