বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই যাচ্ছে জাতীয়করণের সুপারিশ!

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৫৯

শফিউল আলম শফি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নামমাত্র ভাঙ্গাচুড়া ঘড় ও অস্তিত্বহীন বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোটা অংকের টাকার বিনিময় জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মন্ত্রনালয়ের নতুন বিদ্যালয় সংক্রান্ত বিধিমালা উপেক্ষা করে ফুলবাড়ী উপজেলায় গত জুন মাসে তাড়াহুড়া করে একটি করে টিন সেডের ঘড় তুলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ১থেকে ২লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ৯ আগষ্ট ২০১৬ স্মারক নং ৮২৯/২ বলে ১১টি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করণের সুপারিশ করে উর্দ্ধোতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস সূত্র জানায় ওই ১১টি বাদে আরো ৬টি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুপারিশের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। 

উল্লেখ্য, উপজেলার আয়তন ও শিশু শুমারীর সংখ্যানুযায়ী ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেশী। তার পরেও ১১টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের প্রস্থাবনা খুবই রহস্যজনক। যে ১১টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো সুজানের কুঠি আদর্শ বিদ্যালয়, সর্দারপাড়া পশ্চিম খোচাবাড়ী আবাসন বিদ্যালয়, চর সোনাইকাজী বিদ্যালয়, মধ্য তালুক শিমুলবাড়ী স্বল্পব্যয়ী বিদ্যালয়, পূর্ব জকারহাট পশ্চিম নওদাবস বিদ্যালয়, বারাইতারী কুরুষাফেরুষা স্বল্পব্যয়ী বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর গোরক মন্ডল বিদ্যালয়, বড়লই সর্দারপাড়া বিদ্যালয়, উত্তর নজর মামুদ বিদ্যালয়, খোচাবাড়ী বিদ্যালয়, পশ্চিম ঝাউকুটি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

সরেজমিন উত্তর নজরমামুদ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুজানের কুঠি আদর্শ বিদ্যালয়, সর্দারপাড়া পশ্চিম খোচাবাড়ী আবাসন বিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি টিন শেডের খোলা ঘর। সেখানে কোন চেয়ার টেবিল ব্রেঞ্চ ও কোন প্রকার আসবাব পত্র নেই। শুরু থেকে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। 

সর্দারপাড়া পশ্চিম খোচাবাড়ী আবাসন বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোকন মিয়া জানান, যেহেতু আমাদের বেতন ভাতা নাই, তাই বিদ্যালয় তেমন খোলা রাখি না। 

বড়লই সরদার পাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক জুয়েল জানান, জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের বই দিয়ে পাঠদান শুরু করা হবে। 

পূর্ব জকারহাট পশ্চিম নওদাবস বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম উপজেলা শিক্ষা অফিসে থাকলেও সরেজমিনের কোন অস্থিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় বাসিন্ধা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছামাদ জানান, এ নামে কোন বিদ্যালয় এখানে আছে বলে আমার জানা নেই। সুজানের কুঠি আদর্শ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বেড়া বিহীন টিন শেডের ভগ্নদশায় দাড়িয়ে আছে।  

খোচাবাড়ী বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, বিদ্যালয়টি যেখানে তোলা হয়েছে সেটি খোচাবাড়ী মোস্তাকিয়া দাখিল মাদ্রাসার জমি। ওই বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নাই। কিভাবে এটা হয়েছে আমরা জানি না।  

অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম মেজবাউল ইসলাম কর্তৃক প্রাঃশিঃঅঃ/সাঃপ্রঃ(সমাপনি সেল) অ ও এস-৩৫৫/২০১০/৯৭০(৬৪১) ১২ আগষ্ট ২০১৪ ইং সালের স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ রয়েছে, ২০০৯ সাল হতে ২০১৩ সালের মধ্যে যে কোন একটি সালে যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে সেসকল বিদ্যালয়কে ২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ডি আর ভুক্ত করা যাবে।

কিন্তু ফুলবাড়ী উপজেলায় উল্লেখিত ১১টি বিদ্যালয় একটিও সেই ধারাতে পরে নাই। তার পরেও শুধু টাকার জোড়ে ১১টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের জন্য তথ্য প্রেরণ করেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। 
 
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, “কিছু অনিয়ম ও দুই নম্বরী থাকলেও এ উপজেলায় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি মানবিক ব্যপার তাই এ বিষয়ে লেখালেখি না করাই ভাল।” 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত