২৫ মার্চ: গণহত্যা দিবস

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০১৭, ১২:০৫

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াল কালরাত আজ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

দিনের কাজ শেষে ঘরে ফিরে ঢাকা শহরের ক্লান্ত মানুষ তলিয়ে গেছে গভীর ঘুমে। কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি কী নারকীয় তাণ্ডব নেমে আসতে যাচ্ছে এই শহরের ওপর। এক লোমহর্ষক বর্বর হত্যা আর ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হয়েছিল সেই রাতে। মানব ইতিহাসে সংযোজিত হলো এক ঘৃণ্যতম অধ্যায়।

ঘুমন্ত বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। মহাকালের চক্রযানে আবার ফিরে এল সেই হত্যাযজ্ঞের বেদনামথিত স্মৃতি নিয়ে ২৫ মার্চ, বাঙালি জাতির জীবনে যা চিহ্নিত হয়ে আছে এক কালরাত হিসেবে। শুধু ঢাকা নয়, এই রাতে দেশের বড় বড় শহরেও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের পোশাকি নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট’। তখন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া পাহারায় অবস্থান করছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল) দ্বাদশ তলায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার ভান করতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করতে আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকেরাও ছিলেন ওই হোটেলে। পাকিস্তানি সেনারা মধ্যরাতে হোটেল ঘিরে ফেলে। সবাই অবরুদ্ধ।

এদিকে হিংস্র শ্বাপদের মতো বেরিয়ে এসেছে ট্যাংক আর সাঁজোয়া গাড়ির সারি সেনানিবাস থেকে। পাকিস্তানি বাহিনী এ রাতে তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ চালায়। নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে। এমনকি ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলও এ নির্মমতা থেকে রক্ষা পায়নি। কামান দেগে গোটা এলাকা মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার এক পাশবিক উন্মত্ততায় ফুটতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী।

বাঙালির প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনও আক্রমণ করে তারা। অতর্কিত হামলায় হতবিহ্বল পুলিশ সদস্যরা পরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু এ আক্রমণ এমন আকস্মিক ও নির্মম ছিল যে, এক রাতেই ঘটে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু। পাকিস্তানি বাহিনীর এ বর্বর মৃত্যুময় বিভীষিকায় ভারী হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বাতাস।

পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের গুঞ্জন কয়েক দিন ধরে বাতাসে ভাসতে থাকলেও ভয়াল সেই রাতের আকস্মিক আক্রমণে এ দেশের মানুষ যেন এক অন্ধকার গহ্বরে পতিত হয়। আবার একই সঙ্গে জ্বলে ওঠার প্রেরণাও পায়, শাণিত হয় প্রতিশোধস্পৃহা।

ওই রাতেই পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এই গণহত্যার উল্লেখ করে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা মায়ের অকুতোভয় বীর সন্তানেরা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে ক্রমে হানাদারদের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই প্রতিরোধ নানা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত