‘চুরি করতে করতেই একদিন আমাদের নির্মাতারা ক্রিয়েটিভ হয়ে উঠবে’

প্রকাশ : ১৫ মে ২০১৬, ১৪:০৬

এই সময়ের টেলিভিশন বিজ্ঞাপন আর নাটকের জনপ্রিয় মুখ কাজী উজ্জ্বল। তিনি মূলত ছোট পর্দার অভিনেতা। তবে তিনি অল্প কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। সাধারণত হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী উজ্জ্বল। ক্লাস ফোরে থাকতে এক ক্লাস উপরের ছাত্র মামার সাথে মিলে স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে দুজনে মিলে সুকুমার রায়ের লেখা ‘ষোল আনাই মিছে’ কবিতাটি নাটিকা আকারে মঞ্চস্থ করেছিলেন কাজী উজ্জ্বল। সেখানে তার চরিত্রটি ছিলো মাঝির। আর এভাবেই অভিনয়ের শুরু। তারপর থেকে স্কুল কলেজের সব আয়োজনেই ছিলো সরব উপস্থিতি। আর এখন সেই স্কুল কলেজ আর থিয়েটার পাড়ার গণ্ডি পেড়িয়ে জাতীয় ভাবেই জনপ্রিয় এই গুণী অভিনয় শিল্পী।
আজকে সাহসের মুখোমুখি কাজী উজ্জ্বল।

সাহস: কেমন আছেন?
কাজী উজ্জ্বল: অসম্ভব রকম ভালো আছি, কারন জীবনে যা চেয়েছি তা পেয়েছি, মানে খ্যাতি পেয়েছি।

সাহস: বর্তমান ব্যস্ততা কোন কোন কাজ নিয়ে?
কাজী উজ্জ্বল: ঈদের নাটক প্রচারিতব্য ধারাবাহিক আর তনিম রহমান অংশু আর গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ফিল্মের শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ততা।

সাহস: মিডিয়ায় আপনার পথ শুরু?
কাজী উজ্জ্বল: প্রথম পর্দায় আসি ২০০০ সালে পুলিশ আর ডা: চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। তারপর অমিতাভ রেজার পরিচালনায় বাংলালিংকের আলাল ও দুলাল এবং প্রাণ মিল্ক ক্যান্ডি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ফ্রুটিকা সহ বেশকিছু বিজ্ঞাপন দর্শকদের কাছাকাছি পৌঁছে দেয় আমাকে।

সাহস: ভিজুয়াল মাধ্যমে অভিনয়ের জন্য কি মঞ্চ ব্যাকগ্রাউন্ড জরুরী বলে মনে করেন? কেনো জরুরী?
কাজী উজ্জ্বল: অবশ্যই জরুরী। কারন মঞ্চ হচ্ছে অভিনয়ের স্কুল। যারা অভিনয়ে আসছে তাদের যদি স্কুলিং না থাকে তবে তারা মিডিয়ায় খুব শর্ট টাইমে উপরে উঠে আবার শর্ট টাইমেই বিদায় নিচ্ছে। কারন গানের স্বরলিপি না শিখে আবোলতাবোল গেয়ে সাময়িক সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়া সম্ভব কিন্তু এভাবে রুনা লায়লা বা মান্না দে হওয়া যায়না। অভিনয়টাও তেমনি। সবাই তো আর নজরুল রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্র হবেনা।

সাহস: আমাদের টিভি নাটকে কি কাংখিত পরিবর্তন আসছে? 
কাজী উজ্জ্বল: অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে না। কারন ভালো কাজ করতে হলে কিছু এক্সপেরিমেন্ট অবশ্যই করতে হবে, আর এক্সপেরিমেন্ট করতে হলে বাজেট একটা জরুরী বিষয়। কিন্তু আমাদের নাটক বাজেট সঙ্কটে ভুগছে। একজন ভালো ডিরেক্টর একটা সিঙ্গেল নাটক চাইলেও চারদিন শ্যুটিং করে বেষ্ট আউটপুট আনতে পারছেনা। বাজেটের কারনে তাকে চারদিনের কাজ দুইদিনে করতে হচ্ছে আর চারদিনের কাজ দুইদিনে করলে কখনোই শতভাগ আউটপুট বের করে আনা সম্ভব না। 

সাহস: বর্তমান টেলিভিশন মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেন?
কাজী উজ্জ্বল: ঐ সেই পুরানো কথা, বাজেট। বাজেটই সবচেয়ে বড় বাঁধা, আর বিজ্ঞাপন নীতিমালাটাও জরুরী। ভালো স্ক্রিপ্ট আর শিল্পীদের সময়টাও জরুরী।

সাহস: সুস্থ ধারার টেলিভিশন মাধ্যম নির্মাণ করতে আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন?
কাজী উজ্জ্বল: বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে চ্যানেলগুলোর চলার যে ব্যবস্থা সেটার পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন এই মুহুর্তে একটা চ্যানেলের একটা জনপ্রিয় অনুষ্ঠান দেখছে এক লক্ষ সেট থেকে মানে এইগুলো যদি পে চ্যানেল হতো এবং পার আওয়ার যদি এক টাকা পে হতো তবে চ্যানেল এক ঘন্টায় পেতো এক লক্ষ টাকা তাহলে চ্যানেলের বিজ্ঞাপন নির্ভরতা কমতো এবং ভালো বাজেটে ভালো কাজ নির্মাণ হতো। পে চ্যানেল হওয়াটা জরুরী।

সাহস: বর্তমান সময়ের নবীন শিল্পীদের মধ্য থেকে আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরিদি, সুবর্ণা মুস্তফা বেড়িয়ে আসছেনা কেনো? সীমাবদ্ধতা কোথায়? 
কাজী উজ্জ্বল: আসছেনা কে বলছে? তখন দেশে একটা মাত্র চ্যানেল ছিলো, সবাই সেই একটা চ্যানেলই দেখতো কেউ ভালো করলে সহজেই দর্শকপ্রিয়তা পেতো। আর এখন ২০/২৫টা চ্যানেল, এতো চ্যানেল কেই বা দেখে? তবুও জনপ্রিয়তা নেই তাতো না। সজল, অপুর্ব আর নিশোরা তো আসছে। পাশাপাশি ফারহানা মিলি, জয়া আহসান, তিশা, নাদিয়া আর মমরা তো আসছে। 

সাহস: নবীন ডিরেক্টরদের কাজের মান নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
কাজী উজ্জ্বল: নবীন ডিরেক্টর হচ্ছে দুই ধরনের। এক কাজ না জেনে, কিছু টাকা ম্যানেজ করে আর একজন ভালো সিনেমাটোগ্রাফার নিয়ে চলে আসছে ডিরেকশনে। এরা হয়তো দুই একটা ভালো কাজ করছে সিনেমাটোগ্রাফারের কারনে। আর যারা এডি/চিফ এডি হয়ে আসছে বা পড়াশোনা করে আসছে তারা কিন্তু ভালো কাজ করছে। অসম্ভব ভালো কাজ করছে তারা। 

সাহস: আমাদের নাটক সিনেমার গল্প ভীনদেশি গল্প বা সিনেমা থেকে চুরি করার যে প্রবনতা এই মেধাচুরি নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
কাজী উজ্জ্বল: চুরি করতে হলে পরিশ্রম করতে হয়, প্রচুর পড়তে হয়, প্রচুর সিনেমা দেখতে হয়। এটা আসলে একটা কম্পিউটার সেটআপ দেয়ার মতো। যতো পড়বে যতো সিনেমা দেখবে তাদের ভেতর ক্রিয়েটিভ কাজের আগ্রহ বাড়বে। চুরি করা ভালোনা তবে জ্ঞান চুরিতে পাপ নেই। এভাবে চুরি করতে করতে হয়তো এই চোরেরা একদিন ক্রিয়েটিভ মেকার হয়ে উঠবে।

সাহস: কেবল টাকা হলেই কি চলচ্চিত্র মাধ্যমে প্রযোজনায় আসা উচিত? নাকি টাকার সাথে আরো কিছু বোধ বা যোগ্যতা থাকা উচিত?
কাজী উজ্জ্বল: টাকা হলে অনেক ব্যবসাই করা যায় কিন্তু প্রডিউসে আসতে হলে আমার মনে হয় টাকার পাশাপাশি শিক্ষা, নৈতিকতা, সাহিত্যবোধ, প্রেম ও দেশপ্রেম থাকা জরুরী।

সাহস: কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয়ে সাচ্ছন্দবোধ করেন?
কাজী উজ্জ্বল: বাবা, টিচার, নেগেটিভ চরিত্র, রাগি ধরণের বাবার চরিত্র আরেকটা চরিত্র পছন্দ করি তবে সেটা এখনো পাইনি, পেলে জানাবো...হাহাহাহা।

সাহস: অভিনেতা কাজী উজ্জ্বলকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি? 
কাজী উজ্জ্বল: এখন এমন কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে চাই যা আমাকে একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় সন্মান আর এ্যাওয়ার্ড এনে দেবে।

সাহস: বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি? 
কাজী উজ্জ্বল: আমি স্বপ্ন দেখি একদিন ইন্ডিয়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে আমাদের নাটক চলবে তারা আমাদের নাটক দেখে ভালো কিছু শিখবে। অন্তত তারা আমাদেরকে যেইসব একান্নবর্তী পরিবারের গিরিঙ্গি শেখাচ্ছে আমরা তাদেরকে তা শেখাবো না। আর একদিন বাংলা সিনেমা ইরানী সিনেমার মতোই ফিল্মি দুনিয়া জয় করবে সেই স্বপ্ন দেখি।

সাহস: সাহসের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
কাজী উজ্জ্বল: সাহস পত্রিকা ও সাহস পত্রিকার পাঠকদেরকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত