জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১০:৪৪

১.
জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বা বনফুল’কে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম স্রষ্টা হিসেবেও বলে থাকেন অনেক সাহিত্য সমালোচক। তিনি হাসির গল্পের পাশাপাশি লিখেছেন সিরিয়াস গল্পও। কিংবদন্তি এই সাহিত্য স্রষ্টা ‘বনফুল’ ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লেখক হিসেবে বনফুল হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচনা সমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত। বনফুলের ব্যক্তিত্ব তাঁর সমগ্র সাহিত্যে যতটা উদ্ভাসিত, তাঁর লেখা ‘মর্জিমহল’ দিনলিপিতেও ততটাই বলে গবেষকগণ সংশয়হীনভাবে ঘোষণা করেছেন। 

২.
নামে ‘ছোটগল্প’। কিন্তু ছোটগল্প যে জীবনের কতো বৃহৎ ও গভীর সত্যকে প্রকাশ করতে পারে তা বনফুলের (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়) গল্প না পড়লে বোধ করি কোনোদিন বোঝা সম্ভব নয়। বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের জনক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা, নিতান্ত সহজ সরল/ নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ/ অন্তরে অতৃপ্ত রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।’ সংজ্ঞার যদি সার্থক উদাহরণ দিতে হয় তাহলে বনফুলের ছোটগল্পের বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। আধ পৃষ্ঠা-এক পৃষ্ঠায়ও যে একটা আস্ত ছোটগল্প লিখে ফেলা যায়, তা যে কেউ বনফুল পড়লেই বুঝতে পারবেন। পুরো গল্পজুড়ে কাহিনী ও চরিত্রের যে বলিষ্ঠ গাঁথুনি পাঠক পাবেন তাতে তার মনে স্পষ্টতই একটি চিত্রকল্প ফুটে উঠবে। তবে এটাই তার গল্পের বিশেষত্ব নয়। গল্প পড়তে পড়তে পাঠক যে কল্পনার ডাল-পালা ছড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন তা একেবারে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে গল্পের শেষ বাক্যে বা লাইনে গিয়ে। এভাবে না বলে বরং বলা উচিত, গল্পের শেষ বাক্যে বা শেষ লাইনে পাঠক যে ঝাঁকুনিটা খাবেন, নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায় তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। যেমন, বনফুলেরই লেখা ‘পাঠকের মৃত্যু’ নামে বিখ্যাত গল্পটি হয়তবা অনেকেরই পড়া আছে। তবে ‘নিমগাছ’ গল্প থেকে একটু তুলে দিয়ে বনফুলের সংক্ষিপ্ত অথচ ক্ষুরধার বাক্যবিন্যাস এবং অপ্রত্যাশিত চমকের একটি উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। ‘কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ, কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কতো লোক- দাঁত ভালো থাকে, হঠাৎ একদিন একটা নতুন ধরনের লোক এলো। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙলে না, মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শুধু। নিমগাছটার ইচ্ছা করতে লাগলো লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না। মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পেছনে আবর্জনার স্তুপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইলো সে।’ না পাঠক, গল্প এখনও শেষ হয়নি। শেষ বাক্যটি যে এখনও বাকি আছে! পুরো এক পৃষ্ঠাজুড়ে নিমগাছের বর্ণনা দেয়ার পর শেষ বাক্যটি লক্ষ্য করুন, ‘ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটির ঠিক এক দশা!’ মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর পাঠকরে অজ্ঞাতসারেই মন থেকে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

৩.
কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার, প্রবন্ধকার বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই অবিভক্ত ভারতের বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার শিয়ালখালায়। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার। মাতার নাম মৃণালিনী দেবী। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম লুকোতে তিনি বনফুল ছদ্মনামের আশ্রয় নেন। ১৯১৫ সালে সাহেবগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূচনা হয়। পরে প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় পূর্ণিয়ার সাহেবগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯১৮) এবং হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে আইএসসি (১৯২০) পাশ করেন। একই বছরে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তবে তিনি যখন ষষ্ঠ বার্ষিক শ্রেণিতে পড়েন, তখন বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিহার থেকে আসা ছাত্র হিসেবে তিনি এ নব প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং সেখান থেকে এমবিবিএস (১৯২৮) পাস করেন। 

৪.
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (জন্ম: ১৯ জুলাই, ১৮৯৯ - মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯) কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে নিয়োগ লাভের মধ্য দিয়ে। পরে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার পদে কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি ভাগলপুরের খলিফাবাগে নিজ উদ্যোগে The Secro-Bactro Clinic নামে একটি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতিমান ডাক্তার হিসেবে পরিচিত হন। তিনি ১৯৬৮ সালে কলকাতায় চলে আসেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। 

৫.
ছোটবেলা থেকেই বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ লক্ষ করা যায়। স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে কবিতা রচনা করেন। সম্পাদনা করেন বিকাশ (১৯১৫) নামে হাতে-লেখা একটি সাহিত্যপত্রিকা। তাতে প্রকাশিত হতো প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, অনুবাদ প্রভৃতি। এ সময় থেকে তাঁর সাহিত্যবিষয়ক রচনা প্রকাশিত হয় ভারতী (১৮৭৭), প্রবাসী (১৯০১), কল্লোল (১৯২৩) প্রভৃতি বিখ্যাত পত্রিকায়। এসব পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কবিতার নিখুঁত ছন্দ এবং গল্পের বিষয় নির্বাচন ও ভাষার ওপর দক্ষতা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর কবিতার প্রধান বিষয় নিসর্গ চেতনা, প্রেম ও আত্ম-উপলব্ধি। কবিতার আঙ্গিক বিবেচনায় লক্ষ করা যায়, তিনি লিখেছেন দীর্ঘকবিতা, গদ্যপদ্যের মিশ্রণজাত কবিতা, সনেট, হাইকু প্রভৃতি। বাংলা কবিতার আধুনিক ধারার সঙ্গে তাঁর কোনো সংযোগ ছিল না; তিনি ছন্দমিলের পুরানো ধাঁচেই কবিতা লিখেছেন। বনফুলের কবিতা (১৯৩৬), অঙ্গারপর্ণী (১৯৪০), চতুর্দশী (১৯৪০), আহবনীয় (১৯৪৩), করকমলেষু (১৯৪৯), বনফুলের ব্যঙ্গ কবিতা (১৯৫৮), নতুন বাঁকে (১৯৫৯) প্রভৃতি তাঁর কাব্য সংকলন। 

৬.
সাহিত্যসাধনায় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব কথাশিল্পে। নতুন ধারা ও বিচিত্র ধরণের কাহিনী নির্মাণে তিনি অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি উপন্যাস লিখেছেন একষট্টিটি, গল্প ছয়শত। তাঁর উপন্যাসের বিষয়- ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, চিকিৎসাবিদ্যা, মনস্তত্ত্ব, প্রেম প্রভৃতি। তাঁর উপন্যাসগুলিতে লক্ষ করা যায় মানব জীবনের নানা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ। যথার্থ শিল্পীর বেদনাবোধ তাঁর সৃজনী প্রতিভায় বিদ্যমান। তিনি বিপুল কৌতূহলী মনে ও সহমর্মিতায় মানব জীবনকে দেখার চেষ্টা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস- তৃণখন্ড (১৯৩৫), জঙ্গম (তিন খন্ড, ১৯৪৩-১৯৪৫), অগ্নি (১৯৪৬), ডানা (তিনখন্ড, যথাক্রমে ১৯৪৮, ১৯৫০ ও ১৯৫৫), স্থাবর (১৯৫১), অগ্নীশ্বর (১৯৫৯), হাটেবাজারে (১৯৬১), ত্রিবর্ণ (১৯৬৩), ভুবনসোম (১৯৬৩), প্রচ্ছন্ন মহিমা (১৯৬৭), উদয় অস্ত (দুই খন্ড, ১৯৫৯ ও ১৯৭৪) প্রভৃতি। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের গঠনভঙ্গি স্বতন্ত্র এবং অভিনব। তিনি কাহিনী বর্ণনা করেন কখনও নাটকীয় সংলাপে, কখনও স্বগতোক্তিতে, কখনও কবিতায়। তিনি উপন্যাসের গঠনরীতি এবং কথন-কৌশলে যেসব পরীক্ষা করেন, তা বাংলা সাহিত্যে বিরল। তিনি কিছু ইংরেজি উপন্যাস অনুবাদ করেন যা দেশজ পটভূমি ও চরিত্রের বিন্যাসে অলঙ্কৃত। তাঁর কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূবনসোম। উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত জীবনে লেখক বনফুল ছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমারের ভায়রা ভাই। 

৭.
সমাজের অবহেলিত মানুষের সেবা করা ছিল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনের ব্রত। এক্ষেত্রে ডাক্তারি ছিল তাঁর অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এ সেবাতেই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি সাধারণ, নিরন্ন, অবহেলিত, শ্রমজীবী মানুষের জীবন আঁকতে চেয়েছেন শিল্পে। তাঁর কাছে এর এক অসাধারণ মাধ্যম ছিল ছোটগল্প। ছোটগল্প রচনায় তিনি তুলনাহীন মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ছোটগল্পে মানবজীবনের বিচিত্ররূপের সমাবেশ ঘটেছে- যেমন গল্পের বিষয়বস্ত্ততে, তেমনি ব্যাপক সৃজনশীলতায়। তাঁর ছোটগল্পে মানবজীবনের নানা স্ববিরোধিতা, দুর্জ্ঞেয় রহস্য, আত্মানুসন্ধানের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। 

৮.
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় পরীক্ষাপ্রবণ শিল্পী। ছোটগল্প পরিকল্পনায় তাঁর মৌলিকতা, তীক্ষ্ম মননশীলতা ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে মানবচরিত্রের উপস্থাপন পাঠকের মনে বিস্ময় উদ্রেক করে। আবার এ ধারাতেই তাঁর গল্প জীবনের অভিজ্ঞতায় সরস, গভীর ও নৈর্ব্যক্তিক ভাবনায় স্বাতন্ত্র্য। তাঁর গল্পের অন্য বিশেষত্ব ও অভিনবত্ব হচ্ছে স্বল্প অবয়ব। তাঁর অধিকাংশ গল্প এ সূত্রে বাঁধা বলে এগুলিকে বলা হয় অনুগল্প। বলা যেতে পারে ছোটগল্প রচনায় তাঁর প্রতিভা সম্যকরূপে বিকাশ লাভ করে। ছোটগল্প কত ছোট হতে পারে, খন্ডিত বা আকস্মিকতাজনিত অসমাপ্তির বোধ কীভাবে সৃষ্টি না হয় তার পরীক্ষা তাঁর গল্পগুলিতে পাওয়া যায়। ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে গভীর চিন্তা ও জটিল অভিজ্ঞতার নিপুণ প্রকাশ তাঁর ছোটগল্পগুলিকে এক অসাধারণত্ব দান করেছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ-বনফুলের গল্প (১৯৩৬), বিন্দুবিসর্গ (১৯৪৪), অদৃশ্যলোকে (১৯৪৬), তন্বী (১৯৪৯), অনুগামিনী (১৯৫৮), দূরবীণ (১৯৬১), মণিহারী (১৯৬৩), বহুবর্ণ (১৯৭৬), বনফুলের নতুন গল্প (১৯৭৬) প্রভৃতি। 

৯.
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় নাটক রচনাতেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রহসন, একাঙ্কিকা, চিত্রনাট্য, নাটিকা ছাড়াও তিনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনচরিত অবলম্বন করে নাটক রচনা করেন, যাতে পাওয়া যায় তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার অপর একটি ভিন্ন রূপের পরিচয়। উনিশ শতকের দুই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে লেখা তাঁর নাটক, শ্রীমধুসূদন (১৯৪০) ও বিদ্যাসাগর (১৯৪১)। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এ দুটি নাটকের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে এঁদের ব্যাপকভাবে ও যথার্থরূপে পরিচিত করিয়ে দেন। বাংলা সাহিত্যে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়কে বলা যেতে পারে এ ধারার নাটক রচনার পথিকৃৎ। 
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগদান ও সভাপতিত্ব করে যেসব অভিভাষণ প্রদান করেন, সেগুলি গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। উত্তর (১৯৫৩), মনন (১৯৬২), ভাষণ (১৯৭৮), দ্বিজেন্দ্রদর্পণ (১৯৮৭) প্রভৃতি তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। রবীন্দ্রস্মৃতি (১৯৬৮) ও মর্জিমহল (১৯৭৭) গ্রন্থ দুটি তাঁর ডায়েরি জাতীয় রচনা। তাঁর আত্মজীবনী পশ্চাৎপট প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি রচনা করেন শোকোচ্ছ্বাসমূলক উপন্যাস লী (১৯৭৮)। তিনি ছোটদের জন্য লেখেন দুটি বই মায়াকানন (১৯৭৭) ও রাজা (১৯৭৭)। 

১০.
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের রচনায় আছে সুস্থ জীবনের আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধের চেতনা, অন্ধ সংস্কারের বিরুদ্ধে ধিক্কার। তাঁর রচনারীতি সুমিত ও সংক্ষিপ্ত, তাঁর দৃষ্টি নির্মোহ ও নিরাসক্ত; জীবনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ, তুচ্ছ ও বিরাট সবকিছুর মধ্য থেকে শিল্পের উপাদান সংগ্রহের ক্ষমতা তাঁর রচনাকে দিয়েছে বৈচিত্র্য এবং গভীরতা। সাহিত্য-সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় লাভ করেন শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে; ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পান পদ্মভূষণ উপাধি (১৯৭৫)। 

১১.
প্রায় আশি বছর বয়সে ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। কিন্তু রচনাবলীর মধ্য দিয়ে তিনি আজো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, থাকবেনও ততদিন, যতদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জীবিত থাকবে।

(তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, দেশ, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত