‘ভোট দিব না, ভোট নেই’

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৫

রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, পাগলাপীর (রংপুর), যশোরের অভয়নগর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, দিনাজপুরের কর্ণাই এবং ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া কিংবা পূর্বের ১৯৯০, ৯২, ২০০১-০২, ১১, ১৩ সালে যতগুলো সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তার ব্যাখ্যায় কার্যকারণগত ভিন্নতা দেখানোর সুযোগ থাকলেও মূলকারণ একটিই। আর এটি হলো রাষ্ট্রের ধর্মবোধ। যা কিনা একই সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাইরেও ভাবনালঘু সম্প্রদায়েরও ভীতির কারণ।

বিদ্যমান সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্মবোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা বোঝার জন্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। একসময় স্বাধীনতার নামে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জাল বুননে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (১৯৪৬) হয়েছে, স্বাধীনতার স্বপ্ন বানচাল করতে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন (১৯৭১) হয়েছে, তারপর দেখেছি ক্ষমতায় টিকে থাকতে (১৯৯০), এরপর থেকে যা ঘটছে, তার সবটাই যেন সংখ্যালঘু-ভাবনালঘু হয়ে জন্মানোর অপরাধে।

সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাবনালঘু নিপীড়নের যে সকল কার্যকারণ দৃশ্যমান, সেগুলো- ১) ভোটকেন্দ্রে যাওয়া না যাওয়া, ২) নির্বাচনে জয়-পরাজয়, ৩) রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রকাশ, ৪) জাত্যাভিমান, ৫) সম্পত্তি দখল, ৬) ভিন্নমত ও পথের প্রতি অবজ্ঞা, ৭) নির্লিপ্ত আইন-বিচার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি হলেও, এগুলো একটিমাত্র মূল কারণের ফলাফল-সেই মূল কারণটি হলো রাষ্ট্রের ধর্মবোধ। এটি দিন দিন এতটাই প্রকট হয়েছে যে, নিকট অতীতের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আকাঙ্ক্ষারও টুঁটি চেপে ধরেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ভরসাহীন; চেতনা একটি যুদ্ধ কৌশলমাত্র মনে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যা ও ভাবনালঘু সম্প্রদায় কি তাদের কৌশল নির্ধারণে প্রস্তুত? কি হবে তাদের কৌশল? কিংবা কিভাবেই বা রাষ্ট্রের প্রকট ধর্মবোধের মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখবেন? তারা কি পারবেন গোত্রাভিমান দূর করে সংগঠিত হতে? অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে রাষ্ট্রের বৈরিতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে? কিংবা পারবেন কি ধর্মবোধাক্রান্ত রাজনীতি প্রত্যাখ্যানে ‘ভোট দিব না, ভোট নেই’ ঘোষণা দিতে?

বিকৃত রাজনীতিরকালে ভোট বর্জনে একজনের ইচ্ছা হাস্যকর হলেও, স্পর্ধা আছে। তাই ধর্মবোধাক্রান্ত রাজনীতি প্রত্যাখ্যানে ‘ভোট দিব না, ভোট নেই’ ঘোষণার স্পর্ধাটুকু দেখালাম।

লেখক/আইনজীবী
জীবনানন্দ জয়ন্ত
(সংগঠক- গণজাগরণ মঞ্চ)

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত