কে বলে এই বাংলায় তুমি নেই

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৭, ১০:২৬

বাংলা, বাঙালির চিন্তা, চেতনা, মননে, গঠনে সমস্ত সত্বা জুড়ে যে মিশে আছে সে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোকাবহ এই আগস্টে আমারা হারিয়েছি আমাদের আলোর উৎস বাতিঘর। বাঙালির শেষ আশ্রয়স্থল।

“কে বলে এই বাংলায় তুমি নেই, কেবলই তুমি, স্বপ্ন সাধনায় সোনার বাংলা কি যে ভালোবাসি, দু:খি মানুষের মুখে ফোটাতে চেয়েছিলে হাসি”।

যার দু চোখে ছিল বাংলার উন্নয়ন, বাংলার মানুষের জন্য যার মন কাঁদতো। কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য সেই স্বপ্ন দেখার চোখকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তার হৃদয় যেন বাংলার মানুষের জন্য কাঁদতে না পারে সে জন্য স্তব্ধ করে দিল চিরদিনের মত।
 
“১৯৭৫-এ আমি হারিয়েছি আমার প্রতীক, শোর্যবীর্যধারা, অন্ধকারে।
তারপর থেকে ভিতরে ভিতরে একা, গৃহহারা, স্বপ্নহীন ক্ষোভে
বসে থেকে-থেকে, ঘুমে-ঘুমে, আত্মগোপনে গোপনে ক্লান্ত।”

এই আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ বাঙালি হারিয়েছে তাদের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে। ঘড়ির কাঁটা ১২টার পর পরই শুরু হয় শোকের মাস। এ বছর শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন শুক্রবার। আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধু শাহদত বরণ করার পর থেকেই আগস্টকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে।
 
হত্যাকাণ্ড
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে বিপথগামী একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

(এদের মধ্যে ছিলেন শেখ মুজিবের প্রাক্তন সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে তার বৈধতা দেওয়া হয়। যা ১২ অগাস্ট, ১৯৯৬ তারিখে সংসদে রহিত করা হয়।
সংবাদ মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি সিআইএ-কে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত তৎকালীন রাষ্ট্রদুত ইউজিন দিয়ে লরেন্স লিফসুল্জ সিআইএ-কে অভ্যুত্থান ও গণহত্যার জন্য দোষারোপ করেন।)

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল। ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশুশেখ রাসেল  বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের।

আরো হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।

প্রতি বছর আওয়ামী লীগ এই দিবসটি পালন করে থাকে। সরকারিভাবেও পালিত হবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারই দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত