হাম

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৭, ১৪:২৫

সাহস ডেস্ক

হাম একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ক্ষুদ্র সংক্রামিত কণাসমূহ শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তৃতি ঘটায়। প্রতিবছর এই রোগে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয়। এটি মূলত বিশ্বব্যাপী শিশু রোগ। তা ছাড়া কিশোর ও বয়স্করাও এতে আক্রান্ত হয় যার জন্য এর বিস্তার রোধ একান্ত জরুরি। যদিও এই ভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকরী কোনো ওষুধ নেই তথাপি টিকা দানের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হাম-এর লক্ষণ
ক) জ্বর, অসুস্থতাবোধ, হাঁচি-কাশি, প্রদাহ ও গলা ব্যথা।
খ) জ্বরের সতর্কীকরণ ঘটনার ৩ থেকে ৪ দিন পর শরীরে লালচে ফুসকুড়ি বা র‌্যাস (Rash) উঠে যা প্রথমে মুখমণ্ডলে ও কানের পেছনে হয়। তারপর বুকে, হাত-পা, হাতের তালু ও পায়ের নিচে দেখা দেয়। ফুসকুড়িগুলো প্রথমে আলপিনের মাথার সমান ও তারপর একাঙ্গীভূত হয়ে বড় লাল দাগে পরিণত হয়।
গ) মুখের ভেতর ‘কপলিকস স্পট’ (Koplik’s Spot) নামক বিশেষ ধরনের দাগ হয় যা সাধারণত শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ২ দিন আগে হয় এবং ১ থেকে ৪ দিন থাকে। এটি হাম রোগের নিশ্চিত চিহ্ন। তা ছাড়াও সারা শরীরের লিম্ফ গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও প্লীহা (Spleen) হতে পারে।
ঘ) এইডস রোগীদের ক্ষেত্রেও হাম জটিলভাবে দেখা দেয় যাতে মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই বেড়ে যায়।
ঙ) এই রোগ শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ৪ দিন আগে ও ২ দিন পর পর্যন্ত ছড়ানোর প্রকোপ থাকে।

হাম রোগের জটিলতা
ক) স্নায়ু বিষয়ক জটিলতা : খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া এবং ‘এনকেফালাইটিস’ নামক মস্তিষ্কের প্রদাহ।
খ) শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা ‘ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া’ অথবা ‘ব্রঙ্কিওলাইটিস’ নামক শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ।
গ) খাদ্যনালীর প্রদাহ : মুখের কোণায় ঘা (Stomatits), ডায়রিয়া বা পেটের পীড়া হওয়া।
ঘ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশন এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ক) রক্তের সার্বিক পরীক্ষা-সার্বিকভাবে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যেতে পারে। যদি শ্বেতকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে সেই রোগী অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
খ) সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা এখানে মূলত কমপ্লিমেন্ট ফিকজেশন (Complement Fixation) এবং হিমেগ্লুটিনেশন ইনহেভিশন (Haemagglutination Inhibition) পরীক্ষা করা হয়।

হাম রোগের চিকিৎসা
ক) প্রাথমিক চিকিৎসা : জ্বর থাকা পর্যন্ত বা গাঁয়ে ফুসকুড়ি ওঠা পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রামে থাকা, সুষম খাবার খাওয়া ও অন্যান্য শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখা যাতে অন্যদের সংক্রমিত করতে না পারে। শিশুদের জন্য ভিটামিন-এ ক্যাপসুল (২ লক্ষ ইউনিট) বিষাদ গ্রস্ততা কমায়।
খ) যদি জ্বর থাকে তাহলে ট্যাবলেট প্যারাসিটামল ভরা পেটে ৩ বার অথবা শিশুদের মাত্রানুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গ) শরীরের চুলকানি কমানোর জন্য প্রোমিথাজিন (Promethazine) ১০-২৫ মি.গ্রা. করে দিনে ২-৩ বার দেয়া যেতে পারে।
ঘ) জটিলতার চিকিৎসা : ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হলে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।

হাম রোগ প্রতিরোধের উপায়
টিকা দেয়ার মাধ্যমে এই রোগ পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সঠিক সময়ে টিকা দিয়ে এই ভয়াবহ শিশুমৃত্যু রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমাদের দেশের সরকার ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমানে ৯ মাস বয়সের শিশুদের টিকা প্রদান করায় হাম-এর প্রকোপ কমে এসেছে। টিকা দেয়ার মাত্রা ০.৫ এম.এল চামড়ার নিচে ৯ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের দেয়া হয়।

গর্ভবতী মা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াদের ক্ষেত্রে টিকা দেয়া উচিত নয়। কিন্তু এইচআইভি বহনকারী শিশু ও রোগের লক্ষণবিহীন এইচআইভি বহনকারদের ক্ষেত্রে টিকা দিলে পরবর্তী ঝুঁকি কমে যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত