ওয়াইন তৈরিতেও বিশ্বে শীর্ষে উঠে আসছে চীন?

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:০৫

সাহস ডেস্ক

পানীয় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইনের সুখ্যাতি রয়েছে। সেই সঙ্গে এর ব্যবসায়িক সাফল্যও ঈর্ষনীয়। ওয়াইনের স্বাদ আর ব্যবসায়িক সাফল্যের কৌশল শিখতে প্রতিবছর দেশটিতে বহু শিক্ষার্থী আসে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আসছে চীন থেকে।

তাহলে সামনের দিনে চীন কি হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ওয়াইন নির্মাতা দেশ? ইতোমধ্যেই পৃথিবীর নামী ওয়াইন প্রস্তুতকারক দেশের মধ্যে চিলি, আর্জেন্টিনা আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলেছে চীন। আর এজন্য বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত দেশটির পরিকল্পনা আর প্রস্তুতিও রয়েছে অনেক।

বিশাল বিনিয়োগ যেমন নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনি ওয়াইন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবছর বহু চীনা শিক্ষার্থীকে পাঠানো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এর মধ্যে একদল শিক্ষার্থী এসেছে অ্যাডেলেইডে। সরকারি বৃত্তিতে এসেছেন লিওয়েই লি।

তিনি বলছেন, ‘পড়া শেষ করে এখান থেকে ফিরে আমি হয়ত নিজেই ওয়াইন ব্যবসায় যুক্ত হব। ওয়াইনের পুরো বিষয়টিই আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়। কারণ নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই পানীয় খুবই পছন্দ করে।’

আর সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার ফক্স গ্রোভ, পেনফোল্ডস কিংবা জ্যাকব’স ক্রীকের মত সব ওয়াইনের সুখ্যাতি ভুবনব্যপী। এর বাইরেও দেশটির রয়েছে নানা স্বাদ আর গোত্রের আরো বহু নামী ব্রান্ডের ওয়াইন। বছরে এ খাত থেকে অস্ট্রেলিয়া আয় করে হাজার হাজার কোটি ডলার। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি এখনো সেরকম নয়।

আরেক শিক্ষার্থী ইহে হান বলছেন,‘আমার কাছে ওয়াইনকে সবসময়ই একটি অভিজাত পানীয় বলে মনে হয়। আর সেই সঙ্গে প্রতিটি ওয়াইনের রয়েছে আলাদা ইতিহাস এবং সংস্কৃতি। আর তার পেছনের গল্পগুলোও আমার খুবই চমকপ্রদ মনে হয়।’

পাঠ্যসূচীর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় সব ওয়াইনারিতে, যেখানে কয়েক ধাপে তৈরি হয় এবং বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয় ওয়াইন। দেখা যায় কোথাও কোথাও কাঠের ব্যারেলে করে জমিয়ে রাখা আছে পুরনো বহুমূল্য ওয়াইন, পৃথিবীব্যাপী যার চাহিদা ব্যাপক।

বিশ্বে এই মূহুর্তে ওয়াইনের অন্যতম বৃহৎ ভোক্তা দেশ চীন। দেশটিতে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইনের চাহিদাও বছর বছর বাড়ছে। কেবল ২০১৬তেই যা বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। একই সাথে ভালো স্বাদের ওয়াইনের কদর বাড়ছে চীনা ভোক্তাদের মধ্যে।

ইলেক্ট্রনিক্সসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর চীন যখন পানীয় তৈরিতে মন দিয়েছে, তার ১৬ আনা প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটি।
এই মূহুর্তে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স কিংবা ইটালির মত বড় ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে বেশি জমিতে আঙুরের চাষ করছে চীন।
ফলে অচিরেই কি চীন বিশ্বের সেরা ওয়াইন প্রস্তুতকারী দেশ হয়ে উঠবে?

এই তরুণ শিক্ষার্থী দল সে ব্যাপারে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী।

লিওয়েই লি বলছেন, ‘খুব সম্ভবত, হ্যাঁ। কিন্তু পদ্ধতিটা নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে। কারণ আমাদের ওয়াইন তৈরির ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের না, খুব অল্পদিন আগেই সেটি শুরু হয়েছে। ফলে আমি বলব আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে।’

এই দলের অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, চীনের বানানো ওয়াইনের স্বাদ ক্রমেই ভালো হচ্ছে, আর বিশ্ববাসী সেটি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছে। তানা হলে চীনা ওয়াইনের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সেটি সম্ভব হত না। আর অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ নিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কেবল ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইডেই গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। আগামী দিনে যা আরো বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত