ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাড়ছে সবুজ বিনিয়োগ

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০১৭, ১৫:৫৫

সাহস ডেস্ক

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ বান্ধব শিল্প, বাণিজ্য ও অন্যন্য প্রকল্পে সহায়তার লক্ষে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়ায় গত কয়েক বছরে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে সবুজ বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের দৈনন্দিন ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচিও গ্রহণ করছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে ৫৬ টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৩টি ব্যাংক এবং ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি বিদ্যুৎ, তৈরি পোশাক শিল্প ও শিল্প কারখানা খাতে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবুজ ব্যাংকিং-এর জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করে। এই নির্দেশিকার অধীনে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বান্ধব ব্যাংকিং কর্মসূচি শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে মোট ৫৬ টি ব্যাংক এবং ৩২ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ব্যাংকিং নীতিমালা ও সবুজ বিনিয়োগ নির্দেশিকা তৈরি করে। কিছু ব্যাংক দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুত দ্বারা পরিচালিত ৫০০টি ব্রাঞ্চ, ২৪৯ টি এটিএম বুথ এবং এসএমই ইউনিট চালু করে। 

ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এর কর্মীদের সবুজ ব্যাংকিং-এর ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ৫৬ টি ব্যাংক এবং ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৩৬টি প্রশিক্ষণ আয়োজন করে ৩ হাজার ৭শ’রও বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
 
সব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর নিয়মিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন পেশ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ‘ক্লাইমেট রিস্ক ফান্ড’ গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর)-এর বাজেট থেকে ১০ শতাংশ অর্থ এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পূনঃবিনিয়োগ স্কিমের সহায়তায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সোলার এনার্জি সিস্টেম, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-এর মতো বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব উপকরণের জন্য সহজ ঋণ দিচ্ছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নবায়নযোগ্য জ্বালানী, জ্বালানী দক্ষতা, বিকল্প জ্বালানী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত দ্রব্য, পরিবেশ বান্ধব ইট খোলা, পরিবেশ বান্ধব সংস্থাপনসহ আটটি ক্যাটাগরিতে ৫১ ধরনের সবুজ পণ্যের মাত্রা নির্ধারণ করেছে। 

এই আটটি খাতের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা দিয়েছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং ইটখোলার ধোঁয়া থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিশোধনের জন্য গৃহিত “ফিন্যান্সিং ব্রিক কিন এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট”- চালু করা হয়েছে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (আইডিএ)-এর অর্থায়নে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট (এফএসএসপি)-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি শিল্প কারখানা, প্রধানত মাঝারি শিল্প সংস্থাকে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানীভিত্তিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকার ৭৩টি প্রকল্প প্রস্তাবনা হাতে পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব প্রস্তাবনার মধ্যে থেকে ৮৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পের জন্য ৮৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে পরিবেশ বান্ধব রপ্তানিমুখী পোশাক ও চামড়া শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৬০০ কোটি টাকার গ্রীণ ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) নামে এক নতুন দীর্ঘমেয়াদি পুনঃবিনিয়োগ কর্মসূচি চালু করে। যা পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের এক নতুন দরজা খুলে দেয়।
সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত