সাগরে ডুবে মৃত্যু থেকে ৮ জনকে বাঁচালেন আব্দুল হক

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৬, ১৩:০৯

মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কাপ্তান আব্দুল হক! সাগরে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে ৮ জনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। নাম কাপ্তান কাজী আব্দুল হক। বিআইডব্লিউটিসির এমভি বার আউলিয়া লঞ্চের মাস্টার অফিসার। চট্টগাম টু নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল হাতিয়ায় প্রতিদিন যাত্রী পারাপার করেন এমভি বার আউলিয়া লঞ্চের প্রধান পরিচালক কাপ্তান আব্দুল।

রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনের মতো সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯.০০ টায় এমভি বার আউলিয়া লঞ্চ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দ্বীপ হাতিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পথের মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী পার হয়ে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় অথিরিটি বয়া অতিক্রম করতেই অন্যান্য জাহাজের Brake horse power (VHF) থেকে বার্তা আসছে, ভাসান চর বয়া-১ (দ্বীপ হাতিয়া থেকে ১০ নটিকেল মাইল পূর্বে) এর নিকট লবন বোঝাই একটি ট্রলার (কার্পূ বৌট) প্রচন্ড ঢেউ ও বাতাসে ডুবে মাঝি মাল্লারা পানিতে ভাসছে। এমন সংবাদ শুনে তিনি চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন শত শত জাহাজ ট্রলারটির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ ডুবে যাওয়া মানুষগুলোকে সাহায্য করছে না। ঠিক তখন কাপ্তান আব্দুল হক তার লঞ্চে থাকা ২০০ যাত্রী নিয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ নিজের দায়িত্বে নিলেন। একদিকে ২০০ যাত্রী অপর দিকে প্রচন্ড ঢেউ আর বাতাসের কবলে পড়ে ডুবে মরতে যাওয়া ৮জন ভাসমান ব্যক্তিকে রক্ষার দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধেই নিলেন। 

আল্লাহর নাম ডাকতে ডাকতে লঞ্চ নিয়ে ভাসমান লোকগুলোর কাছাকাছি গেলেন। পরে লঞ্চে থাকা লাইফ বয়া, লাইফ জ্যাকেট সহ অন্যান্য সরঞ্জামাধি দিয়ে তাদের সকলকেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের গরম কাপড় দিয়ে প্রাথমিকভাবে সুস্থ করে তোলেন কাপ্তান আব্দুল হক।তারা এখনো ঐ জাহাজে অবস্থান করছেন।

ডুবে যাওয়া ট্রলারটি চট্টগ্রাম থেকে ৫ টন লবন বোঝাই করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল। পথের মধ্যে বৈরীই আবহাওয়া থাকায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় আর বড় বড় ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।

এমন একটি মহৎ কাজ করতে পারায় কাপ্তান আব্দুল হক তার বক্তব্যে ব্যক্ত করেন এভাবে যে, মানুষ মানুষের জন্য। যদি অন্য সব জাহাজের মত আমিও আমার লাইন অনুযায়ী চলে যেতাম তাহলে হয়তো এতক্ষনে তারা ডুবেই যেত। কিন্তু আমি আমার মানবিক দৃষ্টি থেকে চলে যেতে পারিনি। আমি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিই যেইভাবেই হোক এদের উদ্ধার করতেই হবে। এদিকে প্রচন্ড ঢেউ আর বাতাসের তোড়ে প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে যায় আমার জাহাজে থাকা যাত্রীরাও। আমি আমার লাইন ছেড়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা মানুষগুলোর দিকে যাচ্ছিলাম আর আমার জাহাজের যাত্রীদের সান্তনা দিচ্ছিলাম। আল্লাহ্‘র অশেষ রহমতে সকলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।

কাপ্তান কাজী আব্দুল হক নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলা বোলাবো ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে অধ্যবধি জাহাজের কাপ্তান হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত