সাত খুনের মামলায় ২৬ জনের ফাঁসি

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৫২

সাহস ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের দুই মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, চাকরিচ্যুত র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কমান্ডার এম এম রানা, মেজর আরিফসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার বাকি নয় আসামিকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাত খুনের দুটি মামলার অন্য আসামিরা হলেন—র‍্যাব সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) পুর্ণেন্দু বালা, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল  হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।

এ ছাড়া পলাতক রয়েছেন—নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ও শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামাল উদ্দিন, র‍্যাবের করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, আব্দুল আলী, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি আছেন। এঁদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ১০৬ জন সাক্ষ্য সাক্ষী দেন।

তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে তাঁর গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে নাসিকের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীমকে অপহরণ করে র‌্যাব-১১।

পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা  গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

এরপর বিভিন্ন সময়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক থাকেন ১৩ জন।

এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ১৩ নভেম্বর সাত খুনের দুটি মামলাসহ ১১ মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। সাত খুনের মামলায় হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন এবং  ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র‌্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন  সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম ও জজ  কোর্টে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। তবে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তাদের অভিযোগপত্র ‘নির্ভুল ও চমৎকার’।

সূত্র : এনটিভি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত