অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড

মূল পরিকল্পনাকারী জিয়া যে কোনো সময় গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:০০

সাহস ডেস্ক

বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখন পুলিশের হাতে রয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারী থেকে শুরু করে যারা মাঠপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল, তাদের সবার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। 

তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া।

নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর এবিটির শীর্ষ নেতা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, জিয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের নেপথ্যের অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। কারা, কীভাবে উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করে, সেটাও জানা যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এবিটির প্রধান জিয়া যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারে- এটুকু বলতে পারি। পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অভিজিৎ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো- ফারাবি, সাদেকুর রহমান মিঠু, আলিমুল মলি্লক, এবিটির আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দীন রাহমানির ভাই আবুল বাশার, তৌহিদুর রহমান, মান্নান রাহী, জুলহাজ বিশ্বাস ও জাফরান। তাদের মধ্যে বাশার জামিনে থাকাকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবিটি সদস্য খায়রুল, সিফাত, রাজু, শিহাবসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খায়রুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, ‘বড় ভাই’ সাগরের নির্দেশে অভিজিৎসহ দেশের অন্য সব ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে হত্যার ছক করে এবিটি। সাগরের আরও দুটি সাংগঠনিক নাম রয়েছে। তা হলো- ইমতিয়াজ ও ইশতিয়াক। মূলত জিয়াই ছদ্মনাম হিসেবে সাগর, ইমতিয়াজ ও ইশতিয়াক নাম ব্যবহার করে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অভিজিৎকে হত্যা করতে মাঠপর্যায়ে সামরিক কমান্ডার হিসেবে শরীফকে নিয়োজিত করেছিল জিয়া। ঘটনার দিন টঙ্গীর একটি বাসা থেকে এবিটি সদস্যরা বইমেলায় যায়। অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ বইমেলায় যখন ঘুরছিলেন, তখন তাদের অনুসরণ করছিল ওই জঙ্গিরা। এবিটির যে তিন সদস্য অভিজিৎকে অনুসরণ করছিল, তারাই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। অন্যরা আশপাশেই অবস্থান করছিল। অভিজিৎ হত্যায় যারা অংশ নিয়েছিল তাদের রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, মহাখালী, উত্তরা ও টঙ্গীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অভিজিতের ‘মুক্তমনা’ ব্লগটি অনেক দিন ধরেই জঙ্গিদের নজরদারিতে ছিল। অভিজিৎ দেশে ফিরছেন- এটা নিশ্চিত হওয়ার পর এবিটি তাকে হত্যার ছক করে।

তদন্তে যুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, অভিজিৎ হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার দুটি ইনজেকশন, একটি সিরিঞ্জ, কিছু ওষুধ ও পুরনো কিছু পত্রিকা আলামত হিসেবে নিয়েছে। সেগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদনের ফল মামলার তদন্ত সংস্থাকে জানিয়েছে এফবিআই। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার আসামিদের ডিএনএ নমুনা এফবিআইর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেই প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।

পুলিশ বলছে, এবিটির কথিত শূরা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে দেশের একাধিক জায়গায় লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও মুক্তমনা ব্যক্তিদের ওপর হামলা করেছে। ২০১৩ সালে উত্তরায় ব্লগার আসিফ উদ্দিনের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে এবিটি ‘অপারেশন’ শুরু করে। এরপর একে একে তাদের হামলার শিকার হন অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চ্যাটার্জি নিলয়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, জুলহাজ মান্নান, মাহবুব তনয়, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ব্লগার আশরাফুল ইসলাম, বুয়েটের ছাত্র রায়হানুল হক দীপ, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। এ ছাড়া শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে এবিটি নেতা শরিফুল ওরফে মুকুলসহ সাতজন উপস্থিত ছিল। অভিজিৎকে হত্যার তিন মাস আগেই ছক তৈরি করে জিয়া। জঙ্গিদের ভাষায় ‘ইসলামী মূল্যবোধ’ বিরোধী বই লেখার কারণে অভিজিৎকে টার্গেট করে তারা। আলোচিত ওই হত্যায় সরাসরি জড়িত মুকুল এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। বিশেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এবিটির প্রধান জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে মরিয়া পুলিশ। সে পুলিশের তালিকার মোস্টওয়ান্টেড জঙ্গি। তাকে ধরিয়ে দিতে ২০১৬ সালের আগস্টে ২০ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত