শামস-উল ইসলামের এক অনন্য উদ্যোগ ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০১৮, ১৮:২৯

দেশের সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্যই এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হবে। এসব কর্নারে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা, গুরত্বপূর্ণ ছবিসহ বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকিত নানান ডকুমন্টেস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহে রাখা হবে।

জানা যায়, গত বছর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আখতার জাহান সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের প্রস্তাব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ শিক্ষার্থীদের জানাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি এই প্রস্তাব পাঠান। তার এই প্রস্তাবের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে মতামত জানতে চায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে।

গত বছর ৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সালমা জাহানের ওই চিঠির পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের বিষয়ে মত দেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পাঠানো প্রতিবেদনের পর সম্প্রতি দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।

বঙ্গবন্ধু কর্ণারের ধারণা
বঙ্গবন্ধু কর্ণারের সর্বপ্রথম ধারণা আসে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের নিকট হতে। তিনি ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সপ্তম তলায় বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেন। যে কেউ এসে এখানে অবস্থিত এমন কর্ণার দেখে বিস্মিত হন। কেউ কেউ নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নেন কর্ণারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির সাথে। জাতির পিতাকে ভালবেসে এই কর্ণারটি তৈরি করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম।

প্রতিদিন কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো যায় সেই ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু কর্ণারের ধারণা। কর্ণারটি সাজানো হয়েছে বই, ছবি ও ভাস্কর্য দিয়ে। সেখানে আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৪০০ বই। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবির অ্যালবাম। বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ১০ ও ৫ টাকার দুটি বড় নোট। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক বড় একটি ছবি, যাতে আহ্বান করা হয়েছে ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে। এইখানে কিছুক্ষণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে’। বঙ্গবন্ধু কর্ণারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ১০০ কেজি ওজনের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। যা দেখলে মনে হবে, পাশেই আছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের নিজ উদ্যোগে এটি দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কর্ণার। এর আগে তিনি আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে আরও একটি বঙ্গবন্ধু কর্ণার তৈরি করেছিলেন।

২০১৬ সালের আগস্ট থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। এর আগে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ব্যাংকারদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে নিজ কর্মস্থল অগ্রণী ব্যাংক ও তার আগের কর্মস্থল আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকসহ মোট তিনটি পৃথক স্থানে জাতির জনকের মুরালসহ ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করেছেন তিনি । তাঁর এই আইডিয়া থেকে সম্প্রতি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গত ২৬ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। জাতির জনকের প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও ভালোবাসা থেকেই তিনি সর্বপ্রথম উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিলেন।

কথা হয় বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্যোক্তা অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সাত বছর আমি দেশের বাইরে ব্যাংকিং করেছি। ক্যারিয়ারের ১৬ বছর কাটিয়েছি চট্টগ্রামে। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি আমি জিএম পদোন্নতি পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে আসি। সে সময় আমাকে হেড অব আইডি করা হয়। একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। জিএম পদটি দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি সম্মানজনক পদ হিসেবেই স্বীকৃত। সিলেট যাওয়ার পর আমার মনে হলো, দেশ স্বাধীন না হলে আমি জিএম হতে পারতাম না। হয়তো হাবিব ব্যাংকের এসপিও পর্যন্ত যেতে পারতাম। যার জন্য দেশটি স্বাধীন হলো, আমি জিএম হতে পারলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর সম্মানে কিছু করার ইচ্ছে হলো। সিলেট অঞ্চলে অগ্রণী ব্যাংকের তিনটি জোনাল অফিস আছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের অফিসটি বেশ বড়সড়। তখন আমি কার্যালয়টির ফাঁকা জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ করার প্রস্তাব দিলাম। একটি বুক সেলফ কিনে দিলাম এবং কর্মকর্তাদের বললাম, বঙ্গবন্ধুর ওপর যত বই লেখা হয়েছে, সবগুলো সংগ্রহ করে সেলফে জমা করতে। পরে নিজ উদ্যোগে ২০১০ সালে বেশকিছু বই কিনে সেলফ সাজিয়েছি। এভাবেই অগ্রণী ব্যাংকের মৌলভীবাজার কার্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এমডি হয়ে যখন আনসার-ভিডিপি ব্যাংকে গেলাম, তখন মনে হলো ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় বিস্তৃত পরিসরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করা সম্ভব। এর মধ্যেই মাথায় আসল, বঙ্গবন্ধুর একটি মুরাল স্থাপনের।

আনসার-ভিডিপি ব্যাংকে যোগদানের সময় সেটির অবস্থাও খুবই নাজুক ছিল। আর্থিকভাবে ভঙ্গুর ব্যাংকটির উদ্যোগে বিস্তৃত পরিসরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করা সহজ ছিল না। আনসার-ভিডিপি নামে যে একটি ব্যাংক আছে, মানুষ সেটিও জানত না। কিন্তু ব্যাংকটির এমডি পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বোচ্চ আন্তরিকতার মাধ্যমে কাজ করেছি। এর ফলে আনসার-ভিডিপি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে সফলভাবে বঙ্গবন্ধুর মুরালসহ একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কর্ণার নিয়ে তার কথা বলা সুযোগ হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। সেই গল্পটাও শোনালেন সামস্ উল ইসলাম। তিনি জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণারে’র দুটি ছবি দিয়েছিলেন। তিনি আনন্দচিত্রে ছবি দুটি গ্রহণ করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় সারাদেশে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপনের নির্দেশ এসেছে। এর মাধ্যমে আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি হৃদয়ে যে আনন্দ পেয়েছি, তা কোনো শব্দ দিয়ে, কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। তবে সব মিলেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হিমালয় জয় করেছি। সরকারের এই উদ্যোগটির ব্যপারে তিনি বলেন, খুবই খুশি লাগছে নিজের কাছে ,আমার একটি স্বপ্ন জাতীয় ভাবে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত