শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৩০

সাহস ডেস্ক

রাজধানীতে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের গড়ে ওঠা আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই আন্দোলনে স্কুলের ইউনিফর্ম বানিয়ে অনেকে ঢুকে পড়েছে, যারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

রবিবার (১২ আগস্ট) ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন বিমান বন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান এ কথা বলেন।

আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সামনে রেখে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা গুজবে কান দিয়েন না। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সুশিক্ষার জন্য। অশ্লীল কথা, মিথ্যা কথা, গুজব- এসবের জন্য না। কাজেই এর থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাঙালিরা একটু হুজুগে মাতি। একটা কথা বলব… সোশাল মিডিয়া। ডিজিটাল বাংলাদেশতো আমি করে দিয়েছি। সকলের হাতে এখন মোবাইল ফোন। আধুনিক প্রযুক্তি ফোর-জি এসে গেছে। একটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেইসবুক করা যায়, ইউটিউব দেখা যায়, সেটা আমরা করে দিয়েছি। এই যে প্রযুক্তির ব্যবহার, এর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে, গুজব ছড়িয়ে, একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা; এমনকি অনেক বয়স্ক লোক, এমন এমন লোক আছে- যাদের ভালো কাজের জন্য এক সময় পুরস্কার দিয়েছি, অথচ তারাই যখন এ ধরনের গুজব ছড়াতে শুরু করল। আর যাই হোক, এগুলোতো কখনো সহ্য করা যায় না। কেউ চট করে গুজবে কান দিবেন না।

রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো দিনই ক্ষমা করা যায় না, এটা ক্ষমার অযোগ্য। কারণ ওই বাস ড্রাইভার যেভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে গাড়িটা চালাচ্ছিল, ছেলে-মেয়েদের উপর দিয়ে চলে গেল। অনেক ছেলে-মেয়ে আজ আহত। এদেরকে আমরা কখনোই ক্ষমা করব না। এই দুর্ঘটনায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে, আমরা তা দেব।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। তারপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা; সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তাদের অন্যতম দাবি ছিল সড়কে মৃত্যুর জন্য দায়ী বেপরোয়া চালকদের মৃত্যুদণ্ডের আইন করা।

ওই আন্দোলনের মুখে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক নিরাপত্তা আইনের যে খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেছে, সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যেভাবে চোখে আঙুল দিয়ে অনেক অনিয়ম দেখিয়ে দিয়েছে, অনুষ্ঠানে তাদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি যারা গুজবে কান দিয়ে অস্থিরতা বাড়িয়েছে, তাদের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, একেকটি ঘটনা মানুষের চোখ খুলে দেয়। তারপরও দেখছি, আমাদের কিছু এখনো অন্ধ। আমরা সরকারে ফিরে দেখেছি, বিআরটিসি বাস বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা ছিল, আমরা চালু রেখেছি। ড্রাইভারদের ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক, ড্রাইভাররা ট্রেইনিংও করে না, হেলপারের উপরে গাড়ি ছেড়ে দেয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তৃতীয়পক্ষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনা ঘটার পর যেভাবে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল, তারা যে প্রতিবাদ করেছে… সাথে সাথে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সবাইকে বলেছি ধৈর্য্য ধরতে। আমরা দেখেছি, তোমরা অস্থির হয়ে যাচ্ছ, তবুও ধৈর্য্য ধরতে বলেছি। আমরা দেখেছি, আামদের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায়, তাদের যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে।

একটি চলন্ত বাসের উপর এক শিক্ষার্থী উঠে পড়ার বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাথে সাথে বললাম, বাস চালানো যাবে না, এগুলা বন্ধ কর। দুটি দিন তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আন্দোলনের তৃতীয় দিন রাস্তায় স্কুল ড্রেস পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা গেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেখলাম ব্যাগের ভেতর থেকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল বের হচ্ছে, পাথর বের হচ্ছে… তখন আমরা চিন্তিত হয়ে গেলাম। আমি তখনই আহ্বান করলাম, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। অভিভাবক-শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানালাম- তৃতীয়পক্ষ ঢুকে পড়েছে, তাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে নেন। সময়মত তারা শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী “মার খেয়েছে, অপমাণিত হয়েছে, তাদের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু করেনি। কিন্তু দেখা গেল- এরা ছাত্র না, ছাত্র নামধারী কিছু লোক। ওই যে দর্জির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রচুর পরিমাণে স্কুল ড্রেস তৈরি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীসহ সবাইকে রাস্তা পারাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাস্তা পারাপার করার জন্য ডানে বা বামে তাকাতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য যেসব জায়গা আছে- আন্ডারপাস, ওভারব্রিজ কিংবা যেখানে জেব্রা ক্রসিং সেখান দিয়ে রাস্তা পার হতে হবে।

বাস স্টপেজ ছাড়া কোথাও যাত্রী ওঠা-নামা করার বিষয়ে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সেটা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, শাস্তি দিতে হবে এবং লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। আর ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেশি মানুষের চলাফেরা যেখানে- প্রতিটি জায়গায় আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ করে দিতে হবে। পর্যাপ্ত লাইট ও গোপনভাবে সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। এবং তা মনিটরিং করতে হবে। ছোট্ট সোনামণিদের বলব, ট্রাফিক রুলস মেনে চলতে হবে, মন দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। এত কষ্ট করছি, তোমাদের ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত