রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৯

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ১৩তম উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আনুষ্ঠিনকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপ-সচিব হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত বছরের ১৬ জুলাই প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে ৪ বছরের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপ উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখনো দায়িত্বে আছেন। আর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ১৩তম উপ-উপাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম একই সঙ্গে দুজন উপ উপাচার্য দায়িত্ব পেলেন।

ড. চৌধুরী মোঃ জাকারিয়া ১৯৮৮ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯২ সালে তিনি একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ১৯৯৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০২ সালে অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পান। এছাড়াও তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সেন্ট এন্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কেমিস্ট্রি’র প্রদর্শক, ২০০০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালযের অনারারি রিডার এবং ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জাপানের নাগোয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র ভিজিটিং প্রফেসারের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোঃ জাকারিয়া এসএসসি থিসিস বিভাগে ১৫ জনের এবং পিএএইচডি থিসিসের ২ জন শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার ছিলেন।

ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন অধ্যাপক জাকারিয়া। ১৯৭৯ সালে তিনি রাজশাহী বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৭৭ রাজশাহী বোর্ডের অধীনে একই বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বিএসসি (সম্মান) পাস করেন। ১৯৮৪ সালে একই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়ে এমএসসি (মাস্টার্স) সম্পূণ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক জাকারিয়া পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলো ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষকতা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অধ্যাপক জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত রাবিতে চ্যান্সেলর মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যের দায়িত্বে আছেন। ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৯৮৯ সালের মার্চ পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসক, ১৯৮৯ সালের মার্চ মাস থেকে একই বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি খুলনা জেলার পিকগঞ্জ উপজেলায় সহকারি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮-২০০০ সাল পর্যন্ত রাবির মন্নুজান হলের হাউস-টিউটর ও প্রোভেস্ট, ২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের
রসায়ন বিভাগের কেমিক্যাল সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ, ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত কেমিক্যাল সোসাইটর সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৪ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাবির নির্বাচিত সিনেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে পালন করেন তিনি।

ছাত্র ও শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বিভাগ অর্জনের জন্য মাধ্যমিক স্কুল বোর্ড বৃত্তি, ১৯৮৩ এর ফলাফলের ভিত্তিতে রাবি থেকে মেধার বৃত্তি, ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের প্রথম পদমর্যাদা অর্জনের জন্য বিশেষ মাননীয় চ্যান্সেলর পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্নাতকোত্তর স্টাডিজের জন্য ওআরএস পুরস্কার এবং ১৯৯৬ সালে সেরা গবেষণা পত্র উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (বিএএএস) পুরস্কার, ২০০০-২০০১ সালে কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ, ২০০৩-১২ সাল পর্যন্ত পদার্থ বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের নিয়মিত সহযোগী সদস্য ও  ২০০৩-০৪ সালে জাপানের নাগোয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ভেনচার বিজনেস ল্যাবরেটরি (ভিবিএল) পুরস্কারে ভূষিত হন।

দায়িত্ব গ্রহণের সময় অধ্যাপক জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড সুচারুভাবে পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় উপ-উপাচার্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। সেই গুরু দায়িত্বটা আমার উপর এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্ব আমার উপর আসবে আমি সর্বোচ্চ দিয়ে তা পালন করার চেষ্টা করব।

উপাচার্য এম আবদুস সোবহান অধ্যাপক জাকারিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজের পরিধিও। কিন্তু প্রশাসনে কর্মকর্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতি কমে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভোগান্তি। এই ভোগান্তি কমানোর জন্য আমি সরকারের কাছে দ্বিতীয় উপ উপাচার্যের আবেদন করি। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরো একজন উপ উপাচার্য দিয়েছেন। 

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত