প্রচণ্ড শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে সাঁওতালরা

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৪৩

ফরহাদ আকন্দ

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে ইক্ষু খামারের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া চার শতাধিক সাঁওতাল পরিবার শীতের প্রকোপে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

দুই মাসের বেশি সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া সাঁওতাল পরিবারগুলোর সদস্যরা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে কর্মহীন মানুষগুলোর ভাগ্যে জুটছে না প্রয়োজনীয় খাদ্য ও শীতবস্ত্র।

এদিকে গত কয়েকদিন গাইবান্ধা জেলাসহ উত্তরজনপদে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিনের বেলাতেও গায়ে গরম কাপড় পড়ে বের হতে হয়। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় শীত বাড়তে থাকে। শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে এখানে আশ্রয় নেওয়া অনেক শিশু ও বৃদ্ধ শীতজনিত সর্দি ও জ্বর-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু  বাইরে যেতে না পারায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খড় ও ছোট ছোট ত্রিপলের (তাবু) নিচে আশ্রয় নেওয়া সাঁওতালদের অনেকে এক পোশাকে,কেউবা শরীরে কম্বল জড়িয়ে শীত ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তারা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত এসব মানুষ খড় ও লাকড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।  

মাদারপুর গির্জার সামনে আশ্রয় নেওয়া আমেনা হেমরন বলেন, হামলা ঘটনা পর আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই । ঘরে খাবার নেই, মাথার ওপরে চালা নেই । গত দুই মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।

কিসকো মিনতি বলেন, এবছর এত শীত যে শরীর কেঁপে উঠছে। ঘরে কম্বল ও ভালো বিছানা নাই। তার ওপর কুয়াশার পানি তাবুর ভেতরে পড়ছে।

মাদারপুর সাঁওতাল পল্লিতে আশ্রয় নেওয়া কিসকো সরেন বলেন, তাবুর নিচে থাকলে শীত বেশি লাগে। রাতে তাবুতে  বেশি বাতাস ঢোকে। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার কারণে তাবুর ওপর পানি  পড়ে। এতে আরও বেশি শীত লাগে।

পলুস মাস্টার বলেন, সাহায্য পাওয়া দু-একটি কম্বল দিয়ে কিছুই হচ্ছে না। কারণ খোলা আকাশের নিচে তাবুতে মাটির ওপর সামান্য খড় দিয়ে তার ওপর একটি কম্বল বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি কম্বল স্ত্রী-সন্তানসহ গায়ে দিয়ে কেমন করে শীত কাটে। তাই বাধ্য হয়ে তাবুর পাশে খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি।

টাটু টুডু বলেন, খেয়ে না খেয়ে তীব্র শীতেও জমির অধিকার ফিরে পেতে নানা কষ্টে বেঁচে আছি। আর হামলা ঘটনারও দ্রুত বিচারক হওয়া দরকার। সরকারের কাছে আমাদের এখন এটাই দাবি।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জহিরুল হক বলেন, খোলা আকাশের নিচে থাকা সাঁওতালদের প্রত্যেক পরিবারকে দুটি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সাঁওতালদের পক্ষ থেকে সরকারি ত্রাণ গ্রহণে আপত্তি থাকায় শীতবস্ত্র বা ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। তবে তারা চাইলে শীতবস্ত্রসহ ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত