সম্প্রীতির সেতুবন্ধনের অঙ্গিকারে রাবিতে চলছে বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৪৪

রিজভী আহমেদ

পহেলা বৈশাখ মানে দিনভর বাঙালির সংস্কৃতি- পল্লিগীতি, বাউল, লালন, ভাটিয়ালি, হাছন, রবীন্দ্র-নজরুলের সঙ্গে নতুন করে পরিচয়। পহেলা বৈশাখ মানে আবহমান বাংলার পান্তা ইলিশ খাওয়ার উৎসব। বছর ঘুরে আবারো আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।

পুরাতন বছরের জীর্নতা আর ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে নতুন উদ্দমে আগামী শনিবার আরেকটি নতুন বছরের সূচনা হতে যাচ্ছে। ঐক্য আর সম্প্রীতির সেতুবন্ধনের অঙ্গিকার নিয়ে সারাদেশে উদযাপন হবে উৎসবটি।

প্রতিবছরের মতো এবারো বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বরণ করে নিতে পিছিয়ে নেয় উত্তরবঙ্গের শেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। রাজশাহী শহরের সবচেয়ে বড় উৎসবটি মতিহারের সবুজ চত্বরেই হয়ে থাকে। এছাড়া এ উৎসবকে বরণ করে নিতে নগরীর পদ্মার ধারে ভিড় করতে থাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ হাতে নিয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন সব কর্মসূচি। বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরে বিভিন্ন সাজে সকালে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরে পান্তা-ইলিশ এ উৎসবে যোগ করে আরেক মাত্রা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিক অঙ্গণে প্রাণের এ উৎসবকে ঘিরে নাটক, কবিতা, সংগীত ও নৃত্যের জোর মহড়া শুরু হয়েছে। নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন সংগঠন ও বিভাগগুলো তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উৎযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এএফএম মাসউদ আখতার বলেন, হারিয়ে যাওয়া আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রয়াসে আমরা প্রত্যেকবার নানা আয়োজন করি। এবার শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ, পিঠেপুলির পাশাপাশি থাকবে বাংলা যাত্রা, প্রায় হারিয়ে যাওয়া পুঁথিপাঠ ও লোকগান।

পহেলা বৈশাখের মূল আকর্ষণ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদকে ঘিরে। এ অনুষদকে নিয়েই শুরু হয় দিনের প্রথম কর্মসূচি। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান বলেন বাংলা বর্ষবরণ নিয়ে তাদের প্রস্তুতির কথা।

তিনি বলেন, এদিন সকালে আমাদের চারুকলা অনুষদের একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা থাকবে। ডামি, ঢোল, তবলা, একতারা, হরেক রঙের মুখ ও মুখোশ, ফুল ও পরি প্রকৃতির রং তুলিতে তুলে ধরার কাজ চলছে। এবারের আয়োজনে ১২০টির মতো মুখোশ থাকছে।

চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন কমিটির সমন্বয়ক ড. আমিরুল মোমেনীন চোধুরী বলেন, ‘বৈশাখ বরণ প্রতিটা বিভাগ আলাদা না করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একসঙ্গে করতে পারলে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো বড় একটি অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু আমাদের এখানে সে উদ্যোগ নেই। উদ্যোগটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই নেয়া উচিৎ। 

তিনি বলেন, চারুকলা অনুষদের পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন কাজ এগিয়ে চলছে। চারুকলা অনুষদের আসার রাস্তায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের দেয়ালটি রং করা হবে। আমাদের অনুষদের সামনেও কিছু আয়োজন থাকবে। এ উপলক্ষে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো টাকার ব্যবস্থা হয়নি। এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালির ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে তৈরি করা হচ্ছে শান্তি ও বিদ্রোহের প্রতীক পায়রা ও ষাঁড়।

প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, পায়রা হলো শান্তি ও সংবাদ বাহকের প্রতীক। বাঙালির শান্তিপ্রিয়তার খবর পায়রা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে ষাঁড় হলো বিদ্রোহের প্রতীক। পূর্বে কৃষিকাজের প্রধান বাহন ছিল এ ষাঁড়। কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশে হঠাৎ করেই গৃহপালিত পশুকে আমরা দূরে ঠেলে দিয়েছি। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা এক পা চলতে পারছি না। ইতিহাসে দেখা যায়, কোন কিছুর দ্রুত উত্থান হলে তার পতনও দ্রুত হয়। প্রযুক্তি আমাদের গ্রহণ করতে হবে, তবে সেটা ধীরে ধীরে পরিবর্তন দরকার। কৃষি থেকে পশুকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদেই আমাদের এ ‘বিদ্রোহ’। সব মিলিয়ে আশা করছি সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারবো।

নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এদিন যেন কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশকে নিয়ে আমরা তৎপর থাকবো।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত