জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ডি.এইচ. লরেন্স

‘ভাল জন্তু হও, তোমার প্রবৃত্তির কাছে সত্যবদ্ধ থাকো’ – ডি.এইচ লরেন্স (দ্য হোয়াইট পিকক)

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৫০

১.
ডেভিড হারবার্ট রিচার্ডস লরেন্স, যিনি ডি. এইচ. লরেন্স নামে সমধিক খ্যাত, ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক, কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক। সাহিত্য সমালোচকদের মতে, তার রচনাবলি আধুনিকায়ন ও শিল্পায়ন প্রসূত মানবিক অবক্ষয়ের দিকটি বিশদভাবে প্রতিফলিত করে। তার রচনায় লরেন্স মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও তার গুরুত্ব, স্বাভাবিকতা, ও মানব জীবনে যৌনপ্রবণতার ভূমিকা প্রভৃতি বিষয়কে উপজীব্য করেছেন। তার অন্যতম বহুল পঠিত উপন্যাস হলো লেডি চ্যাটার্লীয লাভার যা তৎকালে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত ছিল। ডি.এইচ. লরেন্স জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে। তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য, ডি.এইচ. লরেন্স ১৯৩০ সালের ২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বসাহিত্যে, কথাশিল্পে ডি.এইচ. লরেন্স বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত।

২.
সাহিত্যের বাগানে ডি এইচ লরেন্স ( জন্ম: ১১ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৫ – মৃত্যু : ২ মার্চ, ১৯৩০) এর আবির্ভাব কবি হিসাবে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে। যদিও Lady chatterly’s Lover উপন্যাসটির জন্যই তিনি বেশী বিখ্যাত। তার প্রথম উপন্যাস The white peacock প্রকাশিত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। গ্রন্থটি প্রকাশ হবার পরই চারিদিকে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। পেশায় শিক্ষকতা করলেও বেশী দিন চাকরিতে নিমগ্ন থাকতে পারেননি। সাহিত্যের টানে পেশা থেকে অব্যাহতি নিয়ে সাহিত্য চর্চায় সম্পূর্ণভাবে একনিষ্ঠ ও নিমগ্ন হন। মোটামুটিভাবে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, কবিতাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। তার বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের ভেতর রয়েছে : Love poems and others(1913), Amores(1916), Look! We have come through(1917), New poems(1918), Tortoises(1921), Birds, Beasts and Flowers(1923), Collected poems(1928), Pansies(1929), Last poems(1933) প্রভৃতি। তার রচিত গদ্য সাহিত্য ও কবিতার বিষয় বস্তু বেশ কিছুটা অভিন্ন। প্রেম ও সৌন্দর্য্যকে তিনি সুউচ্চে তুলে ধরেছেন। 

৩.
লরেন্সের মতামত তাঁর বহু শত্রুর জন্ম দেয়। তাঁকে পড়তে হয় সরকারি হয়রানি ও সেন্সরশিপের মুখে। জীবনের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর রচনার ভুল ব্যাখ্যাও হতে থাকে। এই সময় তিনি চলে যান স্বেচ্ছা-নির্বাসনে; যা ছিল তাঁর নিজের ভাষায় "বর্বর তীর্থযাত্রা" ("savage pilgrimage")-এ ।মৃত্যুকালে তাঁর সম্মান নিজের বিপুল প্রতিভার অপব্যবহারকারী কোনও পর্নোগ্রাফারের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। একটি শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ই এম ফরস্টার এই বহুপ্রচলিত ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লরেন্সকে "আমাদের প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল ঔপন্যাসিক" ("The greatest imaginative novelist of our generation") বলে উল্লেখ করেন।পরবর্তীকালে প্রভাবশালী কেমব্রিজ-ভিত্তিক সমালোচক এফ আর লিভিস তাঁর রচনার শৈল্পিক বিশুদ্ধতা ও তাঁর নৈতিক ঐকান্তিকতাকে সমর্থন করেন। তিনি লরেন্সের রচনাকে ইংরেজি উপন্যাসের অনুশাসনিক "মহাঐতিহ্য" ("great tradition")-এর অন্তর্ভুক্ত করেন। আজ লরেন্স সাধারণভাবে এক সত্যদ্রষ্টা দার্শনিক তথা ইংরেজি সাহিত্যে আধুনিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরূপে নন্দিত। যদিও কোনো কোনো নারীবাদী লেখক-লেখিকা তাঁর রচনায় নারীজাতির উপস্থাপনা ও যৌনতার ব্যবহারের প্রতি আপত্তি জানিয়ে থাকেন।

৪.
লরেন্স ছিলেন আর্থার জন লরেন্স নামে এক প্রায়-অশিক্ষিত খনি মজুর ও লিডিয়া (নি বিয়ার্ডস্যাল) নামে এক প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকার চতুর্থ সন্তান। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছিল ইস্টউড, নটিংহ্যামশায়ারের কয়লাখনি অঞ্চলে। ইস্টউডের ৮এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটস্থ তাঁর জন্মস্থানটি এখন এক সংগ্রহশালা।লরেন্সের প্রাথমিক রচনাগুলির উপাদান তিনি সংগ্রহ করেছিলেন তাঁর ছেলেবেলার এই শ্রমজীবী পরিমণ্ডল ও পিতামাতার সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে। এই অঞ্চলটিকে বলতেন তাঁর "হৃদয়ভূমি" ("the country of my heart,")। বারবার তাঁর গল্প-উপন্যাসের পটভূমি রচনার মাধ্যমে এখানে ফিরে আসতেন তিনি। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৯ পর্যন্ত লরেন্স বিউভেল বোর্ড স্কুলে (বর্তমানে তাঁর সম্মানে গ্রিসলি বিউভেল ডি এইচ লরেন্স প্রাইমারি স্কুল নামাঙ্কিত) পড়াশোনা করে। স্থানীয় ছাত্রদের মধ্যে তিনিই প্রথম নিকটবর্তী নটিংহ্যামের নটিংহ্যাম হাইস্কুলে কাউন্টি কাউন্সিল বৃত্তি লাভ করেন। বর্তমানে এই স্কুলের জুনিয়র বিভাগে একটি হাউস তাঁর নামাঙ্কিত। ১৯০১ সালে স্কুল ছেড়ে তিন মাস হেইউডের সার্জিক্যাল অ্যাপ্লিয়েন্সেজ ফ্যাক্টরিতে জুনিয়র ক্লার্কের চাকরি করেন। কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর কর্মজীবনের অবসান ঘটে। সেরে ওঠার পর তিনি চেম্বার্স পরিবারের বাসভবন হ্যাগস ফার্মে যাতায়াত শুরু করেন। এই সময় জেসি চেম্বার্সের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। জেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও অন্যান্য কিশোরবয়স্কদের সঙ্গে তাঁর সংসর্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বইপড়ার প্রতি সাধারণ আগ্রহ। এই আগ্রহ তাঁর সারাজীবনই থেকে যায়। ১৯০২ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত ইস্টউডের ব্রিটিশ স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন। ১৯০৮ সালে পূর্ণ সময়ের ছাত্র হিসেবে ইউনিভার্সিটি কলেজ নটিংহ্যাম থেকে কোয়ালিফায়েড টিচার স্ট্যাটাস অর্জন করেন। এই সময়কালে তিনি রচনা করেন তাঁর প্রথম যুগের কবিতাগুলি, কিছু ছোটোগল্প ও লায়েটিটিয়া নামে একটি উপন্যাসের খসড়া, যেটি পরে দ্য হোয়াইট পিকক নামে প্রকাশিত হয়। ১৯০৭ সালের শেষদিকে নটিংহ্যাম গার্ডিয়ান পত্রিকায় তিনি একটি ছোটোগল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এটিই ছিল তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার প্রথম বৃহত্তর আত্মপ্রকাশ।

৫.
১৯০৮ সালে সদ্য যোগ্যতাপ্রাপ্ত লরেন্স তাঁর প্রথম জীবনের বাসভূমি ত্যাগ করে লন্ডনে চলে আসেন। ক্রয়ডনের ডেভিডসন রোড স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর লেখালিখিও। জেসি চেম্বার্সের পাঠানো তাঁর প্রথম দিকের কয়েকটি কবিতা দ্য ইংলিশ রিভিউ পত্রিকার প্রভাবশালী সম্পাদক ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ডের (তখন তিনি পরিচিত ফোর্ড হারমান হেফার নামে) নজরে পড়ে। তাঁর সম্মতিতে অডর অফ ক্রিস্যানথেমামস গল্পটি উক্ত পত্রিকায় ছাপা হয়। তাতে লন্ডনের বিশিষ্ট প্রকাশন সংস্থা হেইনম্যান আগ্রহী হয়ে তাঁকে আরও লিখতে অনুরোধ করে। পেশাদার লেখক হিসেবে তাঁর জীবনের সেই সূত্রপাত; যদিও তার পরেও পুরো এক বছর তিনি শিক্ষকতা করে গিয়েছিলেন। ১৯১০ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস দ্য হোয়াইট পিকক প্রকাশের অব্যবহিত পরেই লরেন্সের মা মারা যান। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতে যুবক লরেন্স অত্যন্ত ভেঙে পরেন। মায়ের মৃত্যুর পরবর্তী মাসগুলিকে তিনি পরে ব্যাখ্যা করেছিলেন তাঁর "অসুখের বছর" ("sick year") হিসেবে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, মায়ের সঙ্গে লরেন্সের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাই মায়ের মৃত্যু তাঁর জীবনে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় প্রতিপন্ন হয়। ঠিক যেমন মিসেস মোরেলের মৃত্যু তাঁর বিখ্যাত আত্মজৈবনিক উপন্যাস সনস অ্যান্ড লাভার্স রচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে দাঁড়ায়। এই রচনাটিতে তাঁর মফস্বলে বেড়ে ওঠার ইতিকথা অনেকটাই তুলে ধরেছিলেন।

৬.
১৯১১ সালে এডওয়ার্ড গারনেটের সঙ্গে লরেন্সের আলাপ হয়। গারনেট ছিলেন পাবলিশার্স রিডার এবং একজন উপদেষ্টা। তিনি লরেন্সকে আরো উৎসাহিত করেন। দু’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। গারনেটের পুত্র ডেভিড গারনেটের সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্ব হয়। তরুণ লেখক লরেন্সের এই মাসটি কাটে পল মোরেল উপন্যাসের প্রথম খসড়া সংশোধন করে। পরবর্তীকালে এই বইটিই সনস অ্যান্ড লাভার্স নামে প্রকাশিত হয়। সেই সঙ্গে তাঁর সহকর্মী শিক্ষিকা হেলেন কর্ক তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়তে দেন। এই ডায়েরিতে লিখিত কর্কের দুঃখজনক প্রেমকাহিনি তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য ট্রেসপাসার-এর কাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে। ১৯১১ সালের নভেম্বরে লরেন্স আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। সেরে উঠে তিনি স্থির করেন যে শিক্ষকতার পেশা পরিত্যাগ করে পূর্ণ সময়ের লেখালিখির কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। নটিংহ্যাম ও ইস্টউডের তাঁর পুরনো বান্ধবী লুই বারোজের সঙ্গে তিনি তাঁর সম্পর্কও ভেঙে দেন।

৭.
১৯১২ সালের মার্চ মাসে ফ্রেডা উইকলি (নি ভন রিচথোফেন)-র সঙ্গে আলাপ হয় লরেন্সের। এঁর সঙ্গেই তিনি তাঁর অবশিষ্ট জীবন কাটিয়েছিলেন। ফ্রেডা ছিলেন নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা অধ্যাপক তথা লরেন্সের প্রাক্তন শিক্ষক আর্নেস্ট উইকলির স্ত্রী। তিন সন্তানের জননী ফ্রেডা তাঁর নতুন প্রণয়ীর চেয়ে বয়সে ছয় বছরের বড় ছিলেন। লরেন্সের সঙ্গে তিনি পালিয়ে আসেন জার্মানির গ্যারিসন শহর মেটজ-স্থিত ফ্রেডার পৈত্রিক বাড়িতে। এই শহরটি ছিল জার্মানি ও ফ্রান্সের অশান্ত সীমান্ত অঞ্চলের কাছাকাছি। এখানে থাকার সময় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লরেন্সের সংঘাত বাধে; তাঁর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের হয়ে চরবৃত্তি করার অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়; যদিও ফ্রেডা উইকলির বাবার মধ্যস্থতায় তিনি মুক্তি পান। এই ঘটনার পর লরেন্স চলে আসেন মিউনিখের দক্ষিণে একটি ছোটো গ্রামে। এইখানেই ফ্রেডা উইকলির সঙ্গে তিনি যাপন করেন তাঁদের "মধুচন্দ্রিমা"; পরবর্তীকালে যার স্মৃতি বিধৃত হয় লুক! উই হ্যাভ কাম থ্রু (১৯১৭) নামক প্রেমের কবিতামালায়।

৮.
জার্মানি থেকে আল্পসের পথ ধরে দক্ষিণে ইতালির দিকে পদব্রজে রওয়ানা হন তাঁরা। এই যাত্রার স্মৃতি ধরা আছে তাঁর প্রথম ভ্রমণ কাহিনি টুইলাইট ইন ইতালি নামক পরস্পর-সংযুক্ত প্রবন্ধসংগ্রহ এবং মিস্টার নুন নামক এক অসমাপ্ত উপন্যাসে। ইতালিতে থাকাকালীন লরেন্স সনস অ্যান্ড লাভার্সউপন্যাসের চূড়ান্ত খসড়াটি প্রস্তুত করেন। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস তাঁর প্রথম জীবনে দেখা শ্রমিক শ্রেণির বাস্তব জীবনচিত্রের একটি স্পষ্ট চিত্রণ রূপে আখ্যাত হয়। যদিও লরেন্স এই কাজে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে এডওয়ার্ড গারনেটকে মূলপাঠ থেকে প্রায় একশো পাতা বাদ দেওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন। ১৯১৩ সালে এক স্বল্পকালীন সফরে ফ্রেডা ও লরেন্স ইংল্যান্ডে ফেরেন। এই সময় সমালোচক জন মিডলটন মারে ও নিউজিল্যান্ড-জাত ছোটোগল্পকার ক্যাথারিন ম্যানসফিল্ডের সঙ্গে তাঁর আলাপ ও বন্ধুত্ব হয়। অল্পকাল পরেই লরেন্স ও ফ্রেডা ইতালিতে ফিরে যান এবং গালফ অফ স্পেজিয়া তটস্থফিয়াসেরিনোর একটি কটেজে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি তাঁর দুই বহুপরিচিত উপন্যাস দ্য রেইনবো ও উইমেন ইন লাভ-এর প্রাথমিক খসড়া রচনার কাজ শুরু করেন। অবশেষে উইকলিও তাঁর পূর্বতন স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছিন্না হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হলে তাঁরা ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং ১৯১৪ সালের ১৩ জুলাই পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

৯.
উইকলির জার্মান বংশপরিচয় ও লরেন্সের শান্তিবাদের কারণে যুদ্ধকালীন ইংল্যান্ডে তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখা হতে থাকে। যেকারণে তাঁদের থাকতে হয় প্রায় একঘরে হয়। ১৯১৫ সালে প্রকাশিত দ্য রেইনবো উপন্যাসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এবং অশালীনতার অভিযোগে সেই বছরই বইটি নিষিদ্ধ হয়।জেনরের কর্নওয়াল উপকূল অঞ্চলে তাঁরা বাস করছিলেন বলে তাঁদের বিরুদ্ধে পরে চরবৃত্তি ও জার্মান ডুবোজাহাজগুলিকে সংকেত জানানোর অভিযোগও আনা হয়। এই সময়েই তিনি উইমেন ইন লাভ উপন্যাসের চূড়ান্ত খসড়াটি রচনা করেন। এই উপন্যাসে সমসাময়িক সভ্যতার ধ্বংসপ্রবণ দিকগুলি লরেন্স দেখিয়েছেন চারটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে ঘনায়মান সম্পর্কের গঠন তথা ললিতকলা, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, যৌন অভিজ্ঞতা, বন্ধুত্ব ও বিবাহ সম্পর্কে তাদের মূল্যবোধের প্রতিফলনের মাধ্যমে। এই গ্রন্থে একটি হতাশাব্যঞ্জক তিক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে মানবসমাজকে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই গ্রন্থের প্রকাশ অসম্ভব ছিল। তাই ১৯২০ সালের আগে এই বই প্রকাশ করা যায়নি। বর্তমানে এই গ্রন্থটি বিবেচিত হয় উচ্চ নাটকীয় শক্তি ও বৌদ্ধিক সূক্ষ্মতা সম্বলিত এক ইংরেজি উপন্যাস হিসেবে।

১০.
১৯১৭ সালের শেষদিকে বারবার সামরিক কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হয়ে লরেন্স ডিফেন্স অফ রেম অ্যাক্ট (ডিওআরএ)-এর অধীনে তিন দিনের নোটিসে কর্নওয়াল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই বিচারপ্রক্রিয়াটি ১৯২৩ সালে প্রকাশিত তাঁর অস্ট্রেলীয় উপন্যাস ক্যাঙারু-র এক আত্মজৈবনিক অধ্যায়ে ধরা আছে। নিউবেরি, বার্কশায়ার-এর কাছে হার্মিটেজ নামে এক ছোট্টো গ্রামে ১৯১৮ সালের প্রথম দিকে কয়েকমাস কাটান লরেন্স। ১৯১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত প্রায় এক বছর কাল তিনি অতিবাহিত করেন মিডলটন-বাই-রিকসওয়ার্থ, ডার্বিশায়ার-এর মাউন্টেন কটেজে। এখানে থাকার সময় তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বাধিক কাব্যময় ছোটোগল্পমালা দ্য উইন্ট্রি পিকক। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের তাড়নায় বারংবার তাকে ঠিকানা বদল করতে হতে থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে একবার তাঁর জীবনসংশয় পর্যন্ত দেখা দেয়।

১১.
যুদ্ধের বছরগুলিতে লরেন্স মানসিকভাবে আহত হয়ে পড়েন। তারপরেই শুরু হয় তাঁর স্বেচ্ছা-নির্বাসন পর্ব; তাঁর নিজের যা ছিল 'বর্বর তীর্থযাত্রা' ('savage pilgrimage')। প্রথম সুযোগেই তিনি ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে যান। পরে মাত্র দু-বার তিনি স্বল্পসময়ের সফরে ফিরে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। অবশিষ্ট জীবন নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করেই কাটিয়ে দেন লরেন্স। ভ্রমণের নেশা তাঁকে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া, ইতালি সিলোন (অধুনা শ্রীলঙ্কা), যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও দক্ষিণ ফ্রান্সে। ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ড ছেড়ে লরেন্স দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন; প্রথমে যান মধ্য ইতালির অ্যাব্রুজি অঞ্চলে, পরে রওনা হন ক্যাপ্রি ও তাওরমিনা, সিসিলি-র ফন্টানা ভেচাইয়ার দিকে। সিসিলি থেকে স্বল্পসময়ের শিক্ষামূলক ভ্রমণ সারেন সার্ডিনিয়া, মন্টে ক্যাসিনো, মালটা, উত্তর ইতালি,অস্ট্রিয়া ও দক্ষিণ জার্মানি অঞ্চলে। তাঁর রচনায় এইসব অঞ্চলের অনেকগুলিরই উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সময় লিখিত তাঁর নতুন উপন্যাসগুলি হল দ্য লস্ট গার্ল (যে বইটির জন্য তিনি জেমস টেইট ব্ল্যাক স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন), অ্যারন’স রড ও মিস্টার নুন নামক একটি খণ্ডাংশ (যার প্রথম ভাগ লেখকের ফিনিক্স সংকলনে ও ১৯৮৪ সালে সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়)। এই সময় কয়েকটি অনু-উপন্যাস নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করেন লরেন্স: দ্য ক্যাপ্টেন’স ডল, দ্য ফক্স, ও দ্য লেডিবার্ড। তার সঙ্গে এই সময় লিখিত তাঁর ছোটোগল্পগুলি প্রকাশিত হয় ইংল্যান্ড, মাই ইংল্যান্ড অ্যান্ড আদার স্টোরিজসংকলনে। দ্য বার্ড, বিস্ট অ্যান্ড ফ্লাওয়ার কাব্যগ্রন্থে প্রাকৃতিক জগৎ সম্বন্ধে এই ক’বছরে তাঁর লেখা একাধিক কবিতা সংকলিত হয়। ইংরেজি ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভ্রমণসাহিত্য রচনাকার হিসেবে লরেন্সের প্রসিদ্ধি বহুজনমান্য। ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে টাওরমিনায় তাঁর সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের বিবরণ মেলে সি অ্যান্ড সার্ডিনিয়া গ্রন্থে। এই বইটি ভূমধ্যসাগরের এই অংশের জনজীবনের এক প্রতিচ্ছবি। অপেক্ষাকৃত অল্পখ্যাত রচনা হল মরিস ম্যাগনাসের অসামান্য স্মৃতিচারণা (মেমোয়ার্স অফ ফরেন লিজিয়ন), যে গ্রন্থে লরেন্স তাঁর মন্টে ক্যাসিনোর মঠভ্রমণের কথা লিখেছেন। অন্যান্য গদ্যরচনার মধ্যে রয়েছে ফ্রেডিয়ান ও সাইকো-অ্যানালিলিস সংক্রান্ত দুটি গবেষণাপত্র, মুভমেন্ট ইন ইউরোপিয়ান হিস্ট্রি নামে একটি স্কুলপাঠ্য পুস্তক, যা তিনি ইংল্যান্ডে তাঁর কুখ্যাতির কারণে ছদ্মনামে প্রকাশ করেন।

১২.
১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের ইচ্ছা নিয়ে লরেন্স সেই দিকে যাত্রা করেন। তাঁরা ভেসে চলেন পূর্বদিকে; প্রথমে সিলোন ও পরে অস্ট্রেলিয়ায়। ডারলিংটন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় স্বল্পকালীন অধিষ্ঠানের সময় স্থানীয় লেখক মলি স্কিনারের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তারপর উপকূলীয় শহর থিরোউল, নিউ সাউথ ওয়েলস-এ অল্পকাল বাস করেন। এই সময় তিনি ক্যাঙারু নামক উপন্যাসটি সমাপ্ত করেন। এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য ছিল স্থানীয় প্রান্তিক রাজনীতি; তার সঙ্গে যুদ্ধকালীন তাঁর কর্নওয়ালের অভিজ্ঞতার এক ঝলক দেখা মেলে এই উপন্যাসে।
১৯২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছান লরেন্স। এখানে বিশিষ্ট সমাজপতি ম্যাবেল ডজ লুহানের সঙ্গে তাঁদের আলাপ হয়। টাওস, নিউ ম্যাক্সিকো-র কাছে কিউয়া রাঞ্চে ১৬০ একর জমিতে একটি ইউটোপিয়ান কলোনি স্থাপনে সম্মত হন তাঁরা। সনস অ্যান্ড লাভার্স উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির পরিবর্তে তাঁরা ১৯২৪ সালে সেই ভূসম্পত্তি ক্রয় করেন। এই রাঞ্চটি বর্তমানে ডি এইচ লরেন্স রাঞ্চ নামে পরিচিত। দুই বছর তিনি নিউ মেক্সিকোতে থাকেন। মাঝে মেক্সিকোর লেক চ্যাপালা ও ওয়াক্সাকা পরিভ্রমণ করেন।

১৩.
যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন লরেন্স তাঁর স্টাডিজ ইন ক্ল্যাসিক আমেরিকান লিটারেচার গ্রন্থটির পুনর্লিখন ও প্রকাশনায় মন দেন। ১৯১৭ সালে এই সমালোচনা প্রবন্ধমালার রচনার কাজ শুরু হয়েছিল। পরে এডমন্ড উইলসন এই গ্রন্থটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন, "(এটি) এই বিষয়ের উপর লিখিত চিরন্তন ও প্রথম শ্রেণির বইগুলির একটি।" প্রতীকবাদ, নিউ ইংল্যান্ড তুরীয়বাদ ও পিউরিটান চেতনার অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন এই প্রবন্ধগুলি ১৯২০-এর দশকে হারমান মেলভিলের হৃতসম্মান পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সময় লরেন্স রচনা করেন একগুচ্ছ কথাসাহিত্য। যার মধ্যে উল্লেখনীয় দ্য বয় ইন দ্য বুশ, দ্য প্লামড সারপেন্ট, সেন্ট মাওয়ার, দ্য ওম্যান হু রোড অ্যাওয়ে, দ্য প্রিন্সেস ও বিক্ষিপ্ত ছোটোগল্পগুচ্ছ। এই সময় তিনি আরও কিছু ভ্রমণ সাহিত্য রচনারও সময় পেয়ে যান; যেমন কয়েকটি পরস্পর সংযুক্ত শিক্ষাভ্রমণের কাহিনি মর্নিংস ইন মেক্সিকো। ১৯২৩ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ডের দিকে তাঁর স্বল্পকালীন সমুদ্রযাত্রা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তিনি টাওসে ফিরে আসেন এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে লেখক হিসেবে তাঁর জীবন এখন আমেরিকাতেই প্রতিষ্ঠিত। যদিও ১৯২৫ সালের মার্চ মাসে মেক্সিকোয় তাঁর তৃতীয় ভ্রমণের সময় তিনি মারণম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। সেরে উঠলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর আর একবার ইউরোপ প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তবে তিনি সাংঘাতিক রকমের অসুস্থ ছিলেন এবং তাঁর স্বাস্থ্যও অনুকূল ছিল না; ভ্রাম্যমান জীবন অতিবাহিত করা তাই তখন তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফ্লোরেন্সের কাছে উত্তর ইতালিতে একটি ভিলায় লরেন্স ঘর বাঁধেন। এখানেই তিনি রচনা করেন দ্য ভার্জিন অ্যান্ড দ্য জিপসি ও লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার (১৯২৮) উপন্যাসের কয়েকটি পাঠ। দ্বিতীয় গ্রন্থটি ছিল তাঁর সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ফ্লোরেন্স ও প্যারিসে ব্যক্তিগত সংস্করণে প্রকাশিত এই উপন্যাসখানি তাঁর কুখ্যাতির পালে হাওয়া জোগায়। যাঁরা এর তথাকথিত অশ্লীলতায় আহত হয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লরেন্স অনেকগুলি ব্যঙ্গকবিতা রচনা করেন। এগুলি " প্যান্সিস " ও" নেটলস " শিরোনামে প্রকাশিত হয়; এবং প্রকাশিত হয় পর্নোগ্রাফি অ্যান্ড অবসিনিটি নামক একটি রচনা।

১৪.
ইতালিতে প্রত্যাবর্তন তাঁকে কিছু পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্কে জাগিয়ে তোলার সুযোগ দেয়। এই বছরগুলিতে বিশেষত অ্যালডাস হাক্সলের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা হয়। হাক্সলে লরেন্সের মৃত্যুর পর একটি স্মৃতিকথা ও তাঁর প্রথম পত্রাবলির সংকলন প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালের এপ্রিলে শিল্পী আর্ল ব্রিউস্টারের সঙ্গে লরেন্স একাধিক স্থানীয় প্রত্নস্থল পরিভ্রমণ করেন। এই প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রগুলির বর্ণনা তিনি দেন একাধিক প্রবন্ধে যেগুলি স্কেচেস অফ এট্রুস্কান প্লেসেস অ্যান্ড আদার ইতালিয়ান এসেজ গ্রন্থে। এই সুন্দর গ্রন্থে বেনিতো মুসোলিনির ফ্যাসিবাদের উজ্জ্বল অতীতের বিপরীত দিকটি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। লরেন্স কথাসাহিত্য রচনাও চালিয়ে যান। রচিত হয় কিছু ছোটোগল্প ও দ্য এসকেপড কক , যা দ্য ম্যান হু ডায়েড নামেও প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে যিশু খ্রিস্টের পুনরুজ্জীবনের এক সংস্কারমুক্ত পুনর্লিখন লক্ষিত হয়। এই শেষ বছরগুলিতে তৈলচিত্রের প্রতি লরেন্সের গভীর অনুরাগ আবার নতুন করে জেগে ওঠে। সরকারি হয়রানিও চলতে থাকে। লন্ডনের ওয়ারেন গ্যালারিতে ১৯২৯ সালে আয়োজিত তাঁর এক চিত্রপ্রদর্শনীতে পুলিশ হানা দেয় ও বেশ কিছু চিত্রকর্ম বাজেয়াপ্ত করে। তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পর থেকে টাওসের লা ফন্ডা হোটেলে তাঁর নয়টি চিত্র স্থায়ীভাবে প্রদর্শিত হতে থাকে। হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের পিছনে একটি ছোটো অফিসে সেগুলি রক্ষিত আছে এবং জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত।

১৫.
স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলেও লরেন্স লেখালিখি চালিয়ে যান। শেষ মাসগুলিতে তিনি রচনা করেন অসংখ্য কবিতা, সমালোচনা, প্রবন্ধ ও যাঁরা তাঁর শেষ উপন্যাস বাজেয়াপ্ত করার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন তাঁদের বিরুদ্ধে তীব্র আত্মপক্ষ-সমর্থনমূলক রচনা। তাঁর সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ রচনা হল বুক অফ রিভিলেশন, অ্যাপোক্যালিপস -এর উপর রচিত তাঁর স্বকীয় চিন্তাধারা। স্যানাটোরিয়াম থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর যক্ষ্মা জটিল আকার ধারণ করে এবং ফ্রান্সের ভেন্স-স্থিত ভিলা রবারমন্ডে তিনি প্রয়াত হন। ফ্রেডা উইকলি টাওসের রাঞ্চে ফিরে আসেন। পরে তাঁর তৃতীয় স্বামী লরেন্সের চিতাভষ্ম নিয়ে আসেন নিউ মেক্সিকো পার্বত্য অঞ্চলের একটি ছোটো চ্যাপেলে সংরক্ষণের জন্য।

১৬.
১৯১৬-১৭ সালে কর্নওয়ালে উইমেন ইন লাভ রচনার সময় লরেন্সের সঙ্গে উইলিয়াম হেনরি হকিং নামে এক কৃষকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও সম্ভবত প্রণয়সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্ক ছিল কিনা সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায় না; যদিও ফ্রেডা উইকলির বিশ্বাস তাই ছিল। লরেন্সের নিজস্ব যৌন প্রবৃত্তির সঙ্গে সমকামী বিষয়বস্তুর প্রতি তাঁর আগ্রহ বেশ লক্ষ্যনীয়। উইমেন ইন লাভ উপন্যাসে এই থিম নিয়ে প্রকাশ্যেই আলোচনা করেন তিনি। বাস্তবিকই, ১৯১৩ সালে লিখিত একটি চিঠিতে তিনি জানান, " আমার জানতে ইচ্ছে করে, কেন মহত্বের প্রতি অগ্রসর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নিজের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে সমকামী মনোভাব লক্ষিত হয়..." তাঁর রচনা থেকে আরও উদ্ধৃত হয়, "ষোলো বছর বয়সে এক তরুণ কয়লাখনি শ্রমিকের সংস্পর্শে এসেছিলাম; আমার মনে হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রণয়ী সে-ই।"

(অকৃপণ ঋণ/তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, দৈনিক সমকাল, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত