“ভিনদেশী দালালদের হাত থেকে বাংলা চলচ্চিত্র রক্ষা করা জরুরী”

প্রকাশ : ২২ মে ২০১৬, ১৩:১৫

তাকে ফিল্মের অভিনেতা বা টেলিভিশনের অভিনেতা বলে আলাদাভাবে উল্লেখ করার সুযোগ নেই। একাধারে বাংলা চলচ্চিত্র আর টেলিভিশনের ব্যস্ততম নবীন অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম সাইফ খান। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী সাইফ খান পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন চলচ্চিত্রে। তার অভিনয় ইতিমধ্যে গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করে নিয়েছে দর্শক শ্রেণির কাছে। আজকে সাহসের মুখোমুখি অভিনেতা সাইফ খান।
 
সাহস: কেমন আছেন?
সাইফ খান: ভালো আছি।

সাহস: বর্তমান ব্যস্ততা কোন কোন কাজ নিয়ে?
সাইফ খান:  সম্প্রতি সেলিম আল দীন স্যারের ‘যৈবতী কন্যার মন’ সিনেমার শ্যুটিং শেষ করলাম। জসিমুদ্দিন জাকিরের ‘পরকীয়া’ আর পরিচালক রফিকুল্লাহ সেলিমের ‘জনক’ সিনেমার কাজ চলছে। পাশাপাশি বেশকিছু টেলিভিশন একক টেলি প্রোডাকশনের কাজ চলছে। বিটিভি আর মাই টিভির দু’টি ধারাবাহিকে অভিনয় করছি। পাশাপাশি ফেরদৌস হাসান রান ভাই পরিচালিত ‘এক পা দুই পা’ ধারাবাহিকে কাজ করছি। এরমধ্যে চ্যানেল আই এর দু’টি টেলিফিল্ম করলাম ঈদের জন্য।

সাহস: আপনার কাজের ক্ষেত্রে টেলিভিশন নাকি সিনেমা কোনটাকে প্রাধান্য দেন?
সাইফ খান: আমি নিজেকে একজন শিল্পী ভাবতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর সে জন্যই ভিজ্যুয়াল মাধ্যম হিসেবে নাটক সিনেমা বিজ্ঞাপন মডেলিং সব শাখাকেই প্রাধান্য দেই। কেননা একেক ঘরনায় কাজের একেক আনন্দ একেক অভিজ্ঞতা। তবে ফিল্মের প্রতি ভালোবাসাটাই সবচেয়ে তীব্র, যেহেতু শুরুটা ফিল্মের মাধ্যমে।

সাহস: নতুন সিনেমায় আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলুন?
সাইফ খান:  ‘যৈবতী কন্যার মন’ সেলিম আল দীনের বিখ্যাত সাহিত্য। আমি এই ফিল্মে যাত্রাপালার খুব বিখ্যাত অভিনেতা জাহাঙ্গীর ফিরোজ চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি সত্যি সৌভাগ্যবান যে এতো অল্প সময়ে সেলিম স্যারের কালজয়ী উপন্যাসের চরিত্রায়নের সুযোগ পেয়েছি। আর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অন্য সিনেমার ক্ষেত্রে বলবো নাচেগানে ভরপুর বাণিজ্যিক সিনেমা বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই।

সাহস: মিডিয়ায় আপনার পথচলা শুরু কিভাবে?
সাইফ খান: পরিচালক আবু সুফিয়ান ভাইয়ের হাত ধরে প্রথম সিনেমায় আসি আমি। আমার প্রথম সিনেমা ‘বন্ধু মায়া লাগাইছে’ এর পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন সুফিয়ান ভাই। তবে চলচ্চিত্রে আসার আগে মঞ্চ নাটকে যুক্ত ছিলাম। 

সাহস: সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে মঞ্চের অভিজ্ঞতা কতোটা জরুরী বলে মনে করেন?
সাইফ খান: মঞ্চ আর সিনেমার ফর্মেট ভিন্ন। কিন্তু যেহেতু অভিনয় একটা চর্চার বিষয় তাই নিজেকে অভিনেতা হিসেবে তৈরি করতে মঞ্চকে জরুরী বলে মনে করি। কারণ আমাদের দেশে ফিল্ম বেইজ অভিনয় শেখার কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান নেই।
  
সাহস: অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে কার কার অভিনয় প্রভাবিত করে?
সাইফ খান: অভিনয়ে আমাকে কেউ প্রভাবিত করেনা। তবে অনেকের অভিনয় আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় আরও ভালো কিছু করতে। যেমন সালমান খান, হুমায়ূন ফরিদী, নায়করাজ রাজ্জাক, শহিদুজ্জামান সেলিম ভাই এর মতো অভিনেতাদের কাজগুলো দেখে দেখে আমি নিজেকে ঝালাই করি। বলতে পারেন তারা আমার পরোক্ষ শিক্ষক। তাঁদের মতো আরও অনেকেই আছে যাঁদের অভিনয় দেখে আমি অভিনয় শিখি। 

সাহস: আমাদের দেশিয় সিনেমায় কি কাঙ্খিত কোনো পরিবর্তন আসছে? 
সাইফ খান: দেশিয় সিনেমায় কাঙ্খিত পরিবর্তন আসছে বলে আমি মনে করিনা। কারন আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন যৌথ প্রতারণার জালে বন্দী। এভাবে নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকে শক্ত অবস্থানে নেওয়া সম্ভব না। কলকাতা ফিল্ম ইন্ড্রাষ্টি থেকে এসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছে কিছু এদেশীয় দালাল। তারা আমাদের ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রির কফিনে শেষ পেরেক মারার পথ তৈরি করছে।

সাহস: বর্তমান সিনেমা মাধ্যমে নতুনদের কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেন?
সাইফ খান: উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আমি মনে করিনা। তবে সিণ্ডিকেট কেন্দ্রিক এফডিসির পলিটিক্স থেকে যদি বেরিয়ে এসে সবাই নিজের লাভের হিসেব করার আগে সামগ্রিক সিনেমার লাভের বিষয়টা নিয়ে ভাবে তবে খুব সহজেই সব সমস্যার সমাধান এসে যাবে।

সাহস: সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আরো শক্তিশালী করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন?
সাইফ খান: কয়টা পয়েন্ট নিয়ে কথা বলবো ভাই? সারা অঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেবো কোথা? ভালো গল্প চাই, মেধাবী ডিরেক্টর চাই, মানসম্পন্ন সিনেমার পরিমাণ বাড়াতে হবে, সিনিয়র শিল্পীদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে, সিনিয়র প্রডিউসরদেরকে পুনরায় লগ্নীতে আসতে হবে, আর এইসব করা গেলেই আমি মনে করি আমাদের দর্শকরা পুণরায় প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসবে। তবে সিনিয়র শিল্পীদেরকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনা জরুরী। কারণ তারাই এই ইন্ড্রাষ্টির মূল শক্তি। বাংলা সিনেমার উত্থানের জন্যই তাদেরকে মূল্যায়ন করা দরকার। আর আমাদের মতো নবীনরা সিনিয়রদের সাথে কাজ করতে করতেই পরিপক্ক হয়ে উঠবো।

সাহস: বর্তমান সময়ের নবীন শিল্পীদের মধ্য থেকে রাজ্জাক, আলমগীর, সাবানা, কবরী, হুমায়ুন ফরিদী, সুবর্ণা মুস্তফা বেরিয়ে আসছেনা কেন? সীমাবদ্ধতা কোথায়?
সাইফ খান: বিচ্ছিন্নভাবে আমার আগের প্রশ্নগুলোর মধ্যেই এই উত্তরটা আছে। সিনিয়র অভিনেতাদের সাথে কাজ করার সুযোগ না পেলে আমাদের মতো নবীনরা শিখবে কিভাবে? আর ভালো গল্প আর ভালো ব্যানারের কাজ না করলে একজন শিল্পী দর্শকের কাছে পৌছাবে কিভাবে? আমি মনে করি সামগ্রিকভাবে মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মান হলেই মানসম্পন্ন শিল্পী বেড়িয়ে আসবে।

সাহস: নবীন ডিরেক্টরদের কাজের মান নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
সাইফ খান: নবীনরা অবশ্যই ভালো আর নতুন কিছু করতে চাইছে। তবে সিনেমা নির্মাণ শিখতে গেলে সিনেমার নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থেকেই শেখা উচিত। কারণ নাটক বানিয়ে সিনেমার প্রাকটিস করা যায়না। কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ আমার লক্ষ নয়। আমি বাস্তব সত্যটা বলছি মাত্র। কেউ সিনেমা বানাতে চাইলে তাকে মেইন স্ট্রিম সিনেমায় সহকারী হিসেবে কাজ করে আসা উচিত। কারণ অভিনেতা হওয়া সহজ কিন্তু ডিরেক্টর হওয়াটা অনেক কঠিন। 

সাহস: আমাদের সিনেমার গল্প ভীনদেশি গল্প বা সিনেমা থেকে চুরি করার যে প্রবণতা এই মেধাচুরি নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
সাইফ খান: যারা নিজেরা মেধাশুন্য তারা অন্যের মেধা চুরি করবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার, গুণী অভিনয় শিল্পী, প্রপার টেকনোলোজি সবকিছুই আছে কিন্তু কেবল সবকিছুকে সমন্বয় করে ব্যবহার করার মতো মেধা খুব কম। আর একারনেই সস্তা চুরির পথ খুঁজে নিচ্ছে কেউ কেউ। এটা বাংলা সিনেমার জন্য আত্মঘাতী।
 
সাহস: কেবল টাকা হলেই কি চলচ্চিত্র মাধ্যমে প্রযোজনায় আসা উচিত? নাকি টাকার সাথে আরো কিছু বোধ বা যোগ্যতা থাকা উচিত?
সাইফ খান: টাকার পাশাপাশি ভালো পরিচালক আর ভালো গল্প বোঝার ক্ষমতা থাকা জরুরী।
 
সাহস: কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
সাইফ খান: আসলে আমি অভিনয় করতেই ভালোবাসি। তাই সব চরিত্রই আমার কাছে সাচ্ছন্দের আর আনন্দের।  

সাহস: অভিনেতা সাইফ খানকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি? 
সাইফ খান: খুব বেশি কিছু চাইনা, কেবল ‘অভিনেতা সাইফ খান’ এই নামটা নিয়ে বাঁচতে চাই আর এই নামটা নিয়েই মরতে চাই। আমি মারা গেলেও যেন মানুষ ‘অভিনেতা সাইফ খান’ মারা গেছে। মানুষের কাছে নিজের এই পরিচয়টা পৌছে দিতে চাই আমার অভিনয় দিয়ে।

সাহস: বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি? 
সাইফ খান: আগে বাংলা চলচ্চিত্রের যে অসুখগুলো আছে সেগুলো সেরে উঠুক। চলচ্চিত্র যদি সুস্থ না হয় তবে কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো? অসুস্থ মাধ্যম নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়না। আপাতত বাংলা চলচ্চিত্রের সুস্থতা কামনা করছি।

সাহস: আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য সাহসের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
সাইফ খান: সাহস ও সাহসের সকল পাঠককে আমার শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত