হামলা, মামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৯

সাহস ডেস্ক

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙ্গালিদের উপর রংপুর চিনিকল ও পুলিশের হামলা, মামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ, হয়রানির প্রতিবাদ এবং লুটেরা-সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৫ জানুয়ারি রবিবার বেলা ১২টায় রংপুরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মহানগরীর শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে মূল রাস্তা ধরে কাচারী বাজারে এসে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ থেকে আগামী ৬ মার্চ উত্তরবঙ্গের সকল জেলায় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, আদিবাসী যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভূতী ভূষণ মাহাতো, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, রংপুর জেলা সভাপতি এ্যাড. মনিলাল দাস, দিনাজপুর জেলা সভাপতি শীতল মার্ডি, আহত দ্বিজেন টুডু’র স্ত্রী অলিভিয়া হেমব্রম, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজিব মাহাতো প্রমূখ।

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ রংপুর জেলা সমন্বয় আব্দুল কুদ্দুস, বাসদ নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ রংপুর মহানগর সভাপতি গৌতম রায়, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রংপুর জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সরকার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কাফি সরকার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি গাইবান্ধা জেলা নেতা তাজিউল ইসলাম, জনউদ্যোগ গাইবান্ধা সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, বদরগঞ্জ উপজেলা পারগানা ডাঃ শ্যামল হেমব্রম, আদিবাসী ফেডারেশন ঘোড়াঘাট উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সুধীর কর্মকার প্রমূখ।

বিক্ষোভ মিছিলে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় দুই হাজার আদিবাসী নারী-পুরুষ ও রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সংহতি জানান, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, রংপুর জেলা; ভূমিহীন কল্যাণ সমিতি, পীরগঞ্জ; আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা, পীরগঞ্জ; ছোট উজিরপুর উদীয়মান সংস্থা, পীরগঞ্জ; আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংঘ, রংপুর; আদবিাসী হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার, রংপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন, রংপুর; রংপুর মহানগর নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, রংপুর জেলা; সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সহ আরো অনেকে।

উল্লেখ্য, গত ০৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে আদিবাসী ও বাঙালি কৃষকদের উপর রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্তৃক হামলা, লুটপাট ও অগিসংযোগ, উচ্ছেদ করা হয়। পুলিশের গুলিতে তিনজন আদিবাসী (সাঁওতাল) মারা যায়। আহত হয়েছে অনেকে। আদিবাসীদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল, ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সাংসদ, স্থানীয় সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মিল কর্তৃপক্ষের ইন্ধন, মদদে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং সাঁওতাল পল্লীতে লুটপাট চালানো হলেও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। অপরাধীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। উল্টো সাঁওতাল ও গরীর বাঙ্গালি কৃষকদের উপর মিথ্যা মামলা চালনো হয়েছে।

সমাবেশে বক্তাদের দাবীসমূহ :
১. আক্রান্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
২. বিনষ্ট করা ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. হামলায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিতে হবে।
৪. পুড়ে যাওয়া বাসস্থান, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে তৈরি করে দিতে হবে।
৫. ফার্ম এলাকার আদিবাসীদের বসত ঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়া তুলে দিতে হবে। এই কাঁটাতারের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচল, গবাদি পশু চরানোসহ নিত্যদিনের সব কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
৬. হামলার পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উল্লেখ্য, এদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আক্রান্তদের পক্ষ থেকে থমাস হেমরম ২৬/১১/২০১৬ তারিখ গোবিন্ধগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
৭. পক্ষপাত দুষ্ট ইউএনও এবং ওসিকে প্রত্যাহার ও শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৮. সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ ও তাদের নির্দেশ দানকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রংপুর চিনিকল মিল অচল হয়ে যাওয়ার পর সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিকে অধিগ্রহণের শর্ত ভঙ্গ করে ইজারা দেওয়ার মিল কর্তৃপক্ষের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে।
১০. ১৯৬২ সালের চুক্তির ধারা মোতবেক যেসব পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদের নিকট তাদের পূর্বতন ভূমি আইনী অধিকারসহ ফিরিয়ে দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত