জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ও হেনরি

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২৮

১.
বিশ্বখ্যাত লেখক ও. হেনরি (O. Henry) অত্যন্ত জনপ্রিয় গল্পকার, সাহিত্যিক। ‘ও হেনরি’ আসলে লেখকের ছদ্মনাম। তাঁর আসল নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার। নিজেকে আড়াল করে রচনাকে আরো সমৃদ্ধতর করতে ছদ্মনামের ঘোমটা নেন। রসিকতা, বিশেষ ধরনের চরিত্রায়ন ও গল্পের শেষে চমকের জন্য বিশ্বসাহিত্যে পরিচিত ও বিখ্যাত ও হেনরি। তিনি আমেরিকান জীবনযাপন নিয়ে ছয় শতাধিক গল্প লিখেছেন। তিনি ১৮৬২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, ১৯১০ সালের ৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মারা যান ও হেনরি। ও. হেনরি’র অন্যতম সেরা একটি গল্প হলো ‘গিফট অফ দ্য মেজাই (The Gift of the Magi)’। এক সময় কলেজ পাঠ্য হওয়ায় তার লেখা ‘দ্য গিফট অব ম্যাজাই’ গল্পটি বাংলাদেশে খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয়। গল্পটি ১৯০৬ সালে তার বিখ্যাত গল্প সঙ্কলন ‘দ্য ফোর মিলিয়ন’ –এ অন্তর্ভুক্ত হয়। 

২.
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে ও হেনরির ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে লেখকের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। পাঠচক্রের আলোচনায় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের অসম্ভব মনোগ্রাহী উপস্থাপনাও এক্ষেত্রে আগ্রহ আরো বাড়াতে সাহায্য করে। মাযহার ভাইয়ের সহায়তায় বিসাকের গ্রন্থাগারে খুঁজে পাই তাঁর কিছু অনুবাদ। তার গল্পপাঠের পাশপাশি জীবনী পাঠ করে, লেখককে জেনেও নানাভাবে প্রাণিত হই। জানা হয়ে ওঠে, প্রথম জীবনে তিনি কিছুকাল এক খামার বাড়িতে কাজ করেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফার্মাসিস্ট হিসেবেও কাজ করেন কিছুদিন। পরবর্তী জীবনে তিনি বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিয়োজিত হন। এক সময় ভবঘুরে জীবন-যাপন শুরু করেন এবং ছোটগল্প লিখে নিজের ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণ চালান। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আস্থায় মানুষ যে তার স্বপ্নের কাছে পৌঁছাতে পারে, ও হেনরি সেটাই প্রমাণ করে গেছেন জীবনে।

৩.
উইলিয়াম সিডনী পোর্টার ১৮৬২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবরোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এ্যালগারনন সিডনি পোর্টার, পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মাতার নাম মেরী জেন ভারজিনিয়া সোয়াইম পোর্টার। হেনরি তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়ে দাদি ও ফুফুর কাছে বড় হন। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে পড়ে কিছুদিন নিকটাত্মীয়ের ওষুধের দোকানে চাকরি করেন। পরে চাকরি নেন ব্যাংকের কেরানি পদে। এরই মধ্যে রম্য সাপ্তাহিক ‘দ্য রোলিং স্টোন’ বের করেন তিনি। কাগজটি না চলায় হিউস্টন পোস্টে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এদিকে ব্যাংকে ভুলবশত তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে তিনি প্রথমে নিউ অরলিয়ন্স, সেখান থেকে হন্ডুরাস চলে যান। স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে ফিরে এসে পুলিশে ধরা দেন এবং পাঁচ বছরের জেল হয়। ১৮৯৮ সালে ওহাইও রাজ্যের কলম্বাসের সংশোধনাগারে পাঠান হয়। সেখানে নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট হিসেবে জেল কারাগারে রাতে কাজ করতেন।
 
৪.
জেলে থাকাকালে ১৪টি গল্প লেখেন হেনরি বিভিন্ন ছদ্মনামে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পায় ‘ও হেনরি’ নামটি। অলিভার হেনরি নামটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৮৯৯ সালের ম্যাকক্লারেস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘হুইসলিং ডিকস ক্রিস্টমাস স্টকিং’ গল্পে। পরে অলিভার হেনরি থেকে হন ও হেনরি। নিউ অরলিয়ন্সের এক বন্ধু গল্পটি পত্রিকায় পাঠান। পত্রিকা কর্তৃপক্ষের ধারণাই ছিল না লেখক জেলেবন্দী আসামি। সাজা তিন বছর ভোগ করার পরই ভালো আচরণের সুবাদে ১৯০২ সালের ২৪ জুলাই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর পেনসিলভানিয়ায় গিয়ে মেয়ে মার্গারেটের সঙ্গে মিলিত হন। মার্গারেটকে কখনো বলা হয়নি তার বাবা জেলে ছিলেন। তিনি জানতেন ব্যবসার কারণে তিনি বাইরে আছেন।

৫.
সেখান থেকে ১৯০২ সালে চলে আসেন নিউইয়র্কে। সেখানকার নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ও অন্যান্য প্রকাশকদের জন্য সপ্তাহে একটা করে গল্প লিখতে হতো। তার প্রথম গল্প সংকলনের নাম ‘ক্যাবাজেস এ্যান্ড কিংস’ (১৯০৪)। নিউইয়র্কে থাকাকালে ৩৮১টির মতো গল্প লেখেন। প্রথম গল্প সংকলন ‘ক্যাবাজেস অ্যান্ড কিংস’ (১৯০৪)। দুই বছর পর আসে দ্বিতীয় গল্প সংকলন ‘দ্য ফোর মিলিয়ন’। বিখ্যাত গল্প ‘দ্য গিফট অব ম্যাজাই’, ‘দ্য স্কাইলাইট রুম’ ও ‘দ্য গ্রিন ডোর’ এই সংকলনেই ছিল। পাঠকপ্রিয় অন্যান্য সংকলনের মধ্যে রয়েছে ‘রোডস টু ডেস্টিনি’ ও ‘সিক্সেস এ্যান্ড সেভেনস’। গল্পগুলো তার সমকালকেই ধারণ করে। অধিকাংশ গল্পের চরিত্র সমাজের নিচুতলার মানুষ। তাদের নিঃসঙ্গতা এ সব গল্পে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

৬.
জীবদ্দশায় ও হেনরি বেশ খ্যাতিলাভ করেন, হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী লেখক। তার গল্প বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় দিক হলো তার গল্প বিভিন্ন দেশে পাঠ্যক্রমে স্থান পেয়েছে। নির্মিত হয় চলচ্চিত্র। তার জীবদ্দশায় মুক্তি পায় তিনটি নির্বাক ছবি- ‘দ্য স্যাক্রিসাইস’ (১৯০৯), ‘ট্রাইং টু গেট এ্যারেস্টেড’ (১৯০৯) ও ‘হিজ ডিউটি’ (১৯০৯)। তার লেখা অবলম্বনে নির্মিত আরও দুটি বিখ্যাত ছবি হলো ‘দ্য এ্যারিজোনা কিড’ (১৯৩১) ও ‘দ্য কিসকো কিড’ (১৯৩১)। ১৯৫২ সালে পাঁচটি গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ও হেনরিস ফুল হাউস’। এতে স্থান পেয়েছে ‘দ্য কপ এ্যান্ড দ্য এ্যান্থেম’, ‘দ্য ক্লারিওন কল’, ‘দ্য লাস্ট লিফ’, ‘দ্য রানসাম অব রেড চিফ’ ও ‘দ্য গিফট অব ম্যাজাই’।

৭.
তিনি প্রায় ছয়শতাধিক গল্প লিখেছেন। বিষয়বস্তুর গভীরতা, শব্দের খেলা, নিখুঁত চরিত্রাংকন ও চমৎপ্রদ পরিসমাপ্তি প্রভৃতি ছিলো তার গল্পের মূল সম্পদ। তার সর্বাধিক জনপ্রিয় সংকলনগুলি হলো- ‘বাঁধাকপি এবং রাজা'(Cabbages and Kings), ‘নিয়তির রাস্তা’ (Roads of Destiny) এবং ‘ছয়-সাত'(Sixes and Sevens)। তার বিশ্বখ্যাত ছোটগল্পগুলোর মধ্যে- A Blackjack Bargainer, The Princess and the Puma, The Coming-Out of Maggie, The Ransom of Red Chief, The Gift of the Magi, The Whirligig of Life, The Last Leaf প্রভৃতি বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ।
 
৮.
১৮৮৭ সালে ও হেনরি এথোলা ইস্টেসকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে মার্গারেট ওয়ার্থ পোর্টার নামে এক মেয়ে ছিলো। ১৮৯৭ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পরে ১৯০৭ সালে তিনি তার শৈশব প্রণয়ী সারাহ লিন্ডসে কলিমেনকে বিয়ে করেন যদিও ১৯০৮ সালে তারা পৃথক হয়ে যান। 

৯.
শেষ বয়সে অতিরিক্ত মদপানের কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ও হেনরি ১৯১০ সালের ৫ জুন নিউ ইয়র্ক সিটিতে মৃত্যুবরণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত