কামিনী রায়

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:১৪

সাহস ডেস্ক

কামিনী রায় ছিলেন একজন কবি ও সমাজকর্মী। ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা চন্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক। কামিনী রায় কলকাতার বেথুন ফিমেল স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮০), বেথুন কলেজ থেকে এফএ (১৮৮৩) এবং সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) পাস করেন। একই বছর তিনি বেথুনে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে অধ্যাপক হন। ১৮৯৪ সালে স্ট্যাটিউটরি সিভিলিয়ান কেদারনাথ রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

কামিনী রায়ের মতো একজন প্রথিতযশা বাঙালি কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখক সে যুগে ছিল বিরল। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম নারী স্নাতক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব। 

কামিনী রায় ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী, ভাবুক ও কল্পনাপ্রবণ মানুষ। তিনি মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে; হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছিলেন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত ‘মহাশ্বেতা’ ও ‘পু-রীক’ তার দুটি প্রসিদ্ধ দীর্ঘ কবিতা। ‘গুঞ্জন’ তার শিশুতোষ কবিতার সংকলন ও ‘বালিকা শিক্ষার আদর্শ’ একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর, বিশেষত নারীকল্যাণমূলক কাজ করতেন। তিনি ১৯২২-২৩ সালে নারীশ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য, ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য শাখার সভানেত্রী ও ১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থসমূহ হলো : নির্মাল্য (১৮৯১), পৌরাণিকী (১৮৯৭), গুঞ্জন (শিশুকাব্য, ১৯০৫), ধর্ম্মপুত্র (অনুবাদ, ১৯০৭), মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩), অশোকসঙ্গীত (সনেট, ১৯১৪), অম্বা (নাটক, ১৯১৫), বালিকা শিক্ষার আদর্শ (১৯১৮), ঠাকুরমার চিঠি (১৯২৪), দীপ ও ধূপ (১৯২৯), জীবনপথে (সনেট, ১৯৩০)।

১৯০৯ সালে কামিনী রায়ের স্বামীবিয়োগ ঘটে। স্বামীর অকাল মৃত্যু তাঁর ব্যক্তিজীবনের মতো সাহিত্যিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তবে তাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব সর্বাধিক। তিনি যেহেতু সংস্কৃতে পণ্ডিত ছিলেন, সেহেতু সংস্কৃত সাহিত্যের বিষয় অবলম্বনে রচিত তাঁর কবিতাগুলি অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট মানের। তাঁর কবিতায় জীবনের সাধারণ ঘটনাবলি হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯২৯) লাভ করেন। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত