ভুয়া চিঠি দিয়ে টেন্ডার বাতিল করে ইকম ট্রেড

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩৮

সাহস ডেস্ক

বিগত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি মোবাইল ক্রেন কেনার টেন্ডার আহ্বান করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে ইকম ট্রেড হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেড ও ফেরিটেক প্রাইভেট লিমিটেড যোগ্য বিবেচিত হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান দু’টিকে প্রাইজ ওপেনিং চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেন্ডার মূল্যায়ন চলাকালে একটি ভুয়া চিঠি দেয় ইকম ট্রেড। যা টেন্ডার ক্লজ বিরোধী। এরপরও বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ প্রাইজ ওপেনিং চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

পরে টেন্ডার কমিটির সভায় ওই চিঠি ভুয়া প্রমাণিত হলে ২৬ নভেম্বর পুনরায় প্রাইজ ওপেনিং এর চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তখন আবারও নৌপরিবহন মন্ত্রী বরাবর একটি ভুয়া অভিযোগ দেয় ইকম। সেটি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হলে দ্বিতীয় বারের মতো প্রাইজ ওপেনিং চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত দেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। এতে বন্দরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বার প্রাইজ ওপেনিং এর চিঠি দিয়ে টেন্ডার বাতিলের ঘটনা চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এটিই প্রথম।

এদিকে, মন্ত্রীর কাছে দেওয়া অভিযোগও ভুল প্রমাণ হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে অভিযোগ তোলা হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন কোম্পানিটি জানায়, তারা এ ধরনের কোনো চিঠি দেয়নি। পরে বাংলাদেশে বসে ভুয়া একটি মেইল আইডি থেকে মেইল পাঠানোর প্রমাণ পায় টেন্ডার কমিটি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট করা মেইলের জবাব এসেছে ৮ আগস্ট।

২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি মোবাইল ক্রেন সরবরাহে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ভুয়া ও জাল পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইকম ট্রেড।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ার পর ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে বন্দর থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জাল পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি ইকম ট্রেডের প্রোপ্রাইটর মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রিমিয়ার ব্যাংক গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এবং তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কান্ট্রি ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার বাদি।

সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু সচিবকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চায়না হারবারের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এই ইকম ট্রেড।

ইকম ট্রেডের প্রোপ্রাইটর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুদক একতরফাভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। আমরা আমাদের রিপোর্ট দিয়েছি। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। 

১২টি মোবাইল ক্রেনের বিষয়ে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে আমরা জেনেছি, চীনের প্রতিষ্ঠানটির ক্রেন তৈরির অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা নেই। তাই বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তবে টেন্ডার ক্লজের ৪৮ ধারা অনুযায়ী টেন্ডারের মূল্যায়ন চলাকালীন যোগ্য বিবেচিত কোনো প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত