ভাবী ছিলেন সংস্কৃতিমনা, হয়ে গেলেন ভাবধারার!

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০১৬, ১৪:০৮

প্রতিকি ছবি

একটা শহরের লোকজন তাদের বউদের নিয়ে ভয়ংকর রকম চিন্তিত! শুনতে গল্প মনে হলেও একদম বাস্তব ঘটনা।

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে ঠিক কতজন বাংলাদেশি থাকে আমার জানা নেই। তবে গতকাল আমি এই শহরটিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। দু’জন চমৎকার মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। এরা দুইজনই বাংলাদেশি। দীর্ঘদিন ধরে ফিনল্যান্ডে থাকছেন তারা। কেউ পাঁচটা রেস্টুরেন্টের মালিক তো কেউ চারটা! তাদের ধারনা অনুযায়ী শহরটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক।

কোন কিছুর অভাব নেই এই দুইজনের। থাকার কথাও না, হেলসিঙ্কির মতো শহরে যাদের চার পাঁচটা করে রেস্টুরেন্ট থাকে, তাদের খুব একটা কিছুর অভাব থাকার কথা না। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দিনকাল তাদের ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু গত তিন বছর ধরে পুরনো শহরটি তাদের কাছে কিছুটা অন্য রকম ঠেকছে!

হঠাৎ করেই এই শহরে থাকা বাংলাদেশি ভাবীদের (যারা ভাবী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত না, তাদের জন্য বলে রাখি- বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা সাধারণত সবাই সবাইকে ভাই বলেই সম্বোধন করে। মামা, চাচা বা এই ধরনের সম্পর্ক গুলো সেই অর্থে এখানে কাজ করে না। ৬৫ বছরে একজন বৃদ্ধকে এখানে থাকা ২০ বছরের যুবক সাধারণত ভাই বলেই সম্বোধন করে, তো সেই অনুযায়ী এদের স্ত্রী'রা ভাবি হিসেবেই পরিচিতি পায়। এই সংস্কৃতি দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের মাঝে প্রচলিত); তো হেলসিঙ্কি শহরে থাকা ভাবীদের মাঝে গত কিছুদিন ধরেই একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে!

যেই ভাবী হয়তো নিয়মিত গান গাইতেন, শহরের যে কোন ধরনের বাংলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিত থাকতেন; একুশে ফেব্রুয়ারি কিংবা নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিজ থেকেই সবাইকে আমন্ত্রণ করতেন; সেই ভাবিটিই হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়ে হিজাব পড়া শুরু করেছেন। হিজাব পড়া দোষের কিছু নয়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনিই আবার গান, বাজনা থেকে শুরু করে সব ধরনের দেশীয় সংস্কৃতিকে খারাপ বলছেন! অথচ এই কিছু দিন আগেও তিনি ছিলেন চমৎকার সংস্কৃতি মনা!

শুধু এক জনের ক্ষেত্রে না, হেলসিঙ্কি শহরের অনেকের ক্ষেত্রেই নাকি এমনটা ঘটছে। এই ভাবীরা শুধু যে নিজেরা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছেন, তাই না; তারা তাদের উঠতি বয়সের সন্তানদেরও বাধ্য করছেন এই ভাব ধারায় পরিচালিত হতে!

যারা আমাকে এই তথ্য দিয়েছেন, তারা নিজেরাও এখন নিজেদের বউদের নিয়ে উদ্বিগ্ন! তারা আমাকে জানিয়েছেন তারা নিজেরা ধর্ম পালন করেন এবং তাদের বউ সন্তানরাও সেটা পালন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা আমাকে যেই তথ্য দিয়েছেন, সেই তথ্য শুনে আমার চোখ কপালে উঠার জোগাড়!

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি ভাবধারার মানুষজন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী; তারা এই সব শহরে পরিবার পরিজন নিয়ে দলে দলে যোগ দিচ্ছে! এই মানুষ গুলো এতদিন এই শহরে মসজিদ কেন্দ্রীক তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করে আসলেও এখন তারা ভিন্ন পথ বেঁছে নিয়েছে। এখানকার বাঙালি পুরুষ মানুষ, যাদেরকে তারা নিজেদের দলে টানতে পারছে না;তারা চেষ্টা করছে তাদের বউদেরকে এই দলে ভেড়াতে। আর এই ক্ষেত্রে তারা ব্যাবহার করছে নিজেদের বউদের। আগেই বলেছিলাম ভাবী কালচারের কথা। সাধারণত বিদেশের শহরে গুলোতে বাংলাদেশি ভাবীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখে বা কথা বলে। তো জঙ্গি মনভাবের মানুষ গুলো নিজেদের বউদের লেলিয়ে দিচ্ছে অন্য মানুষদের বউদের এই পথে আনতে!

যেহেতু বিদেশে থাকা বেশীরভাগ লোকজন এমনিতেই ধর্মভিরু, বিদেশের মতো একটা ভিন্ন সংস্কৃতিতে থাকার কারনে তারা চেষ্টা করে নিজেদের ধর্ম বা সংস্কৃতি টুকু পালন করতে। একই ভাবে এরা উদার এবং প্রগতিশীল ! কিন্তু যখন একদল মহিলা, অন্য মহিলা গুলোর মগজ ধোলাই করার চেষ্টা করছে, তখন ভাবীরা খুব সহজেই এই ফাঁদে পা দিচ্ছে। এর ফলে তাদের বাচ্চা গুলোও এই রকম হয়ে যাচ্ছে ! বাংলাদেশ হলে না হয় জামাইরা বউদের এই ধরনের ফাঁদে পা না বাড়ানোর জন্য জোরাজোরি করতে পারত! ফিনল্যান্ড যেহেতু খুবই লিবারেল কান্ট্রি, তাই তাদের সাথে জোরাজোরিও করা যাচ্ছে না! করলে আবার পুলিশ কেস হয়ে যেতে পারে। তাই হেলসিঙ্কি শহরের উদার মানসিকতার, সংস্কৃতি মনা মানুষ গুলো এখন তাদের বউদের নিয়ে মহা চিন্তার মাঝে আছেন।

তারা আমাকে জানিয়েছেন, গত পাঁচ ছয় মাসে এরা তাদের কর্মকাণ্ডের পরিধি আরও বাড়িয়েছে! অনেক ভাবী যারা আগে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তারা এখন এই ভাবধারার হয়ে গেছে! তারা আমাকে জানিয়েছেন এই জঙ্গি ভাবধারার মানুষ গুলো নিজেরা যেই দেশে থাকে, সেই দেশে এরা শুধু নিজেদের আদর্শ বিস্তার করে আর জঙ্গি কার্যক্রম করে অন্য দেশে! তাই যেই দেশে তারা থাকে সেই দেশে তারা জঙ্গি হিসেবে বিবেচিত হয় না। পুলিশও তাই তেমন গা করে না! বাংলাদেশি এই সব মানুষ গুলোর নেটওয়ার্ক নাকি লন্ডন-প্যারিস-স্টকহোম-হেলসিঙ্কি-কুয়ালামপুরে সব চাইতে বেশি!

এই কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠার জোগাড়! আমি তখন সমীকরণ মেলাচ্ছিলাম। গুলশান হামলায় জড়িত প্রায় সবাই কোন না কোন ভাবে মালয়েশিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এই সব মানুষ গুলো কি তাহলে এভাবেই তাদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে! বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে ছেলেপেলেদের আগে মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছে; এর পর লন্ডন, হেলসিঙ্কি কিংবা প্যারিস থেকে এই সব লোকজন গিয়ে কম বয়েসি এই সব ছেলেপেলেদের মগজ পুরোপুরি ধোলাই করে, জঙ্গি দিক্ষা দিয়ে আবার দেশে পাঠাচ্ছে নাতো জঙ্গি হামলার জন্য?

কেউ সংস্কৃতি মনা হলে বা গান বাজনা করলেই যে পরবর্তীতে জঙ্গি হবে না, ব্যাপারটা এমনও না। বিষয়টা হচ্ছে কোন কিছুর হঠাৎ পরিবর্তন মানেই কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ করে এতো পরিবর্তন আসলে ভালো কিছু না বলেই মনে হয়!

আমি ভেবেছিলাম এই নিয়ে পত্রিকায় লিখবো। পরে ভাবলাম আগে বরং ফেসবুকে লিখে সরাসরি আপনাদের জানাই। আপনারা এই বিষয়টি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন, নিজেদের মতামত জানান। আমি এই কনসেপ্টের সাথে একদম পরিচিত ছিলাম না। গতকাল এই দুইজন মানুষের কাছ থেকে এই ব্যাপারটা জানতে পেরে আমি অবাকই হয়েছি! তারা আমাকে জানিয়েছেন এটি কেবল তাদের মতামত না, পুরো হেলসিঙ্কি শহর জুড়ে এই আতঙ্ক এখন বিরাজমন। আমি লেখাটা আমার খুব প্রিয় একজন মানুষকে ট্যাগ করছি। ভাবলাম উনার জানা থাকলে মন্দ হয় না। 

আমিনুল ইসলাম এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত